‘বালিকা বধূ’ প্রত্যুষাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন রাহুল
প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল রাজ সিং। |
ভারতীয়
টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূ’র পরিচিত মুখ বাঙালি অভিনেত্রী
প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা
অস্বীকার করেছেন তাঁর প্রেমিক অভিনেতা-প্রযোজক রাহুল রাজ সিং। তিনি বলেন,
প্রত্যুষাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। আজ রোববার এনডিটিভি
অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে
এমনটাই দাবি করেছেন প্রত্যুষার প্রেমিক রাহুল রাজ। প্রত্যুষার মৃত্যুর পর
রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে
গতকাল শনিবার রাত ১১টায় থানা থেকে বেরিয়ে যান রাহুল। এ ব্যাপারে পুলিশের
একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আবারও রাহুলকে ডেকে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করব।
এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।’ নাম প্রকাশ না করার
শর্তে বাঙ্গুর নগর থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যুষা তাঁর জীবনসঙ্গী
হিসেবে রাহুলকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তে বেশ দ্বিধায় ছিলেন। রাহুলের সঙ্গে
অন্য একটি মেয়ের ঘনিষ্ঠ মেলামেশায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এ
নিয়ে রাহুল ও প্রত্যুষার মাঝে বেশ কয়েকবার ঝগড়াঝাঁটিও হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে রাহুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে প্রত্যুষা ও আমি গুরগাঁওয়ের
একটি ফ্ল্যাটে ছিলাম। রাতে আমাদের সঙ্গে একজন মেয়ে বন্ধু যোগ দেয়। সেই
রাতে আমরা সামান্য মদ্যপান করেছিলাম। শুক্রবার ভোরে ওই বান্ধবীটি বান্দ্রার
মাউন্ট মেরি চার্চ দেখতে যেতে বলেন। আমি প্রত্যুষাকে রেখে বাইরে যাই। ভোর
চারটায় ফিরে এসে প্রত্যুষার সঙ্গে ঘুমানোর জন্য আমাদের কক্ষে চলে যাই। ঘুম
ভাঙলে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রত্যুষা মদ্যপান শুরু করে। আমি সকাল
সকাল তাঁকে মদ্যপান না করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। সে আমার কোনো
কথাই শোনেই। কিছুক্ষণ পর আমিও তাঁর সঙ্গে যোগ দিই। বেলা একটার দিকে একটা
কাজে আমি বাইরে যাই। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাঁকে ফোন করি, কিন্তু তাঁর মোবাইল
ফোনটি বন্ধ ছিল। কয়েকবার চেষ্টা করার পর ফোন খুললে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
তাঁর জন্য খাবার আনব কি না, জানতে চাইলে সে না করে দেয়। এরপর বাসায় পৌঁছে
দেখি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা।’ রাহুল বলেন, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায়
প্রথমে ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারেননি তিনি। পরে পাশের ফ্ল্যাটের একজনের সাহায্যে
ব্যালকনি দিয়ে তিনি ফ্ল্যাটে ঢোকেন। এরপরই রুমে ঢুকতেই শোবার ঘরের সিলিং
ফ্যানের সঙ্গে প্রত্যুষাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি তাঁর চাচা
ও প্রত্যুষার বাবা-মাকে খবর দেন। পরে প্রত্যুষাকে নামিয়ে আন্ধেরির
কোকিলাবেন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রত্যুষাকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে
ঘোষণা করেন। রাহুল আরও বলেন, ‘আমি পালাইনি, এ ঘটনায় আমাকে অভিযুক্ত করা
হচ্ছে। পুলিশকে আমার ফোন নম্বর দিয়েছি। এ ঘটনার পর আমি একজন আইনজীবীর
সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ আমাকে হয়রানি করতে পারে ভেবে তিনি আমাকে এই স্থান
ত্যাগ করতে বলেছিলেন। এ কারণে আমি এখানে আমি ছিলাম না। এটা অবশ্যই ঠিক
হয়নি।’ প্রত্যুষার এই প্রেমিক বলেন, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে তিনি
প্রত্যুষার সঙ্গে অভিসারে যান। তিনি তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, প্রত্যুষা তাঁর স্ত্রী। যদি তিনি শুক্রবার বাসা
থেকে বাইরে না যেতেন তাহলে হয়তো প্রত্যুষা বেঁচে যেত। তিনি বলেন, ‘আমি
নির্দোষ’। শুক্রবার মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকে প্রত্যুষার গলায় ফাঁস দেওয়া
ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, প্রত্যুষা
আত্মহত্যা করেছেন। প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর
তোলপাড় শুরু হয়েছে বলিউডে। বালিকা বধূর ‘আনন্দী’ কি আত্মঘাতী হলেন? নাকি
তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে? কলকাতার জামশেদপুরের মেয়ে প্রত্যুষা
বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তাঁর
অভিনীত শেষ সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘শ্বশুরাল সিমার কি’। রিয়্যালিটি শো
‘বিগ বস৭’-এও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
No comments