মসুলে অবরুদ্ধ ৩ লাখ মানুষ -একদিকে আইসিস, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর গুলি
ইরাকের
মসুল। এর পশ্চিমাঞ্চলে উভয় সংকটে সাধারণ মানুষ। একদিকে আইসিস। অন্যদিকে
ইরাকি সেনাদের স্নাইপাররা। পশ্চিম পাশ থেকে টাইগ্রিস নদী পাড়ি দিয়ে পালানোর
চেষ্টা করা হলে উভয় পক্ষই গুলি করে। ফলে সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তিন লাখ
মানুষ। তাদের অবস্থা অবর্ণনীয়। খাদ্য নেই। পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। চারদিকে
শুধু হাহাকার। অনেকে খাদ্য খুঁজছেন ময়লার স্তূপে। সন্তানের মুখে তুলে
দেয়ার জন্য এভাবে ময়লার স্তূপে নিরন্তর খাবার খুঁজে চলেছেন কোনো মা অথবা
বাবা। এক এক বীভৎস দৃশ্য। তারই বর্ণনা দিয়েছেন পশ্চিম মসুলে আটকে পড়া জসিম
(৩৩)। লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা
তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মসুলের পশ্চিমাঞ্চলে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন কমপক্ষে
তিন লাখ মানুষ। তারা প্রতিক্ষণ লড়াই করছেন জীবন বাঁচাতে। তিন মাস তীব্র
লড়াইয়ের পর ইরাকি সেনারা মসুলের পূর্ব ভাগ দখলমুক্ত করেছে জানুয়াতিে। এখন
পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থা করুণ। জসিম বলেন, কোথাও কোনো সবজি নেই। নেই কোনো
ফলমূল। এভাবেই চলছে। পিতামাতারা সন্তানদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
তারা হন্যে হয়ে এখানে সেখানে ছুটছেন খাদ্যের সন্ধানে। যদিওবা কোনো স্থানে,
বাজারে খাবার পাওয়া যায় তার দাম আকাশচুম্বী। তা কেনার সামর্থ্য অর্থবান
মানুষ ছাড়া অন্যের পক্ষে সম্ভব নয়। যেখানে বেকারিতে খাবার তৈরি হয়, সেখানে
অনেক নারী গিয়ে হাত পাতছেন। যাদের কাছে অর্থ আছে তাদের কাছে সন্তানের জন্য
একটি রুটি কিনে দেয়ার করুণ আর্তি জানাচ্ছেন। তাতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
পশ্চিম মসুলের বেশির ভাগ মানুষ শুধু রুটি খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে। অনেক সময়
পানিটুকু যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কারণ, পানির একমাত্র উৎস
কূপ। সেখান থেকে পাম্প করে পানি উত্তোলন করতে হয়। এই পাম্প চালাতে প্রয়োজন
পেট্রল। একবার এই পাম্প চালাতে অনেক খরচ। তাতে প্রতি লিটার পানির পেছনে খরচ
পড়ে ১৫ ডলার। রয়েছে বিদ্যুতের মারাত্মক সংকট। এমন কি অনেক এলাকায় বিদ্যুৎই
নেই। জসিম বলেন, প্রতি তিন দিনে আমরা মাত্র দু’ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ পাই।
এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে গত মাসে কোনো বিদ্যুৎই ছিল না। ফলে মোবাইল ফোন
চার্জ করতে তারা ছুটে যান অন্য এলাকায়। শুধু রাতে থাকে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
আরও ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন জসিম। তার বাস টাইগ্রিস নদীতে ৫ম ব্রিজের
কাছে। জসিম বলেছেন, আমি মাকে উদ্ধার করে মসুলের পূর্ব পাড়ে যেতে চাই।
কিন্তু এটা হবে অত্যন্ত বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এক কাজ। আমার এলাকা থেকে নদী
পাড়ি দিয়ে পূর্বভাগে যাওয়ার সময় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের
গুলি করেছে স্নাইপাররা। জসিমের দাবি, দায়েসের রয়েছে স্নাইপার। তারা
টাইগ্রিস নদীর ৫ম ও ৬ষ্ঠ ব্রিজের মাঝে অবস্থান নিয়েছে। কাউকে পশ্চিম ভাগ
থেকে পূর্বভাগে পালাতে দেখলেই ইরাকি সেনাদের স্নাইপাররা আইসিস ভেবে গুলি
করে। দায়েস স্নাইপাররাও গুলি করে। ফলে ইরাকি সেনাদের মর্টার হামলা, গুলি ও
স্নাইপারদের গুলিতে মারা যাচ্ছে বেসামরিক মানুষ। কয়েকদিন ধরেই ইরাকি
নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা দাবি করছে টাইগ্রিস নদীর পশ্চিশ প্রান্ত থেকে পূর্ব
প্রান্তে পালিয়ে আসার সময় আইসিস যোদ্ধাদের গুলি করে হত্যা করেছে তারা। তবে
নিহত এসব মানুষের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। তারা উদ্ভূত সমস্যা থেকে
পালানোর চেষ্টা করছিলেন। নিজের এলাকায় বেসামরিক মানুষ হতাহতের বর্ণনা দিয়ে
জসিম বলেছেন, প্রতিদিনই হত্যা করা হচ্ছে ডজন ডজন বেসামরিক লোক। এর মধ্যে
রয়েছে শিশুরাও। ইরাকি সেনাদের ছোড়া মর্টার হামলায় সোমবারও নিহত হয়েছে দুই
শিশু।
No comments