প্রমাদ গুনছে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোও by সৌতিক বিশ্বাস
ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের সমর্থক
হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি কিনা বিশ্বাস করেন রাজ্যগুলোকে আরও বেশি স্বাধীনতা
দেওয়া উচিত। কিন্তু ৫ আগস্ট সোমবার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা
বাতিল ও ওই রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিভক্ত করার পদক্ষেপকে
অনেকেই দেখছেন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর বড় আঘাত হিসেবে। নতুন
দুই ইউনিয়ন টেরিটোরি (জম্মু-কাশ্মির, ও লাদাখ) এখন থেকে সরাসরি দিল্লি থেকে
শাসিত হবে। রাজ্যের তুলনায় ইউনিয়ন টেরিটোরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে
অনেক কম স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক ও
তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যাপক সুমন্ত বোস এই ইউনিয়ন টেরিটোরিকে আখ্যা দিয়েছেন
‘দিল্লির মহিমান্বিত পৌরসভা’ হিসেবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে কার্যত একে ভারতের অন্যান্য অংশের সমতুল্য করে মোদি সরকার ভারতের ‘সুক্ষ্ম যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্য তছনছ করে দিয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন এক পর্যবেক্ষক। বিভিন্ন দিক দিয়েই অবশ্য ৩৭০ ধারা (যার মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে) ছিল মূলত প্রতীকী। কয়েক বছর ধরে বহু প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমানের মাধ্যমে এই রাজ্যের স্বায়ত্বশাসনের অনেকখানি হ্রাস করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটি হলো এই মর্যাদার অন্তর্নিহিত চেতনা।
এই বিশেষ মর্যাদা থাকার তাৎপর্য ছিলো এই, যেসব অঞ্চলের জনগণ মূলধারার সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করে তাদেরকেও আত্মীকৃত করার মতো যথেষ্ট উদার ছিল ভারতের সংবিধান।
ভারতের এই যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ অনেক সংগ্রামের ফসল। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রথা চালু থাকলেও, অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর অগ্রসর ও সাংস্কৃতিকভাবে অধিকতর সমজাতীয় দেশগুলোর মতো নয় ভারত। ভারতের মতো সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও দরিদ্রতর দেশে ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে ঐক্যমতে আসা সহজ ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত, ভারতের সংবিধানে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য বিধানসভার মধ্যে ক্ষমতা স্পষ্টভাবে ভাগ করে দেওয়া আছে। দিল্লি-ভিত্তিক থিংকট্যাং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর প্রধান নির্বাহী ইয়ামিনি আইয়ার বলেন, ‘একক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সুক্ষ্ম ভারসাম্য নিশ্চিত করার চেষ্টা ছিল সংবিধানে।’ কিন্তু ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের অকৃত্রিমতা নিয়ে সবসময়ই সংশয় ছিল।
যেমন, রাজ্য গভর্নরদের সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়ে থাকে শাসক কেন্দ্রীয় সরকার। কোনো রাজ্যে ‘সাংবিধানিক অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হলে এই গভর্নররা কেন্দ্রের সরাসরি শাসন সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর গভর্নর কোনো নেতিবাচক প্রতিবেদন দিলে, তা ওই রাজ্যে প্রেসিডেন্টের শাসন বা দিল্লির সরাসরি শাসনের ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে এবং রাজ্য সরকার খারিজ হয়ে যেতে পারে। ১৯৫১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতে এই কেন্দ্রের শাসন জারি হয়েছে ৮৮ বার।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ব্যতিত ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ ও রাজ্য কেন্দ্রশাসিত থাকা অবস্থায় তা বাস্তবায়ন করাটা ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনের ইতিহাসে কালিমা হয়ে থাকবে।
ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের সাবেক ভিজিটিং স্কলার ও ‘ডেমিস্টিফায়িং কাশ্মীর’ বইয়ের লেখিকা নবনীতা চাধা বেহেরা বলেন, ‘এই পদক্ষেপের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো যে, আমরা ক্রমেই একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি ও গণতান্ত্রিক নিয়মনীতির বিলোপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করছে। মানুষ এই পদক্ষেপ নিয়ে এত আনন্দিত যে, তারা এখানে বড় ইস্যুটি দেখতে পাচ্ছে বলে মনে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি কিন্তু যেকোনো অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রেই হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার যেকোনো রাজ্য সরকারকে খারিজ করে দিতে পারে। পরামর্শ নেওয়ার বিধানের তোয়াক্কা না করে কোনো রাজ্যকে বিভক্ত করে দিতে পারে বা তার মর্যাদার অবনমন ঘটাতে পারে। এটাও উদ্বেগের বিষয় যে, এই পদক্ষেপের বিপরীতে তেমন প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও আঞ্চলিক দলগুলো হয় চুপ করে আছে, অথবা খুব মৃদু কণ্ঠে প্রতিবাদ করছে।’
