তিস্তা নিয়ে প্রণব মুখার্জির মধ্যস্থতা চান শেখ হাসিনা
তিস্তা
চুক্তি করার লক্ষ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মধ্যস্থতা চাইছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনন্দবাজার পত্রিকা এই খবর দিয়ে বলেছে,
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় প্রণব
মুখার্জি দীর্ঘদিন তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দরকষাকষি করেছেন।
চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয় তার জানা। কাজেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য ও
বাংলাদেশের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারেন প্রণব। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর
সামনে রেখে ভারতের সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ
জানিয়েছে সরকার। ঢাকা থেকে ভারতীয় সাংবাদিকরা এ সফর নিয়ে নানা ধরনের খবর
পাঠাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায়
ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছেন, এবার ভারত সফরে দিল্লিতে
রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকবেন শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানাতে রাষ্ট্রপতি ভবন
এখন সাজছে। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক বহু পুরনো। তার
স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গেও শেখ হাসিনার সখ্য ছিল। শুভ্রা মুখার্জির
মৃত্যুর পর প্রণব মুখার্জিকে সমবেদনা জানাতে দিল্লিতেও গিয়েছিলেন শেখ
হাসিনা। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রণববাবু মধ্যস্থতা করলে
নরেন্দ্র মোদির জন্যও ভালো। মোদি নিজেও এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির ওপর ভরসা
করছেন। মোদি সরকার মনে করছে, শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষ করে রাষ্ট্রপতি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানাতে
পারেন। এই সফরে চুক্তি সই না হলেও অন্তত রাষ্ট্রপতি ভবনেই নরেন্দ্র মোদি ও
মমতার মধ্যে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জমে থাকা বরফ গলতে পারে। ২০১০ সালেও শেখ
হাসিনার সফরের সময় মমতা দিল্লিতে এসেছিলেন। তার (শেখ হাসিনা) জন্য শাড়িও
নিয়ে এসেছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার দিদি-বোনের সম্পর্ক বলেও উল্লেখ
করেছিলেন মমতা।’ ভারতীয় এ পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তিস্তার বিষয়ে পুরোপুরি নেতিবাচক মনোভাব নিয়েছেন, তা
নয়। তার বক্তব্য, রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার দিকটি দেখতে হবে। কিন্তু মোদি
সরকারের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। আজ
লোকসভায় তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় একই অভিযোগ তুলে জানিয়েছেন, তারা রাজ্যের
সম্মতি ছাড়া এই চুক্তিতে সইয়ের বিরুদ্ধে। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু
চুক্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে
বলেও অভিযোগ আনেন সৌগত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের
রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে
সম্পর্ক ভালো করতে চান।
রেডিওতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও বাংলাদেশের
স্বাধীনতা দিবস প্রসঙ্গে দুই দেশের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তবে
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধী প্রচার
শুরু করে দিয়েছে। তবে তিস্তা চুক্তি হলে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের হাত
শক্ত হবে। আর দেশের মাটিতে বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা
চুক্তি করতে চান শেখ হাসিনা। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক সম্পদ
নিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে বোঝাপড়া মজবুত করতে চান মোদি।’ এতে বলা হয়,
‘হাসিনার সফরের প্রস্তুতিও চলছে অনেক আগে থেকে। ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের
বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর ঢাকায় এসেছিলেন। ৩০ মার্চ সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত
ঢাকায় আসবেন। হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি
দল বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ১ এপ্রিল লোকসভার
স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এমপিদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় অ্যাসেম্বলি
অব ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে যোগ দিতে আসছেন। অভিনেতা-সংসদ সদস্য
দেবের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে তাঁকেও ওই প্রতিনিধি দলে আমন্ত্রণ
জানিয়েছেন স্পিকার।’
No comments