হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ছয় বছরে এক টাকাও ফেরত আসেনি by এম এম মাসুদ
বহুল
আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির ৬ বছর পার হলেও এক টাকাও ফেরত পায়নি
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। হলমার্ক গ্রুপের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা
জালিয়াতিসহ অন্য ছোট-বড় জালিয়াতির কারণে ধুঁকছে ব্যাংকটি। জানা গেছে,
প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের
মামলায় ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পান হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম।
সে হিসেবে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তিনি সময় পেয়েছেন ৬৭ মাস। ১০০ কোটি
টাকা প্রতি মাসে পরিশোধ করলেও হিসাব মতে আদায় হতো ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
কিন্তু সোনালী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১২ সালে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর
প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর (মালিকের গ্রেপ্তারের আগে) সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা
ছাড়া গত ৬ বছরে এক টাকাও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকটি। সূত্র মতে, বন্ধক রাখা
সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বিক্রির অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি
হচ্ছে না। আর সব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেও কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা
আদায় করা সম্ভব হবে না। ওই সূত্র আরো জানায়, জামিনের পর এ গ্রুপের পক্ষ
থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। পরে জেসমিনের জামিন বাতিল করা হয় এবং
পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি কারাগারেই আছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ও মালিকদের দৌরাত্ম্যই দায়ী। মালিকপক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ দেয়া হয়- যেগুলো পরে আদায় হয় না। যেসব ব্যাংকে এ অনিয়ম হয়, সেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোয় অনেক পুরনো ঋণ রয়েছে, যেগুলো আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে তা খেলাপি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। যারা ঋণ আদায় করতে পারছে না তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।
হলমার্কের অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে বিভিন্ন সময় ঋণ দেয়া হয় ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কিছু অর্থ ফেরত আসলেও তিন হাজার ৪৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আটকে যায়। আটকে যাওয়া এ অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে সোনালী ব্যাংক। এসব ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত ও সাধারণ আদালতে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বেশ কয়েকটি মামলা করেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি খাতের সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংকে হলমার্ক গ্রুপ ঋণ জালিয়াতি করেছে। এর মাধ্যমে তারা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। যার পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে গেছে। সুদসহ এর পরিমাণ আরও বেশি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। আলোচিত এ কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ হলেও এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ঠা অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ই অক্টোবর ১১ মামলায় চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়। পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ও ২৭শে মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাগুলো বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আটজন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন। তানভীর মাহমুদ কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবনুজ জাহান বলেন, হলমার্কের টাকা ফেরত পেতে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মামলা চলছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে কেউ রেহাই পাবে না। আগের সেই দিন আর নেই, যে ব্যাংকের টাকা নিলে তা আর ফেরত দিতে হয় না।
এই ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হলমার্ক গ্রুপের কারখানা চালিয়ে বা হলমার্কের নামে ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই সম্ভব না। কারণ কারখানার বড় বড় মেশিনপত্র তানভীরের লোকেরা আগেই নিয়ে গেছে। এখন যেসব মেশিন আছে, সেগুলো অচল। ব্যাপক পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ লাগবে কারখানা চালু করতে। বরং তানভীরসহ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়া যাবে না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বড় অংকের ঋণে যাতে জালিয়াতি না হতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করে। কিন্তু তারপরও কিভাবে ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে? তিনি মনে করেন, এর সঙ্গে নিশ্চয় ব্যাংকাররা জড়িত। অনেক সময় শাখা কর্মকর্তারা জেনেই খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেন। তবে বড় ঋণ সাধারণত উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা বা চাপে দেয়া হয়ে থাকে। ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে অনিয়ম বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকার ঋণ জালিয়াতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে নতুন কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটত না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ও মালিকদের দৌরাত্ম্যই দায়ী। মালিকপক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ দেয়া হয়- যেগুলো পরে আদায় হয় না। যেসব ব্যাংকে এ অনিয়ম হয়, সেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোয় অনেক পুরনো ঋণ রয়েছে, যেগুলো আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে তা খেলাপি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। যারা ঋণ আদায় করতে পারছে না তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।
হলমার্কের অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে বিভিন্ন সময় ঋণ দেয়া হয় ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কিছু অর্থ ফেরত আসলেও তিন হাজার ৪৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আটকে যায়। আটকে যাওয়া এ অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে সোনালী ব্যাংক। এসব ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত ও সাধারণ আদালতে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বেশ কয়েকটি মামলা করেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি খাতের সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংকে হলমার্ক গ্রুপ ঋণ জালিয়াতি করেছে। এর মাধ্যমে তারা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। যার পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে গেছে। সুদসহ এর পরিমাণ আরও বেশি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। আলোচিত এ কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ হলেও এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ঠা অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ই অক্টোবর ১১ মামলায় চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়। পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ও ২৭শে মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাগুলো বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আটজন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন। তানভীর মাহমুদ কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবনুজ জাহান বলেন, হলমার্কের টাকা ফেরত পেতে চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মামলা চলছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে কেউ রেহাই পাবে না। আগের সেই দিন আর নেই, যে ব্যাংকের টাকা নিলে তা আর ফেরত দিতে হয় না।
এই ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হলমার্ক গ্রুপের কারখানা চালিয়ে বা হলমার্কের নামে ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই সম্ভব না। কারণ কারখানার বড় বড় মেশিনপত্র তানভীরের লোকেরা আগেই নিয়ে গেছে। এখন যেসব মেশিন আছে, সেগুলো অচল। ব্যাপক পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ লাগবে কারখানা চালু করতে। বরং তানভীরসহ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়া যাবে না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বড় অংকের ঋণে যাতে জালিয়াতি না হতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করে। কিন্তু তারপরও কিভাবে ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে? তিনি মনে করেন, এর সঙ্গে নিশ্চয় ব্যাংকাররা জড়িত। অনেক সময় শাখা কর্মকর্তারা জেনেই খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেন। তবে বড় ঋণ সাধারণত উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা বা চাপে দেয়া হয়ে থাকে। ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে অনিয়ম বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকার ঋণ জালিয়াতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে নতুন কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটত না।
No comments