সন্ধ্যার পর সরগরম খালেদার কার্যালয়
দীর্ঘ
১৬ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই সরগরম হয়ে ওঠে বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়। গতকাল কার্যালয়টির সামনে ছিল
অন্যরকম পরিবেশ। ছিল না পুলিশি নিরাপত্তার কড়াকড়ি, জলকামানের ব্যারিকেড ও
জিজ্ঞাসাবাদের বিড়ম্বনা। কোন ধরনের বাধা না থাকায় কার্যালয়ে হাজির হন
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। সন্ধ্যার পর কার্যালয়ের
সামনে ভিড় করেন দলের কর্মী-সমর্থকরাও। হাসি ফোটে ৮৬ নম্বর রোডের
বাসিন্দাদের মুখেও। রোববার রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ করেই অবরুদ্ধ খালেদা
জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রাখা দুটি পুলিশভ্যান ও একটি
জলকামানের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ। প্রত্যাহার করা হয় কার্যালয়ের সামনে
মোতায়েন করা নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্যদের। ওই সড়কের দুইপ্রান্তে পুলিশের
তল্লাশি চৌকিও সরানো হয়। সড়কটি দিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা যান চলাচলও শুরু
হয়। তবে বহাল রাখা হয় সাদা পোশাকের পুলিশ। রাত থেকে কার্যালয়টির
নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন সিএসএফের সদস্যরা। কার্যালয়টির প্রধান ফটকে মোতায়েন
করা হয় সিএসএফের একটি গাড়ি। এদিকে সকাল হতেই সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে
কৌতুহল ছড়িয়ে পড়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হবেন কিনা।
গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে কার্যালয়ে
প্রবেশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ
আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান. ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ,
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বেগম সারওয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল
ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের
সভাপতি শামা ওবায়েদসহ বেশ কয়েকজন মহিলা নেত্রী। এতে কৌতুহল আরও বেড়ে যায়।
সাড়ে ৫টা থেকে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া কার্যালয়ে থাকার ঘোষণা দিলে সবার কৌতুহল উবে
যায়। এদিকে সন্ধ্যার দিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের
কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কার্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি
আরোপ করেন সিএসএফ সদস্যরা। চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্যরা সাংবাদিকদের
পরিচয় নিশ্চিত করার পরই প্রবেশের অনুমতি দেন তারা। সংবাদ সম্মেলন শুরু হলে
কার্যালয়ের গেটে ডেইলি স্টার, যায়যায়দিন, নয়াদিগন্তসহ বেশ কয়েকটি
গণমাধ্যমের সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়নি সিএসএফ সদস্যরা। কার্যালয়ে ঢুকতে না
পেরে সংবাদ সম্মেলন শেষে চেয়ারপারসেরন মিডিয়া উইং সদস্যদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন
তারা। এদিকে সন্ধ্যার কার্যালয়টির সামনে জড়ো হন কয়েক শতাধিক দলীয়
নেতাকর্মী ও সমর্থক। ভিড় জমান উৎসুক মানুষও। দীর্ঘ ১৬ দিন ধরে কার্যালয়টিতে
খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকলেও পুলিশি কড়াকড়ির কারণে ওই এলাকায় ঘেঁষতে
পারেননি তারা। এতদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সবার পুলিশের
অনুমতি নিতে হতো। ওদিকে পুলিশি ব্যারিকেড প্রত্যাহার করায় স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলেছেন ৮৬ নম্বর সড়কের বাসিন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদের নামে অযাচিত
বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি তাদের। অবাধে চলাফেরা করতে পারছেন তারা। রাত সাড়ে
৮টার পর থেকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তবে এখনও
কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। গত ৩রা জানুয়ারি রাত থেকে
কার্যালয়টির দোতলায় দুটি কক্ষেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে
কার্যালয়টিতে এখনও অবস্থান করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান,
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল,
বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আল-আমিন ডিউ, মহিলা দলের
সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও আরেক মহিলা নেত্রী হেনা আলাউদ্দিন,
চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ,
চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ
কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। উল্লেখ্য, গত ৩রা জানুয়ারি রাত
সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এর পরপরই কার্যালয়ের সামনে তিন
স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্ধশতাধিক নারী পুলিশ
সদস্য মোতায়েন করা হয় কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি
জলকামান ও পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে
ব্যারিকেড। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ
দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের
পথরোধ করে পুলিশ। প্রায় আধাঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ফের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন
তিনি। পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে ৫ই জানুয়ারি রাত ১২টার পর থেকেই
একে একে কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুইপাশে এনে রাখা হয় ১১টি ইট ও
বালুভর্তি ট্রাক। এরপর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনবারের এই সাবেক
প্রধানমন্ত্রী। ৫ই জানুয়ারি দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়
পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টায় কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নামেন তিনি। এ সময় বের
হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ।
প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি থেকে বের হয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ওই দিন
সন্ধ্যার পর পেপার স্প্রের গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতেই একটি
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দল কার্যালয়ে প্রবেশ তাকে চিকিৎসা দেন। ৬ই
জানুয়ারি কার্যালয়ের দুই পাশে বালু ও ইটের ট্রাক সরিয়ে নেয়া হয়।
No comments