ঋণখেলাপিদের খেয়ালিপনা by মো: মাঈন উদ্দীন
‘আমি
সব ব্যবসায়ীকে চিনি। ব্যবসায়ীদেরও আমাকে চিনতে হবে। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে
দেশ এগোবে। শতভাগ ব্যবসায়ী সৎ হবে না। শতভাগ মানুষও সৎ হবে না। কিন্তু সৎ
মানুষও আছে। এ সংখ্যাও কম নয়।’ কথাগুলো বলেছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম
মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে এক অফুরন্ত আশা-প্রত্যাশা ও উদ্দীপনার আভাস রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর পাশে যদি সৎ লোক ও সৎ ব্যবসায়ীরা থাকেন তাহলে দেশ নিশ্চয়ই
এগিয়ে যাবে।
পৃথিবীতে যত সফলতা, উন্নয়ন রয়েছে তার পেছনে সততা, পরিশ্রম ও সৎ মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা অনেক পরিশ্রমী। তাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা, যোগ্যতা ও উদ্যোগী মনোভাব রয়েছে। যোগ্যতা পরিশ্রমপ্রিয়তা, দেশপ্রেম ও মানবিকতার সাথে সততার সমন্বয় ঘটলে একটি জাতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। বেশ কিছু মাস থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, মিডিয়াতে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও ঋণখেলাপিদের কথা উঠে এসেছে। সুশীলসমাজ, অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্টজনদের এ সম্পর্কে নানা মতামত, পরামর্শ ও উদ্বেগের কথা প্রকাশ পাচ্ছে।
দেশের ব্যাংক খাতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে ঋণ আদায় জোরদার করা উচিত। এতে খেলাপি গ্রাহকেরা কেন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করছে, কোন শক্তির বলে তারা মানুষের অর্থ, সাধারণ গ্রাহকের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত দিচ্ছে না তার কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। কারা সত্যিকারভাবে ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপির খাতায় নাম লেখাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। এখনই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপির জামানতসহ তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।
দীর্ঘ দিন ধরে খেলাপি ঋণ নিয়ে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু করা হয়নি। খেলাপি ঋণের বিপর্যয় থেকে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতায়ন ও পাশাপাশি জবাবদিহিতা জরুরি। খেলাপি ঋণের চর্চা আগেও ছিল, কিন্তু এত খারাপ পর্যায় কখনো সম্ভবত পৌঁছেনি। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা আনতে হলে, তারল্যের সঙ্কট দূর করতে হলে খেলাপি ঋণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য এমডি ও পরিচালক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা বন্ধ করতে হবে। কারা পরিচালক হবেন, কারা পরিচালক হতে পারবেন না- এ বিষয়ে বাস্তবধর্মী গাইডলাইন থাকা উচিত। ব্যাংকের অফিসাররা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বড় বড় খেলাপি গ্রাহক তাদের কারা সাহস জোগাচ্ছেন, কেন তারা ঋণ পরিশোধে খেয়ালিপনা করছেন- তা খতিয়ে দেখা উচিত।
অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের ব্যাপারে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ-কে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা উচিত। ক্ষমতার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে বছরের পর বছর খেলাপি হচ্ছেন। সরকারকে এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নেয়া উচিত।
খেলাপি ঋণ আদায়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে বিনিয়োগের পরিবেশ বিঘিœত হবে। বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ঋণগ্র্রহীতার ব্যক্তিগত জীবন মান ও ব্যক্তি সৎ কি না, এটাও ব্যাংকারদের দেখা উচিত। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর হিসাব মতে, গত এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৭৭। তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে। গত মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। নামে মাত্র ডাউন পেমেন্ট বা দুই শতাংশ নগদ জমা নিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল করে জুন পর্যন্ত তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনলেও ঋণ আদায়ের জোরদার পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা উচিত।
শুধু সার্কুলার জারি করে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দিন চলতে পারবে না। টাকা আদায় করে আনতে হবে, অর্থনীতির চাকাকে ঘুরতে দিতে হবে। বিনিয়োগের যে অর্থ তা এ দেশের মেহনতি মানুষের, এ অর্থ কেউ নেবে আর ফেরত দেবে না, খেয়ালিপনায় মেতে থাকবে; এটা মানা যায় না। এটা আমানতেরও খেয়ানত। তাই ব্যাংকের আমানত রক্ষায় সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে ভবিষ্যতে এ খাতের বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ পেরোনোর পেছনে শিল্প ও সেবা খাতই মূল ভূমিকা পালন করেছে। এ দু’টি খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধির জন্যই বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপির ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দেশের ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। দেশে নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে বহুমুখীকরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যারা সৎ বিনিয়োগ গ্রাহক (সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে) তাদের আরো সুবিধা দিতে হবে। খেলাপি গ্রাহকদের এমন সাজা দেয়া উচিত, যাতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হওয়ার সাহস না পায়।
