ভোটকে সামনে রেখে সীমা-সাক্কুর যত চ্যালেঞ্জ
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) নগরপিতা কে হচ্ছেন- আঞ্জুম সুলতানা সীমা নাকি
মো. মনিরুল হক সাক্কু। কেউ কেউ বলছেন, এবার নগরপিতার আসনে পরিবর্তন আসছে।
আবার কেউ বলছেন, গতবারের মতো এবারও একই ফল আসবে এ নির্বাচনের রায়ে। এজন্য
৩০ মার্চ ভোট গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আলাপ
করে আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির
প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কুর সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ
যে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন, তিনিই হবেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের
আগামীর মেয়র। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে
জানা গেছে, নিজ দলেই অপ্রকাশ্য বিভক্তি দুই প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে
দেখা দিয়েছে। এছাড়া মনিরুল হক সাক্কুর মেয়র থাকাকালীন কর্মকাণ্ড নিয়েও চলছে
ভোটারদের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ। অপরদিকে আঞ্জুম সুলতানা সীমার বিরুদ্ধে বড়
কোনো অভিযোগ না থাকলেও তার পরিবারের সদস্যদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে
হিসাব-নিকাশ করছেন ভোটাররা। এর বাইরে দুই দলের ভোটব্যাংক, ৩৮ হাজার নতুন
ভোটার, সংখ্যালঘু ও নারী ভোটাররাই এ নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে
বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিএনপির স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ
দীর্ঘদিন সরকারে থাকায় দলটির স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে
সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব
পড়বে এ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ-বিরোধী মনোভাবাপন্ন মানুষের ভোট পাবেন মনিরুল
হক সাক্কু। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। নেতাকর্মীরা
মনে করছেন, ভোট গ্রহণ থেকে ফলাফল পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করে ভোট
বুঝে নিতে পারলে মনিরুল হক সাক্কু আবারও মেয়র পদে জয়ী হবেন। তবে দলীয়
কোন্দলের বিষয়টি নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন দলটির
স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর
রশিদ ইয়াসিন যুগান্তরকে বলেন, কুমিল্লার বেশিরভাগ মানুষ ধানের শীষে ভোট
দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তারা নিরাপদে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে এবং নিরাপদে
ফিরে আসার গ্যারান্টি চায়। ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে আমাদের প্রার্থীর
জয় নিশ্চিত। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সাক্কু পাঁচ বছর
মেয়র থাকাকালীন কুমিল্লাবাসীর জন্য তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। উল্টো
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নগরবাসী উন্নয়ন দেখতে চায়।
তাই সরকারি দলের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে তারা বলেন,
আচরণবিধির কারণে নির্বাচনের প্রচারণায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা মাঠে নামতে
পারেননি।
তবে তাদের স্ত্রী ও স্বজনরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এতে
এটাই প্রমাণিত হয়, তারাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে রয়েছে। জেলা আওয়ামী
লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রতন বলেন, আমরা শেখ হাসিনার প্রশ্নে
নৌকা প্রতীকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছি। সব স্তরের নেতাকর্মী
আমাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রেও যাবেন।
সাধারণ ভোটাররা আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের
প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। জানা গেছে, নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন
আগে আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা আফজল খানের প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা মডার্ন
হাইস্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধির নির্বাচনে আফজল খানের মনোনীত প্রার্থীরা হেরে
যান। অপরদিকে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের
অনুসারী জয় পেয়েছে। ভোট গ্রণের কয়েকদিন আগে স্কুলটির নির্বাচনে এমন ফলাফলের
প্রভাব সিটি কর্পোরেশনে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। এদিকে
সদর দক্ষিণের ভোট ব্যাংকের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী
নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে সাক্কুর প্রচার
কার্যক্রম থেকে সড়ে দাঁড়ানোর কারণে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সাক্কু।
নির্বাচনের মাঠে তিনি এখনও ফেরেননি। তার অনুসারীরা সাক্কুর পক্ষে কাজ করবে
কিনা, এমনটি নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই কানাঘুষা চলছে। আরও জানা গেছে,
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে তিন শ্রেণীর ভোটারকে টার্গেট
করে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ সিটিতে লক্ষাধিক নারী, অর্ধ
লক্ষাধিক সংখ্যালঘু ও ৩৮ হাজার নতুন ভোটার রয়েছেন। এরাই নির্বাচনে বড়
ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
No comments