ওবামার সফর সামনে রেখে ভারতে ৭ স্তরের নিরাপত্তা বলয়
২৬শে
জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ভারত সফরে আসছেন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ সফরকে সামনে রেখে রাজধানী নয়া দিল্লিকে
নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থাপন করা হবে
নজিরবিহীন সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয়। রীতিমতো দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা
হবে নয়া দিল্লিকে। এরপরও মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির
রাজপথের ওপর ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণার আহ্বান জানায় ভারতকে। কিন্তু সে অনুরোধ
প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। ভারতের
প্রজাতন্ত্র দিবসে কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম সফর হতে যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনী সিক্রেট সার্ভিস ইতিমধ্যে ভারতীয়
নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছে। মার্কিন
কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। প্রতিবার প্রধান
অতিথি সচারচর অনুষ্ঠানে যান ভারতীয় প্রেসিডেন্টের গাড়িতে। মার্কিন
কর্তৃপক্ষ তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা দুটি বিকল্প প্রস্তাব
করেছে। একটি হলো প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি হয় ওবামার গাড়িতে করে
অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন অথবা উভয় প্রেসিডেন্ট পৃথক গাড়িতে থাকবেন। নয়া দিল্লির
রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড প্রত্যক্ষ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামা, ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদিসহ অন্য ভিভিআইপিরা। রাজপথ প্রাঙ্গণের চারপাশে স্থাপন করা হবে সাত
স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সুনির্দিষ্টভাবে ওই এলাকার আকাশসীমা পর্যবেক্ষণে
স্থাপন করা হবে রাডার। দিল্লির প্রতিটি এলাকার নজরদারি ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ
করা হবে মাল্টি-এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরকে
সামনে রেখে পুরো রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তিন দিনের
ভারত সফরে ওবামা আসবেন ২৫শে জানুয়ারি। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তারা
ইতিমধ্যে দিল্লি ও আগ্রায় পৌঁছেছেন। ওবামা যে রাস্তাগুলো ব্যবহার করবেন
সেগুলো ও রাজপথ এলাকায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছেন তারা। প্যারেড
ভেন্যুর চারপাশে সাত স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রথম স্তরে থাকবেন বিশেষ
বাহিনী স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ ও মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো রাজধানীতে ডেকে পাঠিয়েছে তাদের
বিশেষ বাহিনি ‘ক্যাট’ (কনসিলড অ্যান্টি-টেরোরিস্ট) স্কোয়াডকে। হোটেল, গেস্ট
হাউজ এবং সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনাকারী দলের মধ্যে
তারা থাকবেন। ওবামা অবস্থান করবেন আইটিসি মৌর্য হোটেলে। সেখানকার নিরাপত্তা
ব্যবস্থা ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সিক্রেট সার্ভিস। মার্কিন
কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে স্থাপন করা হয়েছে মাল্টি ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ
কক্ষ। এছাড়া দিল্লি জুড়ে ১৫ হাজার সিসিটিভি স্পাপন করা হয়েছে। এসব
সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণে যেসব নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে সেখানেও পর্যবেক্ষণ
দলে রয়েছে মার্কিন নিরাপত্তা সদস্যরা। এদিকে ৮০ হাজার সদস্যের দিল্লি
পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০ হাজার আধা সামরিক সেনা এবং সশস্ত্র পুলিশ
বাহিনীকে ডাকা হয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানা, রাজস্থান থেকে। আনা হয়েছে
ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটালিয়নকেও। আকাশপথ নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ
স্থানগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে বিমান বিধ্বংসী আগ্নেয়াস্ত্র। মার্কিন
নিরাপত্তা সদস্যদের অনুরোধে রাজপথ এলাকার নিকটবর্তী মেট্রো আন্ডারগ্রাউন্ড
এবং কার্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া হবে ৭২ ঘণ্টা আগে। সুবিধাজনক
স্থানগুলোতে থাকবে স্নাইপার। আর প্যারেড এলাকার আকাশ পথের নিরাপত্তার
দায়িত্বে থাকবে ভারতীয় এয়ার ফোর্স। ভারতীয় প্রেসিডেন্টের আতিথেয়তায়
অনুষ্ঠেয় ঘরোয়া অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকা থেকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। আগাম
নিরাপত্তা মহড়ার প্রতিটিতে অংশ নেবে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মীরা। ভারতীয় ও
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ওবামার নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত সচেষ্ট,
কেননা তিনি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড প্রত্যক্ষ করবেন রাজপথের উন্মুক্ত
মঞ্চ থেকে। সেখানে তিনি থাকবেন দু’ ঘণ্টারও বেশি। ভিভিআইপি সীমানার চারপাশে
বুলেটপ্রুফ শিল্ড স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজপথে যাওয়ার পথগুলো ইতিমধ্যে
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজপথের সঙ্গে সংযোগ আছে কিছু সড়ক, যেমন রাফিমর্গ,
জনপথ, মান সিং রোড সাধারণদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে ২৬শে জানুয়ারির এক বা
দু’দিন আগে। মোটকথা, রাজধানীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য
সব ব্যবস্থাই নিয়েছে ভারত সরকার। ঐতিহ্যগতভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান
অতিথি হিসেবে প্রতিবারই কোন না কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানায় ভারত।
গত বছরের প্রধান অতিথি ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ওবামা এর আগে ২০১০ সালে ভারত সফর করেছিলেন। তিনি হতে যাচ্ছেন
প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দু’বার ভারত সফর
করবেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর এটাই হতে
যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম ভারত সফর।
No comments