পাকিস্তানেই রশীদ ডালিম ও মোসলেহউদ্দিন: মেহনাজ রশীদও যান ঢাকা থেকে
শেখ
ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতারের সাত মাস পর জামিনে ছাড়া
পান মেহনাজ রশীদ। মেহনাজ রশীদ হলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির পলাতক আসামি
খন্দকার আবদুর রশীদের মেয়ে। জামিন পেয়েই মেহনাজ রশীদ গা ঢাকা দেন। গোপনে
তিনি দেশত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান রয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে
খবর আছে। পাকিস্তানে বসেই তিনি ফ্রীডম পার্টির জন্য কাজ করছেন। অর্থনৈতিকসহ
নানা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ফ্রীডম পার্টির জন্য। তার বাবা খুনি রশীদও
রয়েছেন পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্য দুই পলাতক আসামি ডালিম আর
মোসলেহউদ্দিনও সেখানেই আছেন বলে খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু
পাকিস্তানের কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ
গ্রহণ করতে পারছে না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ তাপসের ওপর বোমা হামলা
মামলায় মেহনাজ রশীদকে ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। ২০১০ সালের
১০ মে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান বলে কারা
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর আগে ২ মে তাপসের মামলায় ছয় মাস বা পুলিশ
প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত হাই কোর্ট মেহনাজকে জামিন দেয়। কাশিমপুরের
কারা সূত্র জানান, হাই কোর্ট জামিন দিলেও এরপর ওই আদেশ ১৭ মে পর্যন্ত
স্থগিত করা হয়। ৬ মে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারে আসে। কিন্তু মেহনাজের
পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে ওই আদেশের বিপরীতে আপিল করার আবেদন (লিভ টু
আপিল) করা হয়। ১৮ মে তার জামিন স্থগিতের আর কোনো আদেশ না থাকায় তাকে মুক্তি
দেওয়া হয়, বলেন কারা কর্মকর্তারা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানি
শুরু হওয়ার পর ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর রাতে মতিঝিলে ঢাকা-১২ আসনের এমপি
তাপসের গাড়িতে বোমা হামলা হয়। তিনি বেঁচে গেলেও আহত হন ১৩ জন। পরদিন তাপস
মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা
মামলার আসামিদের স্বজন ও তাদের সহযোগীরা ওই হামলা চালিয়েছে। এরপর মেহনাজকে
তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির পলাতক
আসামি খন্দকার আবদুর রশীদ পাকিস্তানেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। লিবিয়ায়
গাদ্দাফির পতনের পর রশীদের সাম্রাজ্যও তছনছ হয়ে যায়। তখন তিনি নিরাপদ মনে
করে পাকিস্তানেই অবস্থান নেন। বাবা-মেয়ে বর্তমানে পাকিস্তানেই রয়েছেন বলে
খবর আছে গোয়েন্দাদের কাছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অনেকটা কেন্দ্র দখল করেই এমপি
নির্বাচিত হয়েছিলেন খন্দকার আবদুর রশীদ। ওই বিতর্কিত নির্বাচনের সময়
বিভিন্ন পথসভায় হাসতে হাসতেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে খুনের কথা স্বীকার করতেন।
ভোটের দিন উপজেলার ৫১টি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে তার ফ্রীডম
পার্টি। ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নামে মাত্র থাকলেও রশীদের ‘তারা’
মার্কায় প্রকাশ্যেই সিল মারে তার ক্যাডাররা। তখন প্রশাসন ছিল নীরব
দর্শকমাত্র। ফলাফলে ৬০ হাজার ৯৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন রশীদ। নির্বাচনে তার
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমানে এলডিপি মহাসচিব
অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ পান মাত্র ৩ হাজার ৩৪১ ভোট। অন্যদিকে আবদুল কাদের
জিলানী ৪৮৩ ও সহিদ উল্লাহ সরকার ৪৯৪ ভোট পান।
তবে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অবস্থা বেগতিক দেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রশীদ। তবে মেয়ে মেহনাজের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। রশীদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়গড়িয়ায়। বর্তমানে নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ওই পরিবারের গোপনে কিছু যোগাযোগ থাকলেও এলাকার কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। গ্রামবাসীরা জানান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সময় কর্নেল রশীদ জমির বিনিময়ে এবং লিবিয়া পাঠানোর নামে লোকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করে নির্বাচনের দিন রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। বিতর্কিত ওই নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আলী