মুখরোচক মৌসুমি ফল লটকন
কাঠের ঝুড়িতে কিংবা বেতের ঝুড়িতে আবার কখনও কিছুটা উঁচু থেকে ঝুলিয়ে থরে থরে রাখা হয় গোলাকৃত্রির একটি ফল যার নাম লটকন। মুখরোচক এই মৌসুমি ফল সব মহলের মানুষের কাছে বেশ পছন্দের। এর টক-মিষ্টি স্বাদ আপনাকে নিমিষেই নিয়ে যাবে শৈশবের সেই স্মৃতিমাখা মধুর সময়ে। একটি শক্ত খোসার আবরণে ঢাকা থাকে সম্পূর্ণ ফলটি। এর ভেতরে রয়েছে তিন থেকে চারটি দানা। কিছুটা চারকোনা আকৃতির এই দানা বা শাঁসগুলো মূলত দুটি রঙের হয়ে থাকে। লাল আর গোলাপি সাদা মিশ্রণ। এই ফলটি মূলত পাওয়া যায় জুন এবং জুলাই এই পুরোটা সময় জুড়ে। লটকনের বংশবিস্তার দু’ভাবে হয়ে থাকে। বীজ ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে। লটকনের পুরুষ ও স্ত্রী-গাছ আলাদা হয়ে থাকে। বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করলে স্ত্রী গাছের চেয়ে পুরুষ গাছের সংখ্যা বেশি হয় এবং ফল পেতে পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগে। অঙ্গজ তথা কলম পদ্ধতি ব্যবহারে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় ও গাছ খাটো হয় বিধায় ফল তোলা সহজ হয়। একটি বয়স্ক গাছ থেকে ১০০-১৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়। জিবে জল আনা এ ফলের টক-মিষ্টি স্বাদের কাছে যে কোনো বয়সের মানুষ বন্দি। শুধু লবণের দানার গায়ে মাখিয়ে আপনি যেমন লটকন খেতে পারবেন আবার তার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন মরিচ। অনেকে লবণ, লেবুর রস আর সঙ্গে মরিচ ও চিনি মাখিয়ে লটকনের ভর্তা তৈরি করে। গরমের দুপুরে যা আপনাকে দেয় প্রশান্তি। কাঁচা আর পাকা লটকন চেনার রয়েছে খুব সহজ পদ্ধতি। যে ফলগুলো দেখতে তুলনামূলক সবুজ তা এখনও খাবার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। আর যে ফলগুলো হালকা কিংবা হলুদ আর সবুজ রং ধারণ করেছে তা খাওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত। লটকন ফলটি এক এক স্থানে এক এক নামে পরিচিত। স্বাদের দিক দিয়ে এক হলেও নামের দিক দিয়ে আছে কিছুটা ভিন্নতা। কোথাও এটি পরিচিত লটকা নামে আবার কোথাও লটকাউ আবার ডুবি কিংবা কানাইজু, হাড়ফাটা নামে এর রয়েছে পরিচিতি। আর এই ফলটি পাকলে এর সুমধুর ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারিদিক।
এ ফলটি কেবল মুখরোচকই নয়, এতে আছে নানা ভিটামিন। লটকন আপনার শরীরের যেমন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে তেমনি পারে আপনার মুখের স্বাদের পরিবর্তন আনতে। যাদের মুখের স্বাদ খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় তাদের জন্য লটকন হতে পারে খুব ভালো পছন্দ। লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১, বি-২ ও ভিটামিন সি। এছাড়া আছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম। বেশিরভাগ লটকন ফল অ্যাস্করবিক এসিড, অ্যানজাইম, বায়োফ্ল্যাভনয়েডসমৃদ্ধ। লটকনে এসব কিছুর পাশাপাশি আছে ফ্যাট আর প্রোটিন। যা আপনার আর্থাইটিস রোগের জন্য উপকারী। ফোঁড়া এবং অন্যান্য ত্বকের রোগ সারাতেও লটকনের জুড়ি নেই। এছাড়া পাকস্থলীর ব্যথা আর খাবার হজমে সাহায্য করে এই লটকন। শুধু যে এই ফল উপকারী তাই নয় এর পাতাতেও আছে নানা গুণাবলী। লটকন গাছের পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া থেকে উপশম পাওয়া যায়। লটকন গাছের ডাল আর বাকল চর্মোরোগের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। তাই খাবারের টেবিল থেকে শুরু করে আড্ডার মহল সব জায়গাতেই স্থান পায় এই ফলটি। এর টক-মিষ্টি স্বাদ আর সহজলভ্যতা একে খুব সহজেই পৌঁছে দেয় সবার কাছে।
No comments