ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জটিলতাকে অবহেলা করার পরিণাম আরো ভয়াবহ by অমৃতা খান্দেকার
ভারতে
২০১৪ সালে দর্শনীয়ভাবে গেরুয়ার উত্থানের পর থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা
দেশের রাজনৈতিক ধারার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। অবশ্য সামাজিক মাধ্যম ও
ময়দানের অ্যাক্টিভিস্টরা বিশ্বের সামনে ভারতের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হিসেবে
যেটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে সেটিকে অভিহিত করা যেতে পারে ‘জয় শ্রী রাম
ভ্রান্তি’ হিসেবে।
শুরুতে এই ভ্রান্তি এর শিকারদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে খুবই সরল, সাদামাটা দৃষ্টিভঙ্গির দিকে চালিত করে যেখানে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠকে ‘নির্যাতনকারী’ শ্রেণিতে ফেলে দলিত, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মতো সংখ্যালঘুদেরকে একত্রিতভাবে ‘নির্যাতিত’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৪৯ ভারতীয় বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটি রণডঙ্কায় পরিণত হয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা বৃদ্ধির রাশ টানতে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীকে।
চিঠিটিতে সইকারীর সম্ভবত সাম্প্রতিক ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটির উৎস ভুলে গেছেন। তারা মনে করতে পারছেন না যে ভারতের প্রচণ্ডতম রাজনৈতিক যুদ্ধ যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল তখনই এই স্লোগানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গত মে মাসে মাথাগরম মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভে স্লোগানটি পশ্চিমবঙ্গে বিপুল রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করে। একদল ‘দোষীকে’ পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর তারা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিলে তিনি তাদের সমালোচনা করেন। তাদের অপরাধ কী ছিল? ওই তিনটি শব্দ দিয়ে তো এক হিন্দু দেবতার প্রশংসাই করা হচ্ছে।
এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গে অ-হিন্দু সংখ্যালঘু সদস্যদের ওপর কয়েক দফা কুৎসিত হামলা হয়। আর ভারতজুড়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এই স্লোগানে সম্পৃক্ত থাকে। একদিকে সংখ্যালঘুরা স্লোগানটি উচ্চারণ না করায় হিন্দুত্ববাহিনীর হাতে অন্যায় আগ্রাসনের শিকার হয়, অন্যদিকে সংখ্যাগুরুরা বিপরীত কারণে নির্যাতনের মুখে পড়ে।
পশ্চিম বঙ্গ নিজেই ধর্মীয় সহিংসতার উত্তপ্ত ক্ষেত্রে পরিণত হয়। জুনে স্লোগানটি উচ্চারণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে এক মাদরাসা শিক্ষককে প্রহার করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরের মাসে হাওরা জেলায় ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান না দেয়ায় এক ছাত্রকে নির্দয়ভাবে প্রহার করা হয়। পশ্চিম বঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক ঘটনার এগুলো মাত্র কয়েকটি উদাহরণ।
সারা ভারতে ধূমায়িত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ অবশ্য অল্প কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কয়েকটি ডানপন্থী চ্যানেল ছাড়া মিডিয়া সাধারণভাবে স্লোগানধারী গুণ্ডাদের হাতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের কথাই তুলে ধরে। ‘জয় শ্রী রাম’ বিতর্কের অন্য দিকটি (এই স্লোগান দেয়া হতভাগা হিন্দুরা সহিংসতার শিকার হয়) সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের কাছ থেকে সামান্যই সমালোচনার মুখে পড়ে। ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে প্রতিটি আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমসময় নির্যাতনকারী ও সংখ্যালঘুরা সবসময় নির্যাতনের শিকার হিসেবে সামনে আসে।
সমস্যাটি নিহিত রয়েছে তারা যে লড়াইটি করছে তার স্তরগুলো পরীক্ষা না করার মধ্যে। ভারতের বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিরাজমান অন্তদ্বন্দ্বের বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান।
গত মে মাসে মধ্য প্রদেশে মসজিদের পাশ দিয়ে দলিতদের একটি বিবাহ শোভাযাত্রার সময় মুসলিমরা তাতে হামলা চালায় বলে জানা গেছে। কর্নাটকে ২০১৭ সালে মুসলিম মেয়ের সাথে প্রেম করার অভিযোগে ওই পরিবারের স্বজনেরা এক দলিত বাবা-ছেলেকে গাছে বেঁধে প্রহার করে।
তাছাড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নজিরবিহীন উচ্চতায় ওঠা নিয়েও ভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়াস্পেন্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০১৪-১৭ সময়কালে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়েছে ২৮ ভাগ। এতে আরো বলা হয়, ২০০৮ সালে (এ সময় ভারত ছিল ইউপিএ-এর শাসনে) ভারতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছিল।
আবার ২০১৪ সালের পর ভারতের সব রাজ্যেই সাম্প্রদায়িক ঘটনা সমানভাবে বাড়েনি। বিজেপিশাসিত মহারাষ্ট্র ও মধ্য প্রদেশে ২০১৫ সালে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বাড়লেও পরের দুই বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। গুজরাটের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। আবার কংগ্রেস-শাসিত কর্নাটকে ২০১৫ সালে সাম্প্রদায়িক ঘটনা বাড়ে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও চিত্রটি একই ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
আবার অনেক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর প্রকাশও করা হয় না। এর পেছনেও রয়েছে নানা কারণ।
ভারতের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যেকোনো আলোচনা হওয়া উচিত সামগ্রিকতার আলেকে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি জটিল বিষয়। কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্লেষণে কাজের কাজ কিছুই হয় না। সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও বুদ্দিজীবীদের প্রয়োজন সব দৃষ্টিকোণ থেকে সঙ্কটটি বিশ্লেষণ করা। তাদের উচিত হবে না কারো প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন করা।
পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে দুর্বল বোধ শক্তি প্রদর্শন করা হলে সাম্প্রদায়িকতার রোগটি ভারতকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
শুরুতে এই ভ্রান্তি এর শিকারদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে খুবই সরল, সাদামাটা দৃষ্টিভঙ্গির দিকে চালিত করে যেখানে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠকে ‘নির্যাতনকারী’ শ্রেণিতে ফেলে দলিত, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মতো সংখ্যালঘুদেরকে একত্রিতভাবে ‘নির্যাতিত’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৪৯ ভারতীয় বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটি রণডঙ্কায় পরিণত হয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা বৃদ্ধির রাশ টানতে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীকে।
চিঠিটিতে সইকারীর সম্ভবত সাম্প্রতিক ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটির উৎস ভুলে গেছেন। তারা মনে করতে পারছেন না যে ভারতের প্রচণ্ডতম রাজনৈতিক যুদ্ধ যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল তখনই এই স্লোগানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গত মে মাসে মাথাগরম মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভে স্লোগানটি পশ্চিমবঙ্গে বিপুল রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করে। একদল ‘দোষীকে’ পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর তারা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিলে তিনি তাদের সমালোচনা করেন। তাদের অপরাধ কী ছিল? ওই তিনটি শব্দ দিয়ে তো এক হিন্দু দেবতার প্রশংসাই করা হচ্ছে।
এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গে অ-হিন্দু সংখ্যালঘু সদস্যদের ওপর কয়েক দফা কুৎসিত হামলা হয়। আর ভারতজুড়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এই স্লোগানে সম্পৃক্ত থাকে। একদিকে সংখ্যালঘুরা স্লোগানটি উচ্চারণ না করায় হিন্দুত্ববাহিনীর হাতে অন্যায় আগ্রাসনের শিকার হয়, অন্যদিকে সংখ্যাগুরুরা বিপরীত কারণে নির্যাতনের মুখে পড়ে।
পশ্চিম বঙ্গ নিজেই ধর্মীয় সহিংসতার উত্তপ্ত ক্ষেত্রে পরিণত হয়। জুনে স্লোগানটি উচ্চারণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে এক মাদরাসা শিক্ষককে প্রহার করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরের মাসে হাওরা জেলায় ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান না দেয়ায় এক ছাত্রকে নির্দয়ভাবে প্রহার করা হয়। পশ্চিম বঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক ঘটনার এগুলো মাত্র কয়েকটি উদাহরণ।
সারা ভারতে ধূমায়িত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ অবশ্য অল্প কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কয়েকটি ডানপন্থী চ্যানেল ছাড়া মিডিয়া সাধারণভাবে স্লোগানধারী গুণ্ডাদের হাতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের কথাই তুলে ধরে। ‘জয় শ্রী রাম’ বিতর্কের অন্য দিকটি (এই স্লোগান দেয়া হতভাগা হিন্দুরা সহিংসতার শিকার হয়) সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের কাছ থেকে সামান্যই সমালোচনার মুখে পড়ে। ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে প্রতিটি আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমসময় নির্যাতনকারী ও সংখ্যালঘুরা সবসময় নির্যাতনের শিকার হিসেবে সামনে আসে।
সমস্যাটি নিহিত রয়েছে তারা যে লড়াইটি করছে তার স্তরগুলো পরীক্ষা না করার মধ্যে। ভারতের বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিরাজমান অন্তদ্বন্দ্বের বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান।
গত মে মাসে মধ্য প্রদেশে মসজিদের পাশ দিয়ে দলিতদের একটি বিবাহ শোভাযাত্রার সময় মুসলিমরা তাতে হামলা চালায় বলে জানা গেছে। কর্নাটকে ২০১৭ সালে মুসলিম মেয়ের সাথে প্রেম করার অভিযোগে ওই পরিবারের স্বজনেরা এক দলিত বাবা-ছেলেকে গাছে বেঁধে প্রহার করে।
তাছাড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নজিরবিহীন উচ্চতায় ওঠা নিয়েও ভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়াস্পেন্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০১৪-১৭ সময়কালে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়েছে ২৮ ভাগ। এতে আরো বলা হয়, ২০০৮ সালে (এ সময় ভারত ছিল ইউপিএ-এর শাসনে) ভারতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছিল।
আবার ২০১৪ সালের পর ভারতের সব রাজ্যেই সাম্প্রদায়িক ঘটনা সমানভাবে বাড়েনি। বিজেপিশাসিত মহারাষ্ট্র ও মধ্য প্রদেশে ২০১৫ সালে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বাড়লেও পরের দুই বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। গুজরাটের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। আবার কংগ্রেস-শাসিত কর্নাটকে ২০১৫ সালে সাম্প্রদায়িক ঘটনা বাড়ে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও চিত্রটি একই ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
আবার অনেক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর প্রকাশও করা হয় না। এর পেছনেও রয়েছে নানা কারণ।
ভারতের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যেকোনো আলোচনা হওয়া উচিত সামগ্রিকতার আলেকে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি জটিল বিষয়। কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্লেষণে কাজের কাজ কিছুই হয় না। সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও বুদ্দিজীবীদের প্রয়োজন সব দৃষ্টিকোণ থেকে সঙ্কটটি বিশ্লেষণ করা। তাদের উচিত হবে না কারো প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন করা।
পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে দুর্বল বোধ শক্তি প্রদর্শন করা হলে সাম্প্রদায়িকতার রোগটি ভারতকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
No comments