পুরো ভারতের নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে by রজত রায়
ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের ‘জঙ্গলমহলের’ ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের মধ্য
দিয়ে রাজ্যে ছয় দফার ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। পশ্চিম
মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গল-অধ্যুষিত এলাকাই জঙ্গলমহল নামে
পরিচিত। ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মাওবাদীরা সক্রিয় ছিল জঙ্গলমহলে। কিন্তু
শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা কিষেনজি পুলিশের হাতে প্রাণ হারানোর পরে অনেকেই
আত্মসমর্পণ করে ক্ষমতাসীন তূণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। এ কারণে ওই এলাকায়
মাওবাদী প্রভাব আর প্রায় নেই বললেই চলে। তবু নির্বাচন কমিশন কোনো ঝুঁকি
না নিয়ে জঙ্গলমহলে দুই দিন ধরে আলাদা ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ ৪
এপ্রিল এবং ১১ এপ্রিল। মাওবাদীরা যাতে ভোটে কোনো রকম নাশকতা না করতে
পারে, সে জন্য বিশাল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
জঙ্গলমহলকে প্রথম দফা ধরে নির্বাচন কমিশন মোট ছয় দফায় ভোট গ্রহণের
ব্যবস্থা করেছে পশ্চিমবঙ্গে। ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হবে ৫ মে। আসামে ৪ ও ১১
এপ্রিল এ দুই পর্বে ভোট। আসামের ১২৬ আসনের মধ্যে আজ হবে ৬৫ আসনে ভোট। পরে
মে মাসেই তামিলনাড়ু, কেরালা ও পদুচেরিতে ভোট। তাই এসব রাজ্যের ভোটপর্ব
মিটলে একসঙ্গে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে ১৯ মে। ভোট পাঁচ রাজ্যে হলেও
গোটা দেশের নজর এবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
তূণমূল কংগ্রেস পাঁচ বছর রাজত্বে দুর্নীতি, স্বজন পোষণ, সমাজবিরোধীদের
প্রশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে। এর আগে সারদা ও একগুচ্ছ
চিটফান্ডের কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা জড়িয়েছেন, কেউ কেউ জেলে
গিয়েছেন, তেমনই সম্প্রতি নারদা ‘স্টিং অপারেশনের’ ভিডিওতে ওই দলের নেতা,
মন্ত্রী, সাংসদদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতে দেখা গেছে। কলকাতায় কয়েক দিন আগেই
নির্মীয়মাণ উড়ালসড়ক ভেঙে পড়ায় যে অনেক মানুষের প্রাণ গেল, সেখানেও অভিযোগ
উঠেছে, তূণমূল কংগ্রেসের নেতাদের লোভের মাশুল দিতে উড়ালসড়ক নির্মাণে
নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজ্যের সর্বত্র চাঁদাবাজির সঙ্গে
তূণমূল কংগ্রেসের নেতাদের নাম জড়িয়েছে। চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে
তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে খুনোখুনি এখন নিয়মিত ঘটনা। ভোটের
সময় শাসক দলের তরফে পেশিশক্তি ব্যবহার করে বুথ দখল ও জাল ভোট দেওয়ার
প্রবণতাও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় খুব বেশি করে চোখে পড়েছে।
এই অবস্থায় বিরোধী কংগ্রেস ও বামপন্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে নামায় লড়াই খুবই জমে ওঠে। কারণ, ২০১৪ সালের প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে কংগ্রেস-বাম জোটের ভোট ক্ষমতাসীন তূণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের কাছাকাছি। বিজেপি ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার হাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে রেকর্ড অঙ্ক ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এ ছাড়া দলটি সাধারণত ৪ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। এবার মোদি-হাওয়া নেই। মোদি সরকারের জনপ্রিয়তাও নিম্নমুখী। ফলে, বিজেপির ভোটও অনেক কমার সম্ভাবনা। বিজেপির ভোট কমলে তা কোন দিকে ঝুঁকবে, শাসক তৃণমূল, নাকি কংগ্রেস-বাম জোটের দিকে, তার ওপর এবারের ভোটের ফল অনেকটাই নির্ভর করছে। ফল নির্ভর করছে আরও একটা জিনিসের ওপরেও। তা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশন গোড়ায় খুব হম্বিতম্বি করলেও ভোট ডাকাতি ঠেকাতে কোনো চেষ্টাই করেনি। এবার কমিশন অনেক আটঘাট বেঁধে নেমেছে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৭০০ কোম্পানি সদস্য থাকছে ভোটে নিরাপত্তা দিতে। গতবার কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও ব্যারাকে বসে ছিল। শাসক দলের বুথ দখল, ভোট লুটে ভূমিকা ছিল পাহারায় থাকা রাজ্য পুলিশেরও। