রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও- রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩ দিনে প্রাণ গেছে পাঁচ শিশুর by শরিফুল হাসান
(মা-বাবার
সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোববার রাতে পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম
যাচ্ছিল দিপায়ন। পথে তাদের গাড়িতে ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে
বাবা-মায়ের সঙ্গে সে-ও আহত হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
থেকে তোলা ছবি: জুয়েল শীল) আড়াই
বছরের ছেলে সাফিরকে কোলে নিয়ে গত রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায়
ফিরছিলেন চিকিৎসক দম্পতি সাইফুল ইসলাম ও শারমিন আহমেদ। বাসে হঠাৎ
পেট্রলবোমা হামলায় শিশুটির গায়ে আগুন লেগে যায়। ওই অবস্থায় ছেলেকে
নিয়ে বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েন সাইফুল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
সাফির জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এর চার দিন আগে রংপুরে বাসে পেট্রলবোমা
হামলায় প্রাণ হারিয়েছে আড়াই বছরের এক শিশুসহ পাঁচজন। এভাবে রাজনৈতিক
সহিংসতার শিকার হয়ে হতাহত হচ্ছে শিশুরা। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় এ
পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শিশু, আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। শিশু অধিকার
নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, অবরোধ চলাকালে বাছবিচার না করে বাস-ট্রাকে
হামলা চালানোর কারণে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। রাজনৈতিক সহিংসতার আগুনে
আড়াই বছরের শিশু মায়ের কোলেই পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। ককটেল হামলায় চোখ
হারিয়ে পুরো জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বেসরকারি
সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজিএফ) কর্মসূচি সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল
মামুন গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৩ সালে আমরা দেখেছি রাজনৈতিক
সহিংসতার ভয়াবহ শিকার হয়েছে শিশুরা। ওই বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় আক্রান্ত
হয় ১৫৬ শিশু। এর মধ্যে ৪১ জন নিহত ও ১০৭ জন গুরুতর আহত হয়। গত বছর এই
সহিংসতা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে আমরা আবারও সেই
পুরোনো সহিংসতা দেখতে পাচ্ছি। কোনো সভ্য দেশে এভাবে শিশুদের ওপর হামলা হতে
পারে না।’
এই অবরোধের প্রথম দিন থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রাবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলায় মায়ের কোলেই এক শিশু জীবন্ত দগ্ধ হয়। বাসটিতে থাকা ১৮ বছরের জেসমিন আক্তারও দগ্ধ হয়ে মারা যায়। আহত হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা ১১ বছরের শিশু ফারজানা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শেখটোলায় ১৫ জানুয়ারি অবরোধকারীরা স্কুলছাত্র রাজন আলীকে পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন রাতে সে মারা যায়। ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা যান ১৮ বছরের তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বাসচালকের সহকারী ছিলেন। বরিশালের উজিরপুরে রোববার ভোরে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়ে মারা যায় চালকের সহকারী সোহাগ বিশ্বাস (১৭)। একই দিন পুরান ঢাকায় ককটেল হামলায় আহত হয় শিশু রহিমা (৮)।
এর আগে ৫ জানুয়ারি ফেনী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার ও মিনহাজুল প্রাইভেট পড়ে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে অবরোধ-সমর্থকদের ককটেল হামলায় আহত হয়। মিনহাজুলকে ঢাকায় ও শাহরিয়ারকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডান চোখে আর কোনো দিন দেখবে না শাহরিয়ার। আঘাত লেগেছে মিনহাজুলের চোখেও। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে দুজনেরই। আকস্মিক এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন শাহরিয়ারের মা রোজি রুশনা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না। তবে কেন আমাদের এমন হবে?’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিনহাজের মা জেসমিন রহমান বলেন, ‘ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়িতে আমার কী লাভ? গণতন্ত্র এল কি এল না, তাতে আমার কী? আমার ছেলের তো প্রাণ বাঁচে না।’
রোববার রাতে আহত সাফিরের মা শারমিন আহমেদ বলেন, ‘এ কোন রাজনীতি? এভাবে আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা কেন হবে?’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সব শিশুর বাবা-মায়েরাই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরা। রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের ব্যবহারও করা হয়। ২০১৩ সালে সহিংসতায় শিশু-কিশোরদের ব্যবহার বেশি দেখা গেছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০১৩ সালের চিত্রই আবার দেখতে পাচ্ছি। একে তো হরতাল-অবরোধে শিশুদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে আছে, এখন আবার রাজনৈতিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছে তারা। কোনো সভ্য দেশে শিশুদের ওপর এভাবে হামলা হতে পারে না। আর যে শিশু আহত হচ্ছে বা ঘটনা দেখছে, সে মানসিকভাবেও আঘাত পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, আপনারা শিশুদের বিষয়ে অন্তত সচেতন হোন।’
এই অবরোধের প্রথম দিন থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রাবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলায় মায়ের কোলেই এক শিশু জীবন্ত দগ্ধ হয়। বাসটিতে থাকা ১৮ বছরের জেসমিন আক্তারও দগ্ধ হয়ে মারা যায়। আহত হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা ১১ বছরের শিশু ফারজানা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শেখটোলায় ১৫ জানুয়ারি অবরোধকারীরা স্কুলছাত্র রাজন আলীকে পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন রাতে সে মারা যায়। ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা যান ১৮ বছরের তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বাসচালকের সহকারী ছিলেন। বরিশালের উজিরপুরে রোববার ভোরে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়ে মারা যায় চালকের সহকারী সোহাগ বিশ্বাস (১৭)। একই দিন পুরান ঢাকায় ককটেল হামলায় আহত হয় শিশু রহিমা (৮)।
এর আগে ৫ জানুয়ারি ফেনী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার ও মিনহাজুল প্রাইভেট পড়ে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে অবরোধ-সমর্থকদের ককটেল হামলায় আহত হয়। মিনহাজুলকে ঢাকায় ও শাহরিয়ারকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডান চোখে আর কোনো দিন দেখবে না শাহরিয়ার। আঘাত লেগেছে মিনহাজুলের চোখেও। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে দুজনেরই। আকস্মিক এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন শাহরিয়ারের মা রোজি রুশনা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না। তবে কেন আমাদের এমন হবে?’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিনহাজের মা জেসমিন রহমান বলেন, ‘ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়িতে আমার কী লাভ? গণতন্ত্র এল কি এল না, তাতে আমার কী? আমার ছেলের তো প্রাণ বাঁচে না।’
রোববার রাতে আহত সাফিরের মা শারমিন আহমেদ বলেন, ‘এ কোন রাজনীতি? এভাবে আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা কেন হবে?’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সব শিশুর বাবা-মায়েরাই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরা। রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের ব্যবহারও করা হয়। ২০১৩ সালে সহিংসতায় শিশু-কিশোরদের ব্যবহার বেশি দেখা গেছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০১৩ সালের চিত্রই আবার দেখতে পাচ্ছি। একে তো হরতাল-অবরোধে শিশুদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে আছে, এখন আবার রাজনৈতিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছে তারা। কোনো সভ্য দেশে শিশুদের ওপর এভাবে হামলা হতে পারে না। আর যে শিশু আহত হচ্ছে বা ঘটনা দেখছে, সে মানসিকভাবেও আঘাত পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, আপনারা শিশুদের বিষয়ে অন্তত সচেতন হোন।’
No comments