চাই না এমন ছাত্র রাজনীতি by কাজল ঘোষ
হঠাৎ
চোখে পড়ল একটি সাদা অ্যালিয়ন গাড়ি। আর ওই গাড়ি ঘিরে যুবকদের ভিড়। গাড়িটির
সামনের একটি লুকিং গ্লাস একটু নেমে আছে। বাইরের দিকে একটি হাত। হাতটি বাম
না ডান তা বুঝার উপায় নেই। তবে সকলেই হাতটি ছুঁয়ে দেখছে। হাতটি ধীরে ধীরে
মধুর ক্যান্টিনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চারদিকে লিডার, লিডার, ভাই, ভাই
আওয়াজ। কৌতূহল নিয়ে ভিড় ঠেলে একজনকে জিগ্যেস করলাম। কে? দেখছেন না? বুঝলাম
ইনিই ছাত্রলীগ সভাপতি। মুহূর্তে মনে পরে গেল পরশুরামের বিরিঞ্চি বাবা
চরিত্রটির কথা। যে চরিত্র অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় তার খ্যাতনামা চলচ্চিত্র
‘মহাপুরুষ’ নির্মাণ করেছেন। ছবির শুরুতেই দেখা যায়, ভন্ড মহাপুরুষরুপী
বিরিঞ্চি বাবা তার ভক্তদের ফুল ছিটিয়ে আশীর্বাদ দিচ্ছেন। ধীরে ধীরে যখন
ট্রেন চলতে শুরু করে তখন তিনি তার পা এগিয়ে বুড়ো আঙুলটি ভক্তদের দিকে তাক
করে রাখে। আর সকলেই তা ছুঁয়ে দেখছে। এটাই যেন তাদের বড় পাওয়া। ছাত্রলীগ
নেতার ক্যাম্পাসের এই দৃশ্যটি মুহূর্তের জন্য হলেও ভন্ড বিরিঞ্চি বাবার কথা
মনে করিয়ে দেয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। উদ্দেশ্য পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন। বিষয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র। মধুর ক্যান্টিন। টিএসসি। ডাস চত্বর। কলাভবন। অপরাজেয় বাংলা। সবকিছু যেন ইতিহাসের পরিক্রমা। এক গৌরবময়তায় ঠাসা। ভাল লাগে এসব। ঘুরে বেড়াই। সতীর্থদের নিয়ে হাকিম চত্বর, মল চত্বর আর শ্যাডোতে ইয়ার্কি মারি। এ যেন এক অন্য ভুবন। পড়া আর শোনা। চলচ্চিত্রের বাঘা বাঘা সব পরিচালকদের ফিল্মি দুনিয়ার নাটবল্টু নিয়ে গবেষণা করা। শাহবাগ থেকে চারুকলা পার হয়ে নজরুলের মাজার ধরে এগুলেই মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার আগে সমাজকল্যাণ বিভাগের ভবন। বন্ধুদের জন্য ডিপার্টমেন্টের খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি। আর তখনই সাদা অ্যালিয়ন গাড়ির আগমন। যাকে ঘিরে মূল রাস্তা থেকে মধুর ক্যান্টিন পর্যন্ত ভিড়।
ভাষা আন্দোলন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সত্তরের নির্বাচন পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ভূমিকা। ধারাবাহিক এ ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দেয় ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ভূমিকার কথা। আর দু হাজার পনের পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি। শুধুই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, মাদকে পূর্ণ।
বাহ, অনেক উন্নতি হয়েছে ছাত্র রাজনীতির। ছাত্র নেতারা এখানে নিজেদের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে না। কোন কাজ না করেও সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের বাড়ি, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র অনেক নেতাদেরও ছাড়িয়ে।
কদিন আগে উবার মোটোতে চড়েছি। কিছুদূর যাবার পর কর্তব্যরত সার্জেন্ট পুলিশ মোটো চালককে তার কাগজপত্র প্রদর্শন করতে বললে সে জানায়, সে ছাত্রলীগ করে। নরম সুরে কিছু বলে সার্জেন্টকে বাইকটি ছেড়ে দিতে দেখলাম। গ্রামের বাড়ি থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছি। নরসিংদী জংশন থেকে একদল ছাত্র ওঠেছে। সবার হাতেই টাচ ফোন। সবাই দেশ চালাবার নানা ফন্দি ফিরিস্তি নিয়ে আলোচনায় মত্ত। যখনই টিকিট দেখতে চেয়েছে তখন সমস্বরে বলে ওঠলো, বুঝুইন না। টিহিট ছাইন যে? মিঁউ মিঁউ সুরে টিকিট চেকার আফনেরা কই জন ইডাতো কইবাইন? এক হোমরার আওয়াজ, আ্যই সমানে যা। কথা কম। তারপর একের পর এক আশপাশের যাত্রীদের সিট দখল, নয়তো জোর করে চেপে বসে পরা চলে কিছুক্ষণ। এরা সবাই নাকি ছাত্রলীগ। মনে হলো, এটাতো খুউব সামান্য। যেখানে কিছুই হচ্ছে না ছাত্রলীগকে ট্যাক্স না দিলে সেখানে এটা অল্পই। সামগ্রিক চিত্রতো আরও খারাপ।