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদি জানেন, ২০১৪ সালের ভোট পরিচালনা নিয়ে এসব সমালোচনার কথা। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এবার ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীই দায়িত্বে থাকবে। কমিশনের এসব ঘোষণায় ক্রুদ্ধ ও চিন্তিত শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী তো ভোটের পরেই চলে যাবে, তারপর তো এ রাজ্যের মানুষকে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের তাঁবেই থাকতে হবে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, তাঁদের কথামতো ভোট না দিলে ভোটের পরে দেখে নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তার আশ্বাস এবং শাসক দলের হুমকির মধ্যে ভোটদাতারা কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেন, তার ওপরেই ফলাফল অনেকটা নির্ভর করতে পারে। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ, তেমনই অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট পরিচালনা করে রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জন করাও নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই অবস্থায় বিরোধী কংগ্রেস ও বামপন্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে নামায় লড়াই খুবই জমে ওঠে। কারণ, ২০১৪ সালের প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে কংগ্রেস-বাম জোটের ভোট ক্ষমতাসীন তূণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের কাছাকাছি। বিজেপি ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার হাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে রেকর্ড অঙ্ক ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এ ছাড়া দলটি সাধারণত ৪ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। এবার মোদি-হাওয়া নেই। মোদি সরকারের জনপ্রিয়তাও নিম্নমুখী। ফলে, বিজেপির ভোটও অনেক কমার সম্ভাবনা। বিজেপির ভোট কমলে তা কোন দিকে ঝুঁকবে, শাসক তৃণমূল, নাকি কংগ্রেস-বাম জোটের দিকে, তার ওপর এবারের ভোটের ফল অনেকটাই নির্ভর করছে। ফল নির্ভর করছে আরও একটা জিনিসের ওপরেও। তা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশন গোড়ায় খুব হম্বিতম্বি করলেও ভোট ডাকাতি ঠেকাতে কোনো চেষ্টাই করেনি। এবার কমিশন অনেক আটঘাট বেঁধে নেমেছে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৭০০ কোম্পানি সদস্য থাকছে ভোটে নিরাপত্তা দিতে। গতবার কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও ব্যারাকে বসে ছিল। শাসক দলের বুথ দখল, ভোট লুটে ভূমিকা ছিল পাহারায় থাকা রাজ্য পুলিশেরও। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদি জানেন, ২০১৪ সালের ভোট পরিচালনা নিয়ে এসব সমালোচনার কথা। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এবার ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীই দায়িত্বে থাকবে। কমিশনের এসব ঘোষণায় ক্রুদ্ধ ও চিন্তিত শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী তো ভোটের পরেই চলে যাবে, তারপর তো এ রাজ্যের মানুষকে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের তাঁবেই থাকতে হবে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, তাঁদের কথামতো ভোট না দিলে ভোটের পরে দেখে নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তার আশ্বাস এবং শাসক দলের হুমকির মধ্যে ভোটদাতারা কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেন, তার ওপরেই ফলাফল অনেকটা নির্ভর করতে পারে। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ, তেমনই অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট পরিচালনা করে রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জন করাও নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
No comments