কাঁটা মান্দার by সৌরভ মাহমুদ
কাঁটা মান্দার ফুল,ভোলা থেকে তোলা |
শীতের
শেষে যখন বসন্তের হাওয়া লাগে, তখনই নানা ফুলের সঙ্গে গ্রামবাংলায়
মান্দার ফুল দেখা যায়। বেশ কয়েক প্রজাতির মান্দার আছে আমাদের দেশে। তবে
যে প্রজাতিটি দক্ষিণবঙ্গের মানুষের কাছে অতিপরিচিত, সেটি হলো কাঁটা
মান্দার। কেউ কেউ এটিকে মাদার ও পানিয়া মান্দার নামেও চেনেন। উত্তরবঙ্গে
এটি দেখিনি। তবে মেঘনা ও সুরমা অববাহিকার তীরবর্তী এলাকায় কিছু গাছ চোখে
পড়েছে। এটি বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও
গঙ্গার নিম্ন এলাকায় বেশি দৃশ্যমান। মূলত বীজ জলের প্রবাহের মাধ্যমে নদীর
তীরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বুনো গাছ। তাই যত্ন করার প্রয়োজন হয়
না। জলের কাছের ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে। কেউ কেটে না ফেললে অনেক বছর বাঁচে।
আবার ডাল কেটে লাগালেও গাছ হয়। স্বাদু জল ও জোয়ার-ভাটা এলাকায় ভালো
জন্মে। বেড়া দিতে, জ্বালানি কাঠ হিসেবে ও মাছের ঝাউ (পুকুর কিংবা নদীর
অগভীর অংশে মাছ ধরার জন্য গাছের ডাল দিয়ে তৈরি আবাস) দেওয়ার কাজে এ গাছের
ডাল ব্যবহার করা হয়। কাঁটা মান্দারগাছের কোনোটির কাণ্ডের গায়ে ঘন ও
প্রচুর কাঁটা থাকে, আবার কোনোটির কাণ্ডে কাঁটার পরিমাণ কম। ফাল্গুন মাসে
গায়ের গো-শালিক পাখি বাসা তৈরির জন্য এ গাছটিকে বেছে নেয়। কাঁটার ভয়ে
গায়ের দুষ্ট ছেলের দল গাছে উঠতে পারে না, পাখিরাও সে ব্যাপারটি আঁচ করতে
পেরেছে। বসন্তে যখন ফুল ফোটে, তখন এ গাছের ফুলে বিচরণ করে নানান প্রজাতির
পাখি। কাঁটা মান্দার ফুল গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের কাছে অতি প্রিয়। পাকা
তেঁতুল, সরিষার তেল ও মান্দারের লাল ফুল চটকিয়ে এক প্রকার চাটনি তৈরি করা
হয়, যা ‘তেঁতুল বানানি’ নামে বরিশাল এলাকায় পরিচিত। ফুলের পাপড়ির রং
টুকটুকে লাল। বসন্তের দিনে আমাদের প্রতিদিনের খাবার ছিল এটি। মেহগনি,
শিশুসহ আগ্রাসী প্রজাতির গাছের কারণে এ গাছ ধীরে ধীরে গ্রামবাংলা থেকে
হারিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ইটের ভাটায় কাঠের জোগান ও দেশলাই তৈরিতে ব্যবহৃত
হওয়ার কারণে পরিণত বয়সের মান্দার দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। ছেলেবেলায় অনেক
চওড়া ও লম্বা মান্দারগাছ দেখেছি। বিগত ১০ বছরে সে রকম আকারের কাঁটা
মান্দারগাছ চোখে পড়েনি। এটি নরম কাণ্ডবিশিষ্ট বৃক্ষ। শাখা-প্রশাখা
ফ্যাকাশে ধূসর। অসংখ্য কালো বর্ণের কাঁটা দ্বারা কাণ্ড পরিবেষ্টিত। বাকল
গভীরভাবে ফাটা। পাতা সবুজ। দীর্ঘদিন পর হলদে হয়ে ঝরে পড়ে। শাখার আগায়
ফুলের মঞ্জরি হয় এবং একটি মঞ্জরিতে একাধিক ফুল থাকে। পুষ্প টকটকে লাল
কিংবা সিঁদুরে, উজ্জ্বল, ৩.৪—৪.৩ সেন্টিমিটার লম্বা। ফল পড, পাকলে বহিত্বক
ফেটে বীজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বীজ কালো, বৃক্কাকার, মসৃণ। বাংলা ও
গাঙ্গেও সমভূমি ও মিয়ানমারে আদি আবাস। এটির পরিবার Fabaceae। বৈজ্ঞানিক
নাম erythrina fusca।
No comments