সিলেট সফরে যে বিতর্কের জন্ম দেন শোভন by ওয়েছ খছরু
সর্বশেষ
সিলেটকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের অপসারণ হওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল
হক চৌধুরী শোভন। তার কারণেই ভেঙে পড়েছিল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তার নেতৃত্বে সিলেট ছাত্রলীগের কর্মীরা
ওসমানী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে গিয়েছিলেন বিমানের সিঁড়ি
পর্যন্ত। এতে যাত্রীরা হয়ে পড়েছিলেন ভীতসন্ত্রস্ত। ওসমানীর নিরাপত্তা
কর্মীরা ওই সময় শত চেষ্টা করেও ছাত্রলীগ কর্মীদের দমাতে পারেননি। ওই দিন
শোভন ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পরপরই সিভিল এভিয়েশনে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
ওসমানী বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সবক’টি সংস্থার রিপোর্টের
প্রেক্ষিতে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত আলোচিত হয়। গত ৪ঠা অক্টোবর
সিলেট সফরে এসেছিলেন ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি রেজয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
তিনি মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের একাধিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সিলেট
সফরকালে তাকে ঘিরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। সিলেটে আসার
দিন তাকে নিয়ে হুড়োহুড়ির সময় সিলেট সার্কিট হাউজের কাচের বেষ্টনী ভাঙচুর
করা হয়। ওই সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা শোভনকে অভিনন্দন জানিয়ে নগরজুড়ে
ব্যানার, বিলবোর্ড বসান। এতে করে পুরো সিলেট নগর হয়ে ওঠে শোভনময়। আওয়ামী
লীগের নেতারা জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতা
সিলেটে এলে এত ব্যানার ফেস্টুন স্থাপন করা হয় না। এবার শোভন সিলেটে আসার পর
এত ব্যানার ফেস্টুন স্থাপন করা হয়েছে। গত ৫ই সেপ্টেম্বর সিলেট ছাড়েন
ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন। তাকে মোটর ও গাড়ি শোভাযাত্রাসহকারে ছাত্রলীগের
নেতা-কর্মীরা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে নিয়ে যান। ওই দিন রাত
৮টা ৩৫ মিনিটে বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে শোভন ঢাকার উদ্দেশ্যে
রওনা দেন। কিন্তু সিলেট শহর থেকে তাকে নিয়ে মিছিল সহকারে যাওয়া নেতাকর্মীরা
প্রথমেই বিমানবন্দরের মূল সড়কের ফটকের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ভেতরে
প্রবেশ করেন। কয়েকশ’ নেতাকর্মী এক সঙ্গে আসার কারণে নিরাপত্তা কর্মীরা
তাদের রুখতে পারেননি। পরে ছাত্রলীগ কর্মীদের বহর সহকারে তারা চলে যান
যাত্রী লাউঞ্জের সামনে ফটকে। ওসমানী বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জের প্রবেশের
পথে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু শোভন যখন ফটকে যান তখন
ছাত্রলীগ কর্মীরা জড়ো হয়ে ওই বেষ্টনীও ভেঙ্গে ফেলেন। হুড়োহুড়ি করে ছাত্রলীগ
কর্মীরা যাত্রী লাউঞ্জে ঢুকে পড়েন। তখন এয়ারপোর্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে
ছিলেন সিভিল এভিয়েশনের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তারা ছাত্রলীগ কর্মীদের
বাধা প্রদান করেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারেননি। ওই সময় শোভন
বিমানবন্দরের ভেতরে বোডিং পর্ব সেরে উড়োজাহাজের দিকে যান। এ সময় তাকে
অনুসরণ করেন নেতাকর্মীরা। তারা বিমানের দরোজা পর্যন্ত শোভনের কাছে চলে যান।
এ সময় কয়েকজন কর্র্মী শোভন, উড়োজাহাজ সহ সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেন।
যাত্রীরা জানান- শতাধিক নেতাকর্মী এক সঙ্গে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ঢুকে
পড়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। উড়োজাহাজের ভেতরে বসা বিদেশগামী
যাত্রীদের কেউ কেউ নিরাপত্তার অজুহাতে বেরিয়ে আসেন। পরে সিভিল এভিয়েশনের
কর্মকর্তারা তাদের আশ্বস্ত করে ফের উড়োজাহাজে তুলে দিয়ে দ্রুত সিলেট ত্যাগ
করান। এদিকে- ওসমানী বিমানবন্দরের ভেতরে ছাত্রলীগ কর্মীদের এই আচরণের
রিপোর্ট বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পৌঁছে যায় ঢাকায়। পরে সেটি প্রধানমন্ত্রীর
টেবিল পর্যন্ত যায়। বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত একাধিক কর্মকর্তা
মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ছাত্রলীগ সভাপতি বিমানবন্দরে এলে তাকে বিদায় জানাতে
শত শত নেতাকর্মী ওসমানীতে জড়ো হন। এ সময় তারা ফটক ঠেলে ডিপারচার লাউঞ্জ পার
হয়ে অ্যাপ্রনে ঢুকে যান, এমনকি কিছু কিছু নেতাকর্মী উড়োজাহাজেও উঠার
চেষ্টা করেন। তখন ভিআইপি ফটকে দায়িত্বে ছিলেন এভিয়েশনের কর্মী আবুল হাসান।
তাকে ঠেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উড়োজাহাজে গিয়ে ফুল দিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতিকে
বিদায় জানান। তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলামসহ এভিয়েশনের অন্য
কর্মকর্তারা দৌড়ে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের টেনে উড়োজাহাজের সিঁড়ি থেকে
বের করে আনেন। ওসমানী বিমানবন্দর সূত্র জানায়, নিরাপত্তার জাল ছিঁড়ে
অ্যাপ্রনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশের ঘটনায় ওসমানী বিমানবন্দর
ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদকে ভিডিও ফুটেজসহ ঢাকায় ডাকা হয়েছে। এ ঘটনার পর
নড়েচড়ে বসেছে সরকারের সব সংস্থা। তারা ঘটনার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করে ঢাকায়
পাঠানো হয়েছে। এদিকে- সিলেটে শোভন কাণ্ডের ইতি এখানেই শেষ হয়নি।
ছাত্রলীগের ভেতরেও এ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতির পদ থেকে
শোভনকে অপসারণের পর সিলেটের পরিস্থিতিও বদলে গেছে। শনিবার রাত থেকেই সিলেটে
শুরু হয়েছে শোভনের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ। গতকাল সকালে
নগরীর সোবহানীঘাটে দেখা যায় সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সিলেট সফরকালে তাকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের
সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতার সৌজন্যে লাগানো বেশ কিছু ব্যানার ফেস্টুন কে বা
কারা অপসারণ করছে। এ ছাড়া নগরীর চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, টিলাগড়,
সুবিদবাজারেও সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী
শোভনের সিলেট সফরকালে তাকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ব্লক ও বলয়ের
নেতাকর্মী কর্তৃক লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণের একই দৃশ্য দেখা যায়।
ব্যানার ফেস্টুন সিলেট সিটি করপোরেশ সরাচ্ছে বলে দাবি করেছেন এক ছাত্রলীগ
নেতা। তিনি জানান- ছাত্রলীগের কেউ ব্যানার বা ফেস্টুন সরাচ্ছে না। গতকাল
থেকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আর শোভনের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন
দেখা যায় না।
No comments