রোহিঙ্গা: সংকট বাড়ছে, কমছে শরণার্থীদের জন্য অর্থ by আকবর হোসেন
রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে যাওয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবিক ত্রাণ
কর্মসূচী সংকুচিত হয়ে আসতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে কয়েকটি
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে.
আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য একদিকে বৈদেশিক সাহায্য
কমছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নিজেদের তহবিল থেকে প্রায় আড়াই
হাজার কোটি টাকা শরণার্থীদের জন্য খরচ করেছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার শহরজুড়ে গত দুই বছরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস গড়ে উঠেছে।
এদের সবাই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করছে।
বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় সবগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার অফিস রয়েছে এই শহরে।
সাথে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অফিস।
শিবিরের পাশে অপেক্ষমান দুই শরণার্থী |
বাংলাদেশ সরকারের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৫০টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করছে।
দুই বছর আগে, অর্থাৎ রোহিঙ্গা সংকট শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক সাহায্য যেভাবে এসেছে এখন সেটি কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজারে কর্মরত ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মারিয়া ল্যারিও
বিবিসি বাংলাকে বলেন, "দাতাদের কাছ থেকে আগ্রহ কমে যাবার বিষয়টি লক্ষ্য
করছি। এজন্য আমরা মানবিক কূটনীতি চালিয়ে যাব যাতে প্রয়োজনীয় সাহায্য
পাওয়া যায়।"
আইএফআরসি'র এই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে ভুলে না যায় সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
রোহিঙ্গা সংকট নিকট ভবিষ্যতে শেষ হবে না - একথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, এটি মোকাবেলার জন্য আরো অর্থ প্রয়োজন।
দু'হাজার
উনিশ সালের জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের
জন্য ৯২০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।
এই সাহায্যের
বড় অংশ খরচ হবে রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য। কিন্তু এই অর্থ পাওয়া যাবে
কিনা সেটি নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ এর আগের বছরেও প্রতিশ্রুত
সাহায্যের সবটুকু পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত যতটা মানবিক সহায়তা আসছে সেটির ভিত্তিতে তার কাজ করছেন। তবে প্রয়োজন আরো বেশি।
শরণার্থীদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে |
অ্যাকশন
এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে
রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব সেভাবে থাকছে না। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো
বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পায়। সে সব দেশের কাছে
রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব কমে গেলে অর্থ সহায়তাও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
গত দুই বছরে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা
খরচ করেছে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার জন্য। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থায়ন
কমে গেলে বাংলাদেশ সরকারকে আরো বেশি টাকা খরচ করতে হবে রোহিঙ্গাদের জন্য।
সম্ভাব্য এ পরিস্থিতির আশংকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন।
তিনি
বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রথম দিকে সাহায্য নিয়ে যেভাবে তারা অগ্রসর
হয়েছিলেন, সে সাহায্যের মাত্রা কমে যাচ্ছে। আগামীতে আরো কমবে। আমরা
ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছি। এখন তো
তারা খুব সুখে আছে। কিন্তু সুখে খুব বেশি দিন থাকবেন না।"
বেসরকারি
সংস্থাগুলো মনে করছে, রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
দৃষ্টি কমে গেলে সেটি ত্রাণ কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরণের পরিস্থিতি
রোহিঙ্গাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির ওপর।
রোহিঙ্গা শিবিরে মার্কিন চলচ্চিত্র তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ এখন কমছে। |
No comments