ইয়ামিনি আইয়ার মনে করেন, ভারতীয় সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন দেশের গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজন আছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের চেয়ে আজ এর ভক্ত অনেক কম। এটি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। তবে ৩৭০ ধারা বিলোপের পক্ষের লোকজন বলেন যে, সংঘাত উপদ্রুত কাশ্মীরের ঘটনা ব্যতিক্রম। দেশের পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত চিরশত্রু পাকিস্তানের পাশে অবস্থিত বিদ্রোহ-আক্রান্ত ও সামরিকায়িত এই অঞ্চলে পরামর্শ নেওয়ার পথে হাঁটলে কিছুই হতো না। এছাড়া, মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বহু বছর ধরেই ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কথা বলে আসছে। তাদের বক্তব্য, ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিকে তুষ্ট রাখার নমুনাই এই ৩৭০ ধারা।
তবে ভারতের আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী আবেদন সফলভাবে মতানৈক্যের ভিত্তিতে নিবারন করতে পারার ইতিহাস রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, ২৫ বছর আগেও যে নেতা স্বাধীনতার জন্য গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছেন, সেই নেতাই ওই রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এমনটা আর কোথায় হয়েছে? ১৯৮৬ সালে ঠিক সেটাই হয়েছে। ওই বছর উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম রাজ্যে বিদ্রোহী নেতা লালদেঙ্গা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করেন। ক্ষমতার এই ভাগাভাগি ও একে অংশগ্রহণমূলক করা ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। দেশকে আরও স্থিতিশীল করেছে।
অতীতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এটি সত্য যে সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে রাজ্যের চেয়ে কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতা অর্পিত করা হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, রাজ্যগুলো কেন্দ্রের আনুষঙ্গিক কোনো অংশমাত্র। আদালত আরও বলেছে, নিজ নিজ ক্ষমতার অধিক্ষেত্রে রাজ্যগুলো সর্বেসর্বা। তাদের হাতে ন্যস্ত ক্ষমতা কোনোভাবেই বিকৃত করতে পারবে না কেন্দ্র।
সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের অবস্থান নিয়ে অতীতে দ্বার্থ্যহীন ভূমিকা নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এবার কাশ্মীর পদক্ষেপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেসব আইনি চ্যালেঞ্জ দায়ের করা হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে সামাল দেবে, তা দেখার বিষয়। ড. বেহেরা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতের স্বাধীনতা কতটুকু আছে তার বোঝাপড়া হয়ে যাবে।’
(সৌতিক বিশ্বাস একজন সাংবাদিক ও কলামিস্ট। তার এই নিবন্ধ বিবিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।)
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে কার্যত একে ভারতের অন্যান্য অংশের সমতুল্য করে মোদি সরকার ভারতের ‘সুক্ষ্ম যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্য তছনছ করে দিয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন এক পর্যবেক্ষক। বিভিন্ন দিক দিয়েই অবশ্য ৩৭০ ধারা (যার মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে) ছিল মূলত প্রতীকী। কয়েক বছর ধরে বহু প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমানের মাধ্যমে এই রাজ্যের স্বায়ত্বশাসনের অনেকখানি হ্রাস করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটি হলো এই মর্যাদার অন্তর্নিহিত চেতনা।
এই বিশেষ মর্যাদা থাকার তাৎপর্য ছিলো এই, যেসব অঞ্চলের জনগণ মূলধারার সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করে তাদেরকেও আত্মীকৃত করার মতো যথেষ্ট উদার ছিল ভারতের সংবিধান।
ভারতের এই যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ অনেক সংগ্রামের ফসল। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রথা চালু থাকলেও, অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর অগ্রসর ও সাংস্কৃতিকভাবে অধিকতর সমজাতীয় দেশগুলোর মতো নয় ভারত। ভারতের মতো সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও দরিদ্রতর দেশে ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে ঐক্যমতে আসা সহজ ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত, ভারতের সংবিধানে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য বিধানসভার মধ্যে ক্ষমতা স্পষ্টভাবে ভাগ করে দেওয়া আছে। দিল্লি-ভিত্তিক থিংকট্যাং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর প্রধান নির্বাহী ইয়ামিনি আইয়ার বলেন, ‘একক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সুক্ষ্ম ভারসাম্য নিশ্চিত করার চেষ্টা ছিল সংবিধানে।’ কিন্তু ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের অকৃত্রিমতা নিয়ে সবসময়ই সংশয় ছিল।