আশরাফ বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময় রশীদের মেয়ে মেহনাজ এলাকায় এলে স্থানীয় প্রতারিত লোকজনের তোপের মুখে পড়েন। সে সময় মোবাইল ফোনে মেহনাজ অজ্ঞাত স্থানে অবস্থানরত কর্নেল রশীদের সঙ্গে প্রতারিত লোকদের আলাপ করিয়ে দিয়ে নির্বাচনের পর টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। বাবার নির্দেশে সেই নির্বাচনে হাতি মার্কা নিয়ে মেহনাজ দাঁড়ালে ১৩৫ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর একই গ্রামের রুকু মিয়া ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তির ১৬ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল মেহনাজ গ্রামের বাড়িতে এসে লাঞ্ছিত হন। এরপর তাকে আর সেখানে দেখা যায়নি।
পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে অবস্থান করছেন ডালিম আর মোসলেহউদ্দিনও। ডালিমের ব্যবসা কেনিয়ার নাইরোবিতে রয়েছে। ডালিম কেনিয়া আর পাকিস্তানে যাতায়াত করছেন। ডালিমের সঙ্গে পাকিস্তানি আইএসআইর রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে মোসলেহউদ্দিনের বিষয়ে আরেকটি সূত্র বলেছে, তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের প্রত্যেকেই পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তারা বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। পাকিস্তানকে নিরাপদ দেশ মনে করেই তারা সেখানে অবস্থান করছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই পাকিস্তান থেকে ফারুক-রশীদ ৫০০ কোটি টাকার একটি বিরাট বাজেট পেয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। আর এই বিরাট অঙ্কের টাকা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল একটি পর্যায়ে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন : মির্জা মেহেদী তমাল, সাখাওয়াত কাওসার, গোলাম রাব্বানী ও মাহবুব মমতাজী।)
তবে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অবস্থা বেগতিক দেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রশীদ। তবে মেয়ে মেহনাজের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। রশীদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়গড়িয়ায়। বর্তমানে নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ওই পরিবারের গোপনে কিছু যোগাযোগ থাকলেও এলাকার কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। গ্রামবাসীরা জানান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সময় কর্নেল রশীদ জমির বিনিময়ে এবং লিবিয়া পাঠানোর নামে লোকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করে নির্বাচনের দিন রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। বিতর্কিত ওই নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আলী আশরাফ বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময় রশীদের মেয়ে মেহনাজ এলাকায় এলে স্থানীয় প্রতারিত লোকজনের তোপের মুখে পড়েন। সে সময় মোবাইল ফোনে মেহনাজ অজ্ঞাত স্থানে অবস্থানরত কর্নেল রশীদের সঙ্গে প্রতারিত লোকদের আলাপ করিয়ে দিয়ে নির্বাচনের পর টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। বাবার নির্দেশে সেই নির্বাচনে হাতি মার্কা নিয়ে মেহনাজ দাঁড়ালে ১৩৫ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর একই গ্রামের রুকু মিয়া ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তির ১৬ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল মেহনাজ গ্রামের বাড়িতে এসে লাঞ্ছিত হন। এরপর তাকে আর সেখানে দেখা যায়নি।
পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে অবস্থান করছেন ডালিম আর মোসলেহউদ্দিনও। ডালিমের ব্যবসা কেনিয়ার নাইরোবিতে রয়েছে। ডালিম কেনিয়া আর পাকিস্তানে যাতায়াত করছেন। ডালিমের সঙ্গে পাকিস্তানি আইএসআইর রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে মোসলেহউদ্দিনের বিষয়ে আরেকটি সূত্র বলেছে, তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের প্রত্যেকেই পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তারা বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। পাকিস্তানকে নিরাপদ দেশ মনে করেই তারা সেখানে অবস্থান করছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই পাকিস্তান থেকে ফারুক-রশীদ ৫০০ কোটি টাকার একটি বিরাট বাজেট পেয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। আর এই বিরাট অঙ্কের টাকা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল একটি পর্যায়ে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন : মির্জা মেহেদী তমাল, সাখাওয়াত কাওসার, গোলাম রাব্বানী ও মাহবুব মমতাজী।)
No comments