শরণার্থীদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত গ্রিস
উত্তপ্ত গ্রিস |
তুরস্কে
ফেরত পাঠানোর সময় ঘনিয়ে আসায় আটকে পড়া শরণার্থীদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে
উঠেছে গ্রিস। গত শনিবার গ্রিসের কিওসে একটি শরণার্থীশিবিরের বেষ্টনী ভেঙে
ফেলে প্রায় ৮০০ লোক। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রিসের বন্দর শহর পাইরিসে।
উত্তাপ ছড়িয়েছে শরণার্থীদের গ্রিসে আসার অন্যতম প্রবেশদ্বার লেসবস দ্বীপেও।
গ্রিস সরকার আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ইউরোপীয়
ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তুরস্কের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিসে থাকা প্রায় এক লাখ
শরণার্থীকে তুরস্কে পাঠানো শুরু হওয়ার কথা আজ সোমবার থেকেই। সোম থেকে
বুধবার প্রথম দফায় গ্রিসের লেসবস দ্বীপ থেকে তুরস্কের বন্দর শহর দিকিলিতে
৭৫০ জন শরণার্থীকে পাঠানোর কথা। শুরু থেকেই এ বিতর্কিত চুক্তি নিয়ে
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তাদের আপত্তি জানিয়েছে। চুক্তি
অনুযায়ী, সাগর পাড়ি দিয়ে যে শরণার্থীরা ইইউর সদস্যদেশ গ্রিসে প্রবেশ করেছে,
তাদের গ্রহণ করবে তুরস্ক। গ্রিস থেকে ফেরত নেওয়া প্রতিজন সিরীয় শরণার্থীর
বিনিময়ে ইতিমধ্যে তুরস্কে থাকা আরেকজন শরণার্থীকে ইইউভুক্ত দেশে পুনর্বাসিত
করা হবে। প্রতিবেশী বলকান দেশগুলো সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রিসে আটকে
পড়া শরণার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ। এত মানুষকে ফেরত পাঠানোর জন্য
গতকাল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন ইইউ ও গ্রিস সরকারের
কর্মকর্তারা। শুরু থেকেই এ কাজের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। গতকালও এর
প্রক্রিয়া নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন ইইউর কর্মকর্তারা। ফেরত পাঠানোর
প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বড় ধরনের আপত্তি উঠেছে। গার্ডিয়ানের খবরে
বলা হয়, গত শনিবার গ্রিসের দ্বীপ শহর কিওসের শরণার্থীশিবিরে বড় ধরনের
হাঙ্গামা হয়। শিবির থেকে চলে যেতে হবে—এ কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেখানে
থাকা শরণার্থীরা। একপর্যায়ে গোলযোগের মধ্যে তিনজন ছুরিকাহত হন। বিক্ষোভ
চলাকালে শিবিরের ঘর ও আঙুলের ছাপ নেওয়ার যন্ত্র ভেঙে ফেলে শরণার্থীরা।
মুস্তাফা নামের এক শরণার্থী বলেন, ‘আমাকে যদি তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়, তবে
পরিবারের সবাইকে নিয়ে আবার সাগরে ঝাঁপ দেব।’ এই শিবিরের এক স্বেচ্ছাসেবী
বেঞ্জামিন জুলিয়ান বলেন, ৩০ জন পুলিশ দিয়ে ১ হাজার ৬০০ শরণার্থীকে
নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে যা হওয়ার এখানে তা-ই হচ্ছে। শরণার্থী ফেরত পাঠানোর
কাজ যে সহজ হবে না, গ্রিসের কর্মকর্তারাও তা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন।
গ্রিসের বামপন্থী সরকারের মুখপাত্র গিওর্গস কাইরিটিস বলেন, ‘আমরা
গোলযোগের আশঙ্কা করছি। এভাবে চলে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষ স্বাভাবিকভাবেই
উগ্র হয়ে ওঠে।’ মুখপাত্র কাইরিটিস বলেন, ‘ইইউ-তুরস্ক চুক্তির মূল উদ্দেশ্য
হলো তুরস্কের উপকূল থেকে চলা ভয়াবহ মানব পাচার বন্ধ করা। কিন্তু বিষয়টি
অত্যন্ত জটিল। আমরাও খুব ধীরে-সুস্থে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।
যারা এখানে এসেছে, তারা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা মানুষ। এরা কেউই অপরাধী নয়।’
চুক্তি অনুসারে ইইউর সীমান্তরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেস্ক গ্রিস থেকে তুরস্কে
শরণার্থী ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দেখভাল করবে। কিন্তু সংস্থাটি গতকালও এ কাজে
সুনির্দিষ্ট লোকবল সরবরাহ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্রন্টেস্কের আটটি
জাহাজে করে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো হবে। গিওর্গস কাইরিটিস বলেন, এখন
পর্যন্ত এই ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ফ্রন্টেস্কের আইনি পরামর্শক ও অনুবাদকেরা
আসেননি। এমনকি ফ্রন্টেস্কের কর্মকর্তাদেরও অনেকে এসে পৌঁছাননি। ২ হাজার
৩০০ কর্মীর আসার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত এসেছেন মাত্র ২০০ জন।
No comments