অনুমতি ছাড়াই চাঁপাই নবাবগঞ্জে অভিযান by দীন ইসলাম
স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমতি ছাড়াই চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অভিযান
চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর তছনছ
করার অভিযোগ রয়েছে। এ সময় ৩৫টি বাড়িঘর ও এর আসবাবপত্রে ভাঙচুর চালানো হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লিখিতভাবে অনুমতি চেয়ে অভিযান পরিচালনা
সম্পর্কে চিঠির বিপরীতে লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি
পাননি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার। এ কারণে গত ১৫ই জানুয়ারি যৌথ বাহিনী’র
চাঁপাই নবাবগঞ্জে অভিযান পরিচালনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা
দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাই
নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে যৌথ অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গত ১২ই জানুয়ারি ফ্যাক্স মারফত একটি জরুরি
চিঠি দেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ। ওই দিনই অতীব জরুরি
লিখে ফাইলটি অনুমোদনের জন্য সিনিয়র সচিব ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে
পাঠানো হয়। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত ফাইলটি সংশ্লিষ্ট
শাখায় পৌঁছেনি। তাই শিবগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনার জন্য অনুমতিও
দেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়ার পরও শিবগঞ্জে যৌথ
বাহিনীর অভিযান পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার
হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এর আগে ১২ই জানুয়ারি
বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চাঁপাই
নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাধীন সোনা মসজিদ স্থল বন্দরটি একটি
গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই পণ্যবাহী শত শত ট্রাক বাংলাদেশ
ও ভারত অভ্যন্তরে যাতায়াত করে। কিন্তু ইদানীং অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে
লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব পণ্যবাহী ট্রাক
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে প্রায়শই নাশকতা সৃষ্টিকারীদের হামলার শিকার
হচ্ছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষতিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য এলাকায় অপরাধমূলক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে
তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলেও শিবগঞ্জের প্রেক্ষাপট
ভিন্ন। স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকাংশই জামায়াতপন্থি, এমনকি অনেক নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিও একই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেন। অতীতের রেকর্ড বিবেচনায় দেখা যায়
বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ওই এলাকার জনগণের সক্রিয় সহযোগিতার কারণে
অন্যান্য এলাকার তুলনায় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। তাছাড়া, এলাকার অধিকাংশ জনগণ কিছুটা
উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। এ কারণে গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে যৌথ অভিযান
পরিচালনা ছাড়া ওই এলাকায় সংঘটিত অপরাধ দমন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আর এ
এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে নাশকতামূলক তৎপরতা আরও বেড়ে যাবে,
যার প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে। এমন অবস্থায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় জরুরিভিত্তিতে সাতক্ষীরার মতো সমন্বিত যৌথ অভিযান
পরিচালনাপূর্বক অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরা জেলায়
যৌথ অভিযান পরিচালনার নামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ওই
অভিযানে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের খোঁজার তল্লাশির নামে বাড়িঘর তছনছ
করা হয়। এরপরও নতুন করে আরেকটি জেলায় যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য চিঠি দেন
বিভাগীয় কমিশনার। যে চিঠির ভিত্তিতে অনুমতি মেলার আগেই অভিযান পরিচালনা করা
হয়।
No comments