তিন বছরের কোর্সে দুই বছরের জট
ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিন বছরের ফাজিল (পাশ) কোর্স ৫ বছরেও শেষ হচ্ছে না।
এতে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী চরম হতাশায়
ভুগছে। ফাজিল যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। ফলপ্রার্থীরা বিভিন্ন
চাকরিতে আবেদন করতে পারছে না। অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এভাবে চলতে
থাকলে ফাজিলের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে এবং দ্বীনি শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে
বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, ২০০৫ সালে দেশের
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ফাজিল ও কামিলের কার্যক্রম ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। শুরুতে কিছুটা ভালোভাবে পরিচালিত
হলেও ধীরে ধীরে অসহ্য জটের বোঝা জেঁকে বসে লাক্ষাধীক শিক্ষার্থীর কাঁধে। এর
পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফাজিল ও কামিলের কার্যক্রম আরবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরবর্তী সেশন থেকে ফাজিল, কামিল ও ফাজিল অনার্সের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে
আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কিন্তু সমস্ত দায়িত্ব একসাথে হস্তান্তর করা
সম্ভব হয়নি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ফাজিল ও
কামিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই শেষ করতে হবে। সঙ্গত কারণেই এখন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ফাজিলের ও কামিলের বড় একটি অংশ। ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিলে সর্বশেষ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী
ভর্তি করা হয়। ১২-১৩, ১৩-১৪ এবং ১৪-১৫ এই তিন সেশন এখনো ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। এদের মধ্যে ১২-১৩ সেশন ফাজিল চূড়ান্ত বর্ষের,
১৩-১৪ সেশন দ্বিতীয় বর্ষের এবং ১৪-১৫ সেশস প্রথমবর্ষের ফলাফলের অপেক্ষায়
রয়েছে। এদিকে আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ফজিলের দুইটি ব্যাচ।
২০১৫-১৬ সেশন এবং ১৬-১৭ সেশন। এদের মধ্যে ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের প্রথম
বর্ষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব মিলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫টি ব্যাচ রয়েছে। যেখানে থাকার কথাছিল তিনটি। তিন
বছরের কোর্সে দুই বছরের বড় জটের কারণ হিসেবে ফাজিল ও কামিলের কাজে আধুনিক
প্রযুক্তির ব্যবহারের অভাব এবং দক্ষ জনবলের অভাবকেই দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু প্রধান পরীক্ষাকের গাফিলতিকেও
দায়ী করছেন তারা। তবে তারা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধীনস্ত সেশনগুলোর কার্যক্রম শেষ করার কথা বলছে। এদিকে তিন বছরের ফাজিল
কোর্স ৫ বছরেও শেষ না হওয়ায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছে না
ফাজিল চূড়ান্ত বর্ষের প্রায় ৪৩ হাজার ফলপ্রার্থী। এনিয়ে দেশের বিভিন্ন
প্রান্ত থেকে ফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা। যশোর জেলার ‘ত্রিমহোনী দারুল
ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার’ ১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন,
‘এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা ফাজিলে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
এতে দ্বীনী শিক্ষা প্রদিপ এদেশে থেকে খুব সহজেই নিভে যাবে।
সংশ্লিষ্ট মহল,
দেশের আলেম সমাজ এবং ইসলাম প্রিয় নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। যে কোন মূল্যে
ফাজিল ও কামিল শিক্ষা কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে হবে।’ পাবনা জেলার
‘পুষ্পপাড়া কামিল মাদ্রাসার’ ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ফলপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন
বলেন, তিন বছরের কোর্স পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারিনি। আমাদের মতো নি¤œবিত্ত
পরিবারের পক্ষে এই জটের বোঝা বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য। একটা সার্টিফিকেট
পেলে আমি আমার বাবা-মায়ের অভাবের পরিবারকে একটু হলেও সাহায্য করতে পারব।’
১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রথম বর্ষ শেষ করতেই প্রায় দুই
বছর লেগে যাচ্ছে। এতে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাতে বসেছি’ সর্বশেষ ২০১৬
সালের ৩০ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল পরীক্ষা শেষ হয়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় ৫ মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ করতে
পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ বলেন,
‘মাদ্রাসার শিক্ষকরা খাতা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের স্ব স্ব প্রধান
পরীক্ষকদের কাছে জমা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন প্রধান পরীক্ষক
এখন পর্যন্ত ফলাফল জমা দেয়নি। ফলে সময়মতো ফল প্রকাশ হচ্ছে না।’
No comments