পূর্ব লন্ডনে মুসলিমদের এসিড হামলা আতঙ্ক by এডাম লুশার
পূর্ব
লন্ডনে মুসলিমদের ওপর সাম্প্রতিক এসিড হামলার ফলে তারা এখন ঘর থেকে বের
হতে আতঙ্কে আছেন। গত ২১ শে জুন পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যামে উদীয়মান মডেল রেশাম
খান (২১) ও তার কাজিন জামিল মুখতারের (৩৭) ওপর এসিড হামলা হয়েছে। তাদের
গাড়ির জানালা দিয়ে ছোড়া হয়েছে এসিড। এর পর থেকে এসিড হামলার আতঙ্ক বৃদ্ধি
পেয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলেছে, বর্ণবাদী বা ধর্মীয় কোনো উদ্দেশে
এমন হামলার পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ পায় নি। তারা এটাকে দেখছেন ঘৃণাপ্রসূত
অপরাধ হিসেবে। জন টমলিন (২৪) নামের এক যুবককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা
হচ্ছে। জামিল মুখতার এ হামলাকে ইসলামবিরোধী হিসেবে অবিহিত করছেন। এসিড
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আরো একই রকম হামলার
খবর আসছে। অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, মুসলিমরা অথবা দেখতে এশিয়ান এমন মানুষদেরকে
টার্গেট করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার টাওয়ার হ্যামলেটে কমার্শিয়াল রোডে গাড়ি
চালাচ্ছিলেন এশিয়ান বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি। এ সময় তার দিকে বিষাক্ত কিছু
ছুড়ে দেয়া হয়। এতে তিনি দ্রুত সহায়তা পেতে গাড়ি থেকে বের হন। সঙ্গে সঙ্গে
তার গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় হামলাকারীরা। সামাজিক মিডিয়ায় আরো দুটি হামলার
খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার ইস্ট হ্যামে। একটি ঘটনায় এক নারীকে
এসিড ছোড়া হয়েছে তার বাসার দরজায়। সেখানে একজন ব্যক্তি নিজেকে ডেলিভারি
ম্যান পরিচয় দিয়ে হাজির হয়। এরপর ওই নারী ঘর থেকে দরজা খুলতেই তার ওপর এসিড
ছোড়া হয়। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। প্লাশেট গ্রোভ এলাকায় আরেক
নারীকেও এসিড ছোড়া হয়েছে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে পূর্ব লন্ডনের
বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে। তারা রোববার সন্ধ্যায় এ
নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। তাতে যোগ দিয়েছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র জন
বিগস। সেখানে অধিবাসীরা তাদের অভিযোগের কথা শোনেন তিনি। জন বিগসকে জানানো
হয়, ‘এসব হামলা এখন আমাদের ঘরের দরজায় পৌঁছে গেছে। আমাদের নারীরা,
পুরুষরা, ছোটরা সবাই অনিরাপদ বোধ করছে। তারা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে’।
একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় স্থানীয় একজন ইমামের মুখে। তিনি বলেন, কিছু
এসিড হামলা চালানো হচ্ছে ডাকাতি করার উদ্দেশে। এগুলোকে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ
বলা যাবে না। তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘তা সত্ত্বেও আমার স্ত্রী পর্যন্ত এখন
ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি কোনো অবস্থায়ই ঘরের বাইরে যেতে চাইছেন
না। কারণ, তার ভয় তার মুখেও এসিড ছুড়ে মারা হতে পারে’। সামাজিক মিডিয়ায় তাই
সতর্কতা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘যদি আপনাকে দেখতে ব্রাউন বা বাদামী বা
পিঙ্গল বা এশিয়ান বলে মনে হয় তাহলে দয়া করে সতর্ক থাকুন। দক্ষিণ এশিয়ান
অথবা দেখতে মুসলিম মনে হয় এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে এসব হামলা চালানো
হচ্ছে’। এসব ঘটনায় পুলিশ শুধু একটি ঘটনাকে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ হিসেবে দেখছে।
সেটি হলো রেশাম খান ও জামিল মুখতারের ঘটনা। বাকিগুলোকে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ
হিসেবে না দেখে, দেখা হচ্ছে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে। তবে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে যেসব অপরাধের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো কি পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছে
কিনা সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায় নি। তবে দ্য
ইন্ডিপেন্ডেন্টকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে, কমার্শিয়াল রোডে একজনের কাছ
