হংকংয়ে চাহিদা নারীকর্মীর গলার কাঁটা ডাটাবেজ by রোকনুজ্জামান পিয়াস
চাহিদা আছে। কিন্তু চাহিদামতো নারীকর্মী যাচ্ছে না হংকংয়ে। এক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের তৈরি করা ডাটাবেজ। এ ডাটাবেজের কারণেই সম্ভাবনাময় এ দেশটিতে আশানুরূপ নারীকর্মী পাঠানো যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ সুযোগ নিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন এ দেশটিতে ইতিমধ্যে বেশকিছু নারীকর্মী গেছেন। সেখানে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০০ জন কর্মীর চাহিদা রয়েছে বলেও জানিয়েছে হংকং হোম সার্ভিস এসোসিয়েশন (এইচকেএইচএসএ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ৬শ’র মতো মহিলাকর্মী গেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মহিলাকর্মী সংগ্রহ করে সেদেশে গৃহকর্মীর কাজ দেয়। এক্ষেত্রে তারা তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করে। অনেক আগে থেকে ওইসব দেশ থেকে কর্মী সংগ্রহ করলেও বাংলাদেশ তাদের জন্য একেবারেই নতুন। ২০০৩ সাল থেকে এইচকেএইচএসকে বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তবে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে এ বছরের জুন মাস থেকে। বাংলাদেশে ২৯টি এজেন্সির মাধ্যমে তারা কর্মী সংগ্রহ করছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বাংলাদেশ) ই চোই এসব কথা জানিয়েছেন। তবে মহিলাদের আলাদা ডাটাবেজ না থাকায় বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিতে পারছেন না তারা। এদিকে ডাটাবেজে কি পরিমাণ নারী কর্মী বর্তমান আছে অথবা আদৌ আছে কিনা তা জানা যায়নি। তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুধুমাত্র মহিলাকর্মীদের জন্য আলাদা একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের (তথ্যপ্রযুক্তি, গবেষণা ও পরিকল্পনা) পরিচালক মো. হাসান মারুফ। গত ১৮ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অভিবাসী মেলার আয়োজন করে। এ মেলায় স্টল বসায় হংকং হোম সার্ভিস এসোসিয়েশন নামে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ই চোই হংকংয়ে মহিলাকর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হংকংয়ের বাসিন্দাদের বেশির ভাগ দম্পতিই (স্বামী-স্ত্রী উভয়) ঘরের বাইরে চাকরি করেন। এ জন্য তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য গৃহকর্মী দরকার হয়। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান সেদেশে নারীকর্মী নিতে গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে কোন সার্ভিস চার্জ নেয় না। এ চার্জ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে তারা পেয়ে থাকেন। এখানে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করেন তারাই এদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকেন। তিনি একটি বেতন কাঠামোর কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, ১ বছরের চুক্তিতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাওয়া কর্মীদের বেতন ধরা হয় বাৎসরিক ৪ লাখ ৯২ হাজার। এ সময়ের মধ্যে তারা সপ্তাহে একদিন, অতিরিক্ত ৭ দিন এবং ১২টি শনিবারে ছুটি ভোগ করবেন। তাছাড়া, সেদেশের আইনকানুনও কর্মীবান্ধব। কোন কর্মী নির্যাতিত হলে হংকং সরকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিচার করে থাকে। সেদেশে কোন কর্মী নির্যাতিত হলে ইমেজ সঙ্কট হিসেবে দেখে। ফলে নির্যাতিতদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেয়। তাছাড়া, সেখানে এনজিও সংস্থাগুলোও বেশ সোচ্চার। তবে তিনি বাংলাদেশ থেকে কর্মী সংগ্রহে বেশকিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বলেন, বাংলাদেশে নিজেরা বাছাই করে কোন কর্মী নেয়ার সুযোগ নেই। সব কর্মীই সরকারের তৈরি করা ডাটাবেজের মধ্য থেকে নিতে হয়। ওই ডাটাবেজে নারী কর্মীর স্বল্পতা রয়েছে। তাছাড়া, ডাটাবেজে যেসব কর্মী অন্তর্ভুক্ত, তারা অধিকাংশই হংকংয়ে কাজ করার মতো দক্ষ নয়। ফলে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তারা এদেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত কর্মী সেদেশে নিয়োগ দিতে পারছেন না। ই চোই বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যদি ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা চালানো যেতো তাহলে মানুষ জানতে পারতো। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া গেলে বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর মধ্য থেকে হংকংয়ে কাজ করার উপযোগী কর্মী বাছাই করা সম্ভব হতো। কিন্তু যেহেতু নিয়ম নেই এবং ডাটাবেজের বাইরে থেকে কর্মী নেয়া যায় না তাই প্রচারণাও চালানো যাচ্ছে না। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও তিনি বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সরকার শুধুমাত্র একটি বিল্ডিং-ই দিয়েছে কিন্তু প্রশিক্ষণে যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট এসোসিয়েশন নিজেরাই বহন করছে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নারী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম শিথিল করা দরকার। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ৩ বছর আগে যখন ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করেছিল তখনও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশেও এ সমস্যা থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ থেকে আরও ৩২ হাজার শ্রমিক নেয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে হংকংয়ে ১৫ জন নারী কর্মী গেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৫-৩০ জন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এব্যাপারে বিএমইটি’র সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আলী মর্তুজা বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সি যখন চাহিদা অনুযায়ী কর্মী চাই তখন ডাটাবেজ থেকে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (তথ্যপ্রযুক্তি, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. হাসান মারুফ বলেন, গৃহকর্মীর জন্য আলাদা ডাটাবেজ হয় না। ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত নারীকর্মীর সংখ্যা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে শেষ হলেও সমস্যা নেই। বিএমইটি’র সহযোগিতায় বিভিন্ন সময় স্থানীয়ভাবে জব ফেয়ার হয়। সেখানে অঞ্চলভেদে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৩ সালে যে ডাটাবেজ তৈরি করা হয় সেখানে নারীদের আলাদা করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, আগামী জানুয়ারিতে শুধুমাত্র নারীদের জন্য একটি ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এ সমস্যা থাকবে না বলেও তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, কোন রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে কর্মী পাঠাতে চাইলে ২০১৩ সালে তৈরি করা ওই ডাটাবেজ থেকে পাঠাতে হবে। এর বাইরে থেকে কোন কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই। ওই ডাটাবেজে নারীকর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আলাদা করা হয়নি।
উল্লেখ্য, কোন রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে কর্মী পাঠাতে চাইলে ২০১৩ সালে তৈরি করা ওই ডাটাবেজ থেকে পাঠাতে হবে। এর বাইরে থেকে কোন কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই। ওই ডাটাবেজে নারীকর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আলাদা করা হয়নি।
No comments