main706@gmail.com
পৃথিবীতে যত সফলতা, উন্নয়ন রয়েছে তার পেছনে সততা, পরিশ্রম ও সৎ মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা অনেক পরিশ্রমী। তাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা, যোগ্যতা ও উদ্যোগী মনোভাব রয়েছে। যোগ্যতা পরিশ্রমপ্রিয়তা, দেশপ্রেম ও মানবিকতার সাথে সততার সমন্বয় ঘটলে একটি জাতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। বেশ কিছু মাস থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, মিডিয়াতে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও ঋণখেলাপিদের কথা উঠে এসেছে। সুশীলসমাজ, অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্টজনদের এ সম্পর্কে নানা মতামত, পরামর্শ ও উদ্বেগের কথা প্রকাশ পাচ্ছে।
দেশের ব্যাংক খাতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে ঋণ আদায় জোরদার করা উচিত। এতে খেলাপি গ্রাহকেরা কেন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করছে, কোন শক্তির বলে তারা মানুষের অর্থ, সাধারণ গ্রাহকের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত দিচ্ছে না তার কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। কারা সত্যিকারভাবে ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপির খাতায় নাম লেখাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। এখনই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপির জামানতসহ তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।
দীর্ঘ দিন ধরে খেলাপি ঋণ নিয়ে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু করা হয়নি। খেলাপি ঋণের বিপর্যয় থেকে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতায়ন ও পাশাপাশি জবাবদিহিতা জরুরি। খেলাপি ঋণের চর্চা আগেও ছিল, কিন্তু এত খারাপ পর্যায় কখনো সম্ভবত পৌঁছেনি। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা আনতে হলে, তারল্যের সঙ্কট দূর করতে হলে খেলাপি ঋণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য এমডি ও পরিচালক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা বন্ধ করতে হবে। কারা পরিচালক হবেন, কারা পরিচালক হতে পারবেন না- এ বিষয়ে বাস্তবধর্মী গাইডলাইন থাকা উচিত। ব্যাংকের অফিসাররা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বড় বড় খেলাপি গ্রাহক তাদের কারা সাহস জোগাচ্ছেন, কেন তারা ঋণ পরিশোধে খেয়ালিপনা করছেন- তা খতিয়ে দেখা উচিত।
অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের ব্যাপারে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ-কে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা উচিত। ক্ষমতার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে বছরের পর বছর খেলাপি হচ্ছেন। সরকারকে এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নেয়া উচিত।
খেলাপি ঋণ আদায়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে বিনিয়োগের পরিবেশ বিঘিœত হবে। বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ঋণগ্র্রহীতার ব্যক্তিগত জীবন মান ও ব্যক্তি সৎ কি না, এটাও ব্যাংকারদের দেখা উচিত। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর হিসাব মতে, গত এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৭৭। তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে। গত মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। নামে মাত্র ডাউন পেমেন্ট বা দুই শতাংশ নগদ জমা নিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল করে জুন পর্যন্ত তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনলেও ঋণ আদায়ের জোরদার পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা উচিত।
শুধু সার্কুলার জারি করে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দিন চলতে পারবে না। টাকা আদায় করে আনতে হবে, অর্থনীতির চাকাকে ঘুরতে দিতে হবে। বিনিয়োগের যে অর্থ তা এ দেশের মেহনতি মানুষের, এ অর্থ কেউ নেবে আর ফেরত দেবে না, খেয়ালিপনায় মেতে থাকবে; এটা মানা যায় না। এটা আমানতেরও খেয়ানত। তাই ব্যাংকের আমানত রক্ষায় সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে ভবিষ্যতে এ খাতের বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ পেরোনোর পেছনে শিল্প ও সেবা খাতই মূল ভূমিকা পালন করেছে। এ দু’টি খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধির জন্যই বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপির ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দেশের ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। দেশে নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে বহুমুখীকরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যারা সৎ বিনিয়োগ গ্রাহক (সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে) তাদের আরো সুবিধা দিতে হবে। খেলাপি গ্রাহকদের এমন সাজা দেয়া উচিত, যাতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হওয়ার সাহস না পায়।
main706@gmail.com
No comments