একটি জাতীয় দৈনিকে ছবি ছাপা হয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি ফিরছেন ঢাকায়। সিলেট এয়ারপোর্টে বিমান ঘিরে ভিড়। সবাই তাদের নেতাকে বিদায় দিচ্ছেন। বিমানবন্দরে কিসের নিরাপত্তা, কিসের কি? ছাত্রলীগ বলে কথা। অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভিড় দেখা যায় না বিমানবন্দরে। এগুলো ছোট ছোট মাসলম্যানগিরির উদাহরণ। এমনটা হাজার বলা যাবে। বর্তমান সময়ে খোদ দলের প্রধানই এ নিয়ে ফাইল তলব করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিশন বাণিজ্যের রেট নিয়ে আলোচনা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা আর টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন ছাত্রলীগের আয়ের প্রধান উৎস। অভিযোগ আকারে বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে এলেও এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতৃত্ব তা প্রমাণ করলেন। সবশেষ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণে কমিশন চাওয়ার ঘটনাটি আলোচনায় এলে সবার টনক নড়ে। গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেছেন, এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। ঈদের খরচের জন্যই তা চাওয়া হয়েছিল। ধন্যবাদ দিতে হয় জাবি উপাচার্যকে। তিনি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়ে এসেছেন। নাহলে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ শুধু মৌখিক আলোচনাতেই সীমাবব্ধ থাকত।
ছাত্রলীগের বাইরে অপর বড় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও আলোচনায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় হল দখল আর টেন্ডারবাজি নিয়ে তারাও ছিল আলোচনায়। তবে ছাত্রদল সবচেয়ে বয়সিদের দখলে থাকা সংগঠনের তকমা পেয়ে আসছে অনেক দিন থেকেই। এখানে কারও বয়স বাড়ে না। ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
কিন্তু সব ছাপিয়ে বড় একটি প্রশ্ন কি হবে এই ছাত্র রাজনীতি দিয়ে? যেখানে পড়াশোনা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই, ছাত্রদের কল্যাণে কোন ভূমিকা নেই, সমাজের আপদকালীন মুহূর্তে কোন তৎপরতা চোখে পরে না। ডেঙ্গু সমস্যা বলি, দুর্নীতি বলি, মাদকের ব্যাপকতা বলি কোথাও সমাজ বিনির্মাণে তাদের অবদান নেই। এমন ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আদৌ আছে কি?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। উদ্দেশ্য পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন। বিষয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র। মধুর ক্যান্টিন। টিএসসি। ডাস চত্বর। কলাভবন। অপরাজেয় বাংলা। সবকিছু যেন ইতিহাসের পরিক্রমা। এক গৌরবময়তায় ঠাসা। ভাল লাগে এসব। ঘুরে বেড়াই। সতীর্থদের নিয়ে হাকিম চত্বর, মল চত্বর আর শ্যাডোতে ইয়ার্কি মারি। এ যেন এক অন্য ভুবন। পড়া আর শোনা। চলচ্চিত্রের বাঘা বাঘা সব পরিচালকদের ফিল্মি দুনিয়ার নাটবল্টু নিয়ে গবেষণা করা। শাহবাগ থেকে চারুকলা পার হয়ে নজরুলের মাজার ধরে এগুলেই মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার আগে সমাজকল্যাণ বিভাগের ভবন। বন্ধুদের জন্য ডিপার্টমেন্টের খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি। আর তখনই সাদা অ্যালিয়ন গাড়ির আগমন। যাকে ঘিরে মূল রাস্তা থেকে