গোলাপের কাঁটা ‘অবরোধ’ by আব্দুল কুদ্দুস ও এস এম হানিফ
(চকরিয়ার
পশ্চিম বরইতলী গ্রামের ফুলচাষি আবুল কালাম। এক একর জায়গায় গোলাপের বাগান
গড়ে তুলেছেন তিনি। বিক্রির জন্য প্রতিদিন খাঁচি ভরে গোলাপ সংগ্রহ করেন।
কিন্তু ক্রেতার দেখা মেলে না। রোববার তোলা ছবি l প্রথম আলো) চারপাশের
আগুন, বারুদ, আর্তনাদের মাঝেও কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী বেশ ব্যতিক্রম।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে বরইতলী ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে এখন
গোলাপের সুবাস। ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে, সুমিষ্ট ঘ্রাণ নিতে আশপাশের
এলাকার মানুষ ছুটে আসছেন এখানে। সৌন্দর্যে, সুমিষ্ট ঘ্রাণে দর্শনার্থীরা
ব্যাকুল হচ্ছেন ঠিকই। তবে গোলাপ ‘হাসি’ ফোটাতে পারেনি বাগানমালিক, চাষি,
মালি, শ্রমিকের মুখে। টানা অবরোধে বাগানের ফুল বাগানেই ঝরে পড়ছে। তাঁদের
ভাষায় গোলাপের কাঁটা হয়ে উঠেছে ‘অবরোধ’। চাষিরা জানান, ঋণের টাকায়
গোলাপবাগান করে এখন তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অথচ এই বাগানচাষিদের
অধিকাংশই কয়েক বছর আগেও আগে তামাক চাষ করতেন। বরইতলী গোলাপবাগান মালিক
সমিতির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের ১১৫টি বাগানের ৮ লাখ ৪০ হাজার
গাছে ২৫ লাখের বেশি গোলাপ ফুটেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকলে সব
ফুল ঝরে পড়বে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বরইতলী গ্রামের
আবুল কালামের বাগানটি এক একরের। তাঁর বাগানে সাত হাজার গাছ। এর মধ্যে ৫
হাজার গাছে ২০ হাজারের বেশি গোলাপ ফুটেছে। আবুল কালাম জানান, গত ডিসেম্বর
মাসে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে চার টাকায়। এখন মাত্র ৫০ পয়সা। তা-ও
ক্রেতা নেই। প্রতিদিন বাগান থেকে গড়ে দেড় হাজার ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে।
অবরোধ চলতে থাকলে পুরো বাগানের সব ফুল বাগানেই মরে শেষ হয়ে যাবে। কালামের
বাগানের পাশের বাগানটি রবিউল হোসেনের। এক কানি জমির ওপর গড়ে তোলা এই
বাগানে সাড়ে তিন হাজার গোলাপগাছ রয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম শহরের
চেরাগী পাহাড়ে ফুল সরবরাহ করে পরিবহন খরচও তোলা যাচ্ছে না। গোলাপ নিয়ে
বরইতলীর মানুষ বিপাকে পড়েছেন। শুধু বাগানের মালিকেরাই নন, ভালো নেই
বাগানশ্রমিকেরাও। পশ্চিম বরইতলীর গৃহবধূ সলিমা বেগম জানান, গাছ থেকে গোলাপ
কেটে দিনে ২০০ টাকা মজুরি পেতেন। ১৫ দিন ধরে গোলাপ কাটা বন্ধ রয়েছে।
বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন দেড় হাজার পুরুষ। তাঁরা এখন বেকার।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ জানান, বরইতলী ইউনিয়নের ১২০
একর জমিতে গোলাপের বাগান গড়ে তুলেছেন গ্রামের মানুষ। অবরোধে ফুলের
চাহিদা কম থাকায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাগানশ্রমিক জহির আহমদ জানান,
ডিসেম্বর থেকে মার্চ ফুলের ব্যবসা বেশি হয়। গোলাপের বাম্পার ফলন হলেও টানা
অবরোধে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন
চৌধুরী বলেন, তামাক চাষ ছেড়ে ইউনিয়নের মানুষ ফুল চাষে এসেছেন। এলাকার ৮০
ভাগ মানুষ ফুলের ব্যবসা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁরা
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
No comments