যেমন, রাজ্য গভর্নরদের সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়ে থাকে শাসক কেন্দ্রীয় সরকার। কোনো রাজ্যে ‘সাংবিধানিক অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হলে এই গভর্নররা কেন্দ্রের সরাসরি শাসন সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর গভর্নর কোনো নেতিবাচক প্রতিবেদন দিলে, তা ওই রাজ্যে প্রেসিডেন্টের শাসন বা দিল্লির সরাসরি শাসনের ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে এবং রাজ্য সরকার খারিজ হয়ে যেতে পারে। ১৯৫১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতে এই কেন্দ্রের শাসন জারি হয়েছে ৮৮ বার।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ব্যতিত ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ ও রাজ্য কেন্দ্রশাসিত থাকা অবস্থায় তা বাস্তবায়ন করাটা ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনের ইতিহাসে কালিমা হয়ে থাকবে।
ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের সাবেক ভিজিটিং স্কলার ও ‘ডেমিস্টিফায়িং কাশ্মীর’ বইয়ের লেখিকা নবনীতা চাধা বেহেরা বলেন, ‘এই পদক্ষেপের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো যে, আমরা ক্রমেই একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি ও গণতান্ত্রিক নিয়মনীতির বিলোপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করছে। মানুষ এই পদক্ষেপ নিয়ে এত আনন্দিত যে, তারা এখানে বড় ইস্যুটি দেখতে পাচ্ছে বলে মনে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি কিন্তু যেকোনো অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রেই হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার যেকোনো রাজ্য সরকারকে খারিজ করে দিতে পারে। পরামর্শ নেওয়ার বিধানের তোয়াক্কা না করে কোনো রাজ্যকে বিভক্ত করে দিতে পারে বা তার মর্যাদার অবনমন ঘটাতে পারে। এটাও উদ্বেগের বিষয় যে, এই পদক্ষেপের বিপরীতে তেমন প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও আঞ্চলিক দলগুলো হয় চুপ করে আছে, অথবা খুব মৃদু কণ্ঠে প্রতিবাদ করছে।’
ইয়ামিনি আইয়ার মনে করেন, ভারতীয় সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন দেশের গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজন আছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের চেয়ে আজ এর ভক্ত অনেক কম। এটি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। তবে ৩৭০ ধারা বিলোপের পক্ষের লোকজন বলেন যে, সংঘাত উপদ্রুত কাশ্মীরের ঘটনা ব্যতিক্রম। দেশের পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত চিরশত্রু পাকিস্তানের পাশে অবস্থিত বিদ্রোহ-আক্রান্ত ও সামরিকায়িত এই অঞ্চলে পরামর্শ নেওয়ার পথে হাঁটলে কিছুই হতো না। এছাড়া, মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বহু বছর ধরেই ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কথা বলে আসছে। তাদের বক্তব্য, ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিকে তুষ্ট রাখার নমুনাই এই ৩৭০ ধারা।
তবে ভারতের আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী আবেদন সফলভাবে মতানৈক্যের ভিত্তিতে নিবারন করতে পারার ইতিহাস রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, ২৫ বছর আগেও যে নেতা স্বাধীনতার জন্য গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছেন, সেই নেতাই ওই রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এমনটা আর কোথায় হয়েছে? ১৯৮৬ সালে ঠিক সেটাই হয়েছে। ওই বছর উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম রাজ্যে বিদ্রোহী নেতা লালদেঙ্গা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করেন। ক্ষমতার এই ভাগাভাগি ও একে অংশগ্রহণমূলক করা ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। দেশকে আরও স্থিতিশীল করেছে।
অতীতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এটি সত্য যে সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে রাজ্যের চেয়ে কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতা অর্পিত করা হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, রাজ্যগুলো কেন্দ্রের আনুষঙ্গিক কোনো অংশমাত্র। আদালত আরও বলেছে, নিজ নিজ ক্ষমতার অধিক্ষেত্রে রাজ্যগুলো সর্বেসর্বা। তাদের হাতে ন্যস্ত ক্ষমতা কোনোভাবেই বিকৃত করতে পারবে না কেন্দ্র।
সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের অবস্থান নিয়ে অতীতে দ্বার্থ্যহীন ভূমিকা নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এবার কাশ্মীর পদক্ষেপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেসব আইনি চ্যালেঞ্জ দায়ের করা হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে সামাল দেবে, তা দেখার বিষয়। ড. বেহেরা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতের স্বাধীনতা কতটুকু আছে তার বোঝাপড়া হয়ে যাবে।’
(সৌতিক বিশ্বাস একজন সাংবাদিক ও কলামিস্ট। তার এই নিবন্ধ বিবিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।)
No comments