থেকে যে গাড়িটি চুরি হয়েছে সেটাকে তারা ডাকাতি হিসেবে দেখছে। স্কটল্যান্ড
ইয়ার্ডের মুখপাত্র বলেছেন, এ ঘটনাটি রেশাম, জামিল ঘটনার মতো নয়। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম আরেকটি অপরাধের কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ৮ই
জুন লিটোনস্টোনে হুইপস ক্রস হাসপাতালের বাইরে জুনিয়র একজন ডাক্তার সৈয়দ
নাদিম (৪৪) আক্রান্ত হয়েছেন। মুখোশ পরা চারজন ব্যক্তি মোটর সাইকেলে করে
দ্রুত তার কাছে যায়। তারা চিৎকার করে তাকে বলতে থাকেÑ ‘তোমার কাছে যে অর্থ
আছে সবটা আমাদের দিয়ে দাও। না হলে তোমার গলা কেটে ফেলবো’। এ সময় সৈয়দ
নাদিমের মুখের ওপর এসিড স্প্রে করে দেয়া হয়। এতে তার মুখ ও বাহু
মারাত্মভাবে পুড়ে যায়। তিনি যখন দেখেছেন এক ঘন্টার মধ্যে এ অ্যান্ড ই-এর
চিকিৎসকরা আরো তিনজন এসিড আক্রন্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করেছেন তখনই বৃটেনের
জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হোয়াটস অ্যাপে সতর্কতা দেয়া হয়েছে। সৈয়দ নাদিম
বলেন, আমরা একটি টেক্সট ম্যাসেজ পাই। তাতে বলা হয়, গাড়ির জানালায় নক করা
হচ্ছে। আপনি জানালা খুললেই এসিড ছোড়া হচ্ছে।
ইস্ট হ্যামে প্লাশেট গ্রোভে একজন নারী গাড়ি চালকের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এসব ঘটনা সেই একই রকম। এমন অনেক ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মার্চে মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, লন্ডনের মধ্যে নিউ হ্যামে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসিড হামলা হয়েছে। এর সংখ্যা ৩৯৮। এক্ষেত্রে একই সময়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে টাওয়ার হ্যামলেট। সেখানে এসিড হামলা হয়েছে ৮৪টি। এসব ঘটনায় দেখা যায় লন্ডনজুড়ে এসিড হামলা দ্রুত বাড়ছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৬১। কিন্তু ২০১৬ তে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪৩১। বিশ্বে যত এসিড হামলা হয় তার মধ্যে নারীদের ওপর পুরুষরা বেশি হামলা চালায়। এমন ঘটনা শতকরা ৮০ ভাগ। যৌন সুবিধা নিতে অথবা বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ নিতে এমনটা করা হয়ে থাকে। কিন্তু বৃটেনে এসব হামলায় দেখা যাচ্ছে উচ্চ হারে পুরুষের ওপর পুরুষে এসিড হামলা চালাচ্ছে। ওদিকে রেশাম খান ও জামিল মুখতারের ওপর এসিড হামলার পর এসিড বিক্রির ওপর কঠোর বিধিবিধান দাবি করে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ড স্টেশনে এ জন্য একটি সংহতি সমাবেশ করবে স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম।
(লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
ইস্ট হ্যামে প্লাশেট গ্রোভে একজন নারী গাড়ি চালকের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এসব ঘটনা সেই একই রকম। এমন অনেক ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মার্চে মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, লন্ডনের মধ্যে নিউ হ্যামে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসিড হামলা হয়েছে। এর সংখ্যা ৩৯৮। এক্ষেত্রে একই সময়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে টাওয়ার হ্যামলেট। সেখানে এসিড হামলা হয়েছে ৮৪টি। এসব ঘটনায় দেখা যায় লন্ডনজুড়ে এসিড হামলা দ্রুত বাড়ছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৬১। কিন্তু ২০১৬ তে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪৩১। বিশ্বে যত এসিড হামলা হয় তার মধ্যে নারীদের ওপর পুরুষরা বেশি হামলা চালায়। এমন ঘটনা শতকরা ৮০ ভাগ। যৌন সুবিধা নিতে অথবা বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ নিতে এমনটা করা হয়ে থাকে। কিন্তু বৃটেনে এসব হামলায় দেখা যাচ্ছে উচ্চ হারে পুরুষের ওপর পুরুষে এসিড হামলা চালাচ্ছে। ওদিকে রেশাম খান ও জামিল মুখতারের ওপর এসিড হামলার পর এসিড বিক্রির ওপর কঠোর বিধিবিধান দাবি করে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ড স্টেশনে এ জন্য একটি সংহতি সমাবেশ করবে স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম।
(লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
No comments