অবরোধ সত্ত্বেও কাতার ঘুরে দাঁড়িয়েছে by মতিউর রহমান চৌধুরী
পারস্য
উপসাগরের ক্ষুদ্রকায় দেশ কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজন করে তামাম দুনিয়ায় এখন
আলোচনায়। অর্থনীতি শক্তিশালী। মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮৬ ডলার।
প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতে পৃথিবীর তৃতীয় দেশের তালিকায়। রপ্তানিতে দ্বিতীয়।
কাতার এয়ারওয়েজ গত পাঁচ বছর একটানা ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছে। টেলিভিশন
নেটওয়ার্ক ‘আল জাজিরা’ আরেকটি প্রাণশক্তি।
ইতিমধ্যেই এই টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে। এই যখন অবস্থা তখনই দুই বছর আগে চারটি মুসলিম দেশ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অবরোধ দিয়ে বসে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন প্রধানত তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত করে কাতারকে। প্রধান অভিযোগ কাতার সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। কাতার তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে। বলে, এই অভিযোগের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথাও বলা হয় চার দেশের পক্ষ থেকে। আল জাজিরা বন্ধও ছিল অন্যতম দাবি। সব মিলিয়ে দাবি ছিল ১৩টি।
এর পরপরই পারস্য উপসাগরের পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। টান টান উত্তেজনার মধ্যে চার দেশের কূটনীতিকরা কাতার ছেড়ে যান। কাতারও তার কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তখন বিশ্ব অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই বলেছিলেন কাতারের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। কারণ, আমদানিনির্ভর একটি দেশ কাতার। প্রায় ৬০ ভাগ পণ্য আমদানি হতো বয়কটকারী চারটি দেশ থেকে। এগিয়ে আসে তুরস্ক ও ইরান। দুধ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড সংকট সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার গরু আমদানি করে কাতার। বছর খানেকের মধ্যেই দুধ উৎপাদনে বড় সাফল্য দেখায়। এখন দুধে সংকট তেমন নেই। সবজির চাষ শুরু হয়। হাঁস-মুরগির খামার রাতারাতি চালু হয়ে যায়।
৩০ বছর ধরে কাতারে রয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আবদুল মতিন পাটোয়ারী। তার ভাষ্য, শুরুতে সংশয় ছিল কাতার কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে। কাতারের দক্ষ নেতৃত্ব জনগণকে কিছুই বুঝতে দেয়নি। এখন অনেক কিছুতেই তারা স্বাবলম্বী হতে চলেছে। গত শুক্রবার কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তেলের দাম স্থিতিশীল থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে গত বছরের তুলনায়। অর্থনীতির সূচকগুলো উপরের দিকে। রিজার্ভ বেড়েছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। শুরুতে অবশ্য তারল্য সংকট রুখতে ব্যাংককে ৪০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়। এখন বলা হচ্ছে, ২০২০ সনে জিডিপি আরো ২.৮ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। বিদেশি বিনিয়োগের হতাশা কেটেছে।
গত দুই বছরে বিরোধ নিরসনে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বরং, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বৈষম্যের অভিযোগ এনে মামলা করেছে কাতার। গত মে মাসের শেষের দিকে একাধিক সম্মেলনে যোগ দিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খালিফা আল থানি সৌদি আরব সফর করেন। সম্মেলনের একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর নিয়েও ভিন্নমত পোষণ করে কাতার। তখন দোহার তরফে বলা হয়, বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে। অবরোধ বহাল রেখে ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল হয় কীভাবে?
সংকটের শুরু হয় ২০১৭ সনের ২৩শে মে। কাতারের রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে রহস্যজনকভাবে অনুপ্রবেশ করে হ্যাকাররা। তারা সেখানে কাতারের আমীরের ভুয়া উদ্ধৃতি সহকারে একটি খবর প্রকাশ করে। আমীরের ভুয়া ওই মন্তব্যে ইরানের প্রশংসা করা হয়। সমালোচনা করা হয় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। রিয়াদে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাতের দু’দিন পরই এই ঘটনা ঘটে।
এরপর সৌদি আরব ও আরব আমিরাত একযোগে আল জাজিরার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়। স্মরণ করা যায় যে, ২০১৪ সালেও একবার কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল। তখন তিন দেশই কাতার থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে। এই উত্তেজনার মূলে যে অভিযোগটি সামনে আনা হয় তা ছিল, বিশ্বজুড়ে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামিক আন্দোলনে কাতারের সহায়তা।
এ ছাড়া আল জাজিরার সংবাদ পরিবেশনেও তাদের আপত্তি ছিল। বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির মধ্যে উত্তেজনা ছড়ালেও তখন সীমান্ত বন্ধ হয়নি। তাছাড়া এই সব দেশ থেকে কাতারের নাগরিকদের চলে যেতে বলা হয়নি। এবারের অবরোধের পর সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজনের আসা-যাওয়া বন্ধ। এমনকি গত দুই বছরে কাতারের কোনো হজ কাফেলা সৌদি আরব যায়নি। দোহার বড় বড় শপিংমলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার আরব নাগরিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কিংবা বিমানে করে দোহায় আসতেন। এখন সেটা বন্ধ। দোকানে ক্রেতা কম। বিখ্যাত ভিলাজ্জিও মলে তা-ই দেখা গেল। এ প্রসঙ্গে কাতার টাইমসের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর কে থমাস চাকো বললেন, এসব তো আছেই। তবে কাতার এই সংকট থেকে বেরিয়ে গেছে। পরিস্থিতি টালমাটাল নয়। বরং স্থিতিশীল, সচল। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে অবরোধ ও তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই সংকট উতরে গেছে।
ইতিমধ্যেই এই টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে। এই যখন অবস্থা তখনই দুই বছর আগে চারটি মুসলিম দেশ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অবরোধ দিয়ে বসে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন প্রধানত তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত করে কাতারকে। প্রধান অভিযোগ কাতার সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। কাতার তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে। বলে, এই অভিযোগের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথাও বলা হয় চার দেশের পক্ষ থেকে। আল জাজিরা বন্ধও ছিল অন্যতম দাবি। সব মিলিয়ে দাবি ছিল ১৩টি।
এর পরপরই পারস্য উপসাগরের পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। টান টান উত্তেজনার মধ্যে চার দেশের কূটনীতিকরা কাতার ছেড়ে যান। কাতারও তার কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তখন বিশ্ব অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই বলেছিলেন কাতারের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে। কারণ, আমদানিনির্ভর একটি দেশ কাতার। প্রায় ৬০ ভাগ পণ্য আমদানি হতো বয়কটকারী চারটি দেশ থেকে। এগিয়ে আসে তুরস্ক ও ইরান। দুধ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড সংকট সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার গরু আমদানি করে কাতার। বছর খানেকের মধ্যেই দুধ উৎপাদনে বড় সাফল্য দেখায়। এখন দুধে সংকট তেমন নেই। সবজির চাষ শুরু হয়। হাঁস-মুরগির খামার রাতারাতি চালু হয়ে যায়।
৩০ বছর ধরে কাতারে রয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আবদুল মতিন পাটোয়ারী। তার ভাষ্য, শুরুতে সংশয় ছিল কাতার কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে। কাতারের দক্ষ নেতৃত্ব জনগণকে কিছুই বুঝতে দেয়নি। এখন অনেক কিছুতেই তারা স্বাবলম্বী হতে চলেছে। গত শুক্রবার কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তেলের দাম স্থিতিশীল থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে গত বছরের তুলনায়। অর্থনীতির সূচকগুলো উপরের দিকে। রিজার্ভ বেড়েছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। শুরুতে অবশ্য তারল্য সংকট রুখতে ব্যাংককে ৪০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়। এখন বলা হচ্ছে, ২০২০ সনে জিডিপি আরো ২.৮ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। বিদেশি বিনিয়োগের হতাশা কেটেছে।
গত দুই বছরে বিরোধ নিরসনে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বরং, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বৈষম্যের অভিযোগ এনে মামলা করেছে কাতার। গত মে মাসের শেষের দিকে একাধিক সম্মেলনে যোগ দিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খালিফা আল থানি সৌদি আরব সফর করেন। সম্মেলনের একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর নিয়েও ভিন্নমত পোষণ করে কাতার। তখন দোহার তরফে বলা হয়, বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে। অবরোধ বহাল রেখে ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল হয় কীভাবে?
সংকটের শুরু হয় ২০১৭ সনের ২৩শে মে। কাতারের রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে রহস্যজনকভাবে অনুপ্রবেশ করে হ্যাকাররা। তারা সেখানে কাতারের আমীরের ভুয়া উদ্ধৃতি সহকারে একটি খবর প্রকাশ করে। আমীরের ভুয়া ওই মন্তব্যে ইরানের প্রশংসা করা হয়। সমালোচনা করা হয় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। রিয়াদে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাতের দু’দিন পরই এই ঘটনা ঘটে।
এরপর সৌদি আরব ও আরব আমিরাত একযোগে আল জাজিরার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়। স্মরণ করা যায় যে, ২০১৪ সালেও একবার কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল। তখন তিন দেশই কাতার থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে। এই উত্তেজনার মূলে যে অভিযোগটি সামনে আনা হয় তা ছিল, বিশ্বজুড়ে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামিক আন্দোলনে কাতারের সহায়তা।
এ ছাড়া আল জাজিরার সংবাদ পরিবেশনেও তাদের আপত্তি ছিল। বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির মধ্যে উত্তেজনা ছড়ালেও তখন সীমান্ত বন্ধ হয়নি। তাছাড়া এই সব দেশ থেকে কাতারের নাগরিকদের চলে যেতে বলা হয়নি। এবারের অবরোধের পর সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজনের আসা-যাওয়া বন্ধ। এমনকি গত দুই বছরে কাতারের কোনো হজ কাফেলা সৌদি আরব যায়নি। দোহার বড় বড় শপিংমলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার আরব নাগরিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কিংবা বিমানে করে দোহায় আসতেন। এখন সেটা বন্ধ। দোকানে ক্রেতা কম। বিখ্যাত ভিলাজ্জিও মলে তা-ই দেখা গেল। এ প্রসঙ্গে কাতার টাইমসের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর কে থমাস চাকো বললেন, এসব তো আছেই। তবে কাতার এই সংকট থেকে বেরিয়ে গেছে। পরিস্থিতি টালমাটাল নয়। বরং স্থিতিশীল, সচল। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে অবরোধ ও তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই সংকট উতরে গেছে।
No comments