শাকিলাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
চট্টগ্রামের
হাটহাজারী থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের
আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে র্যাব। এতে
বলা হয়েছে, চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে
অর্থায়ন এবং নাশকতার পরিকল্পনায় আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে
সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নতুন এই জঙ্গি
সংগঠনটির প্রধান বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদি। তাঁর অর্থায়নে ও
নির্দেশে হামজা ব্রিগেড গড়ে তোলা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায়
তাঁকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের মুখ্য
বিচারিক হাকিম মুন্সি মো. মশিয়ার রহমানের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন। এর আগে গত
২০ মার্চ বাঁশখালী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় শাকিলাসহ ২৮ জনের
বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব। এর আগে গত ১৬ মার্চ হালিশহর থানার
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হামজা ব্রিগেডের ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
দেওয়া হয়। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ
গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে অর্থায়ন
এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা
করেছিলেন আসামিরা। অভিযোগপত্রে তিন আইনজীবীসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর
মধ্যে তিনজন পলাতক রয়েছেন। জামিনে মুক্ত আছেন দুই আইনজীবী মাহফুজ চৌধুরী ও
হাছানুজ্জামান। সংগঠনের প্রধান বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির পূর্ণাঙ্গ
ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁকে আসামি করা যায়নি। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি
হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রপ্তার
করে র্যাব। পরদিন র্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে
হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এর দুদিন পর বাঁশখালীর
লটমণি পাহাড়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ
পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর প্রায় দেড় মাস পর ১৩ এপ্রিল
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র্যাব-৭-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে
জানানো হয়, হাটহাজারী ও লটমণি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গিরা
চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ সদস্য। তদন্তের
একপর্যায়ে গত বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা
থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে। শাকিলা বিএনপির
সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের
যুগ্ম সম্পাদক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন
জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে হামজা ব্রিগেডের
প্রধান বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদিসহ আরও ৫৩ জনের জড়িত থাকার
তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন তিনি। তাঁদের নাম জানতে পারলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা
পাননি। এ কারণে অভিযোগপত্রে তাঁদের আসামি করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,
৩৩ আসামির মধ্যে কারাগারে রয়েছেন সিরাজুল মোস্তফা, শামীম হোসেন, আবদুল
কাইয়ুম শেখ, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম শেখ, আবদুর রহমান ইবনে
আব্দুল্লাহ, মোস্তাকিম বিল্লাহ, উসমান গনি, মাহমুদুল হাছান, শরিফুল ইসলাম,
কামাল উদ্দিন, আশরাফ আলী, আবদুল খালেক, আবু হুরায়রা, নাছির হোসেন, নাছির
উদ্দিন, মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, এনামুল হক, শাকিলা ফারজানা, আজিজুল হক,
মোবাশ্বের হোসেন, আমিনুল ইসলাম ওরফে হামজা, হাবিবুর রহমান, আমির হোসেন, মো.
ইসহাক, রাকিব হাসান, মো. শামসুদ্দিন ও মোজাহের মিয়া। পলাতক তিন আসামি
হলেন আবু সাঈদ, নুরুল আবছার ও আ ক ম মঞ্জুর এলাহী। জামিনে আছেন আসামি দুই
আইনজীবী। তিন আইনজীবীকে আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক
লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের জন্য মনিরুজ্জামান
ওরফে ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে আইনজীবী শাকিলা ফারজানা দুই দফায় ২৫ লাখ ও
২৭ লাখ টাকা, হাছানুজ্জামান দুই দফায় ১৫ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা এবং মাহফুজ
চৌধুরী ২৫ লাখ জমা দেন। এতেই বোঝা যায়, তিন আইনজীবী জঙ্গি অর্থায়ন
করেছিলেন। মনিরুজ্জামান বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র
গড়ে তোলেন। হাটহাজারীতে যুবকদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বাঁশখালীতে
পাহাড়ে নিয়ে আসা হতো। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিন আইনজীবীর পক্ষে
মামলা পরিচালনাকারী আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, উসমান আমিন নামের এক
ব্যক্তির মামলা পরিচালনা করতে শাকিলাকে ওই টাকা দিয়েছিলেন। তবে মামলা না
লড়ায় উসমানের দেওয়া তিনটি হিসাব নম্বরে টাকা ফেরত দেন শাকিলা। ওই হিসাব
নম্বরগুলো কোনো জঙ্গির কি না, তা জানা ছিল না শাকিলার। শাকিলার চাচা সৈয়দ
নেছার উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁর ভাতিজিকে আসামি করা হয়েছে। জঙ্গি
সংগঠনের সঙ্গে শাকিলা জড়িত নন বলে তিনি দাবি করেন। আট পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে
তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আল্লামা লিবদির নির্দেশে দেশে নাশকতামূলক
কর্মকাণ্ড চালাতে আসামিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। বাংলাদেশে সংগঠনটি
পরিচালনা করতেন বড় ভাই ওরফে জুনাইয়েদ নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু গ্রেপ্তার
হওয়া আসামিরা জবানবন্দিতে বড়ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে
পারেননি। হামজা ব্রিগেডের সামরিক বিভাগের প্রধান মনিরুজ্জামান ওরফে ডন,
দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো.
আবদুল্লাহ। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মোজাহের
মিয়া। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া। র্যাব সূত্র জানায়, মনিরুজ্জামানের
বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা
ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নাছির হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীর
সেনবাগে। তিনি শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ কমিটির বায়তুল মাল সম্পাদক
ছিলেন। আবদুল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। তিনিও ছাত্রশিবিরের
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক এ
এইচ এম মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রটি গ্রহণের শুনানির জন্য মুখ্য বিচারিক
হাকিম আদালত থেকে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে
এটি শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
No comments