অপরাধের স্বর্গরাজ্য by আলাউদ্দিন কবির
কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলোতে অপরাধীদের আনাগোনা
বেড়েছে। দেখভাল না থাকার কারণে ওই কোয়ার্টারগুলোতে সংঘটিত হচ্ছে নানা
অপকর্ম। আর এসব পরিত্যক্ত কোয়ার্টার বহিরাগতরা দখলে নিয়ে অপকর্ম পরিচালনা
করছে। রেলওয়ে থানা, কুলাউড়া থানা এবং উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি অবগত হলেও কোন
ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়ার রেলস্টেশনের বিশাল
এলাকাজুড়ে রয়েছে আবাসিক এলাকা। এখানে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার ১৫০টি। এর
মধ্যে ৬০টি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া পরিত্যক্ত ঘোষিত আরও শতাধিক বাসা দখলে
নিয়েছে বহিরাগতরা। বেদখল হওয়া বাসাগুলোয় অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ও রেলওয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এলাকার ও দেশের
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভাসমান লোকদের কাছে এগুলো দেয়া হয়েছে ভাড়া। ভাড়ার
মোটা অঙ্ক যায় রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পকেটে। এসব বাসায় চলে মদ,
গাঁজা, হেরোইন ও ফেন্সিডিলসহ নানান মাদক ব্যবসা। সন্ধ্যার পর বসে জুয়া,
অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ। কোয়ার্টারগুলোতে এসব অসামাজিক কার্যকলাপের
কারণে বিপথগামী হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ। এ কারণে স্থানীয়
অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। স্টেশনের উত্তর ও
দক্ষিণ কলোনি এলাকায় সন্ধ্যা নামলে মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না।
মানুষের কাছে রেলওয়ে কলোনি এক বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত ১০
জানুয়ারি রেলওয়ের দক্ষিণ কলোনির বাসিন্দারা ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী
(পূর্ত) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। স্থানীয়দের মতে, ওই কলোনির
পরিত্যক্ত ঘরে কমপক্ষে ২০ বছর থেকে বসবাস করছে রোকেয়া নামের এক মহিলা।
স্থানীয়রা ওই বাসাকে একটি পতিতালয় বলে জানান। এছাড়া জুয়ার আসরের সর্দার
লিয়াকত। একাধিক বাসায় মাদক সেবন ও বিক্রি চলে প্রকাশ্যে। স্থানীয় ও রেলওয়ে
প্রশাসনের বিষয়টি জানা থাকলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা
বেদখল হওয়া বাসাগুলো পুনরুদ্ধারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। রেলওয়ের কিছু অসাধু
কর্মকর্তা বন্দোবস্ত এনে শর্ত ভঙ্গ করে পাকা দালান নির্মাণ করে ভাড়া
দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান করতে
চাইলেও নানা কারণে তা ব্যর্থ হচ্ছে। কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রেলওয়ে কলোনির অসামাজিক কার্যকলাপ বা
আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তারা যদি কোন সহযোগিতা
চায় তবে আমরা সহযোগিতা করবো। এ ব্যাপারে রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পিযূষ
কান্তি ভট্টাচার্য জানান, বেশির ভাগ কোয়ার্টার নষ্ট হওয়ার কারণে রেলওয়ের
কোন কর্মকর্তা কর্মচারী এখানে থাকে না। আর এ কারণেই বাইরের লোকেরা এসব
কোয়ার্টার দখল করে বসবাস করছে। বেদখল হওয়া বাসাগুলোর মানুষের কার্যকলাপ
আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি
জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি দেখে রেলওয়ের সিলেট অফিস থেকে। বাসা ভাড়া
আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, লোকেরা অনেক কিছু বলতে পারে, এটা
তাদের স্বাধীনতা। বাসা ভাড়া আত্মসাৎ করার প্রশ্নই আসে না। গত ডিসেম্বর মাসে
রেলওয়ের এস্টেট ডিপার্টমেন্ট অবৈধ বাসা ও জায়গা জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে
উচ্ছেদ অভিযানের পরিকল্পনা করে। কিন্তু শেষতক অর্থাভাবের কারণে তা বন্ধ হয়ে
যায়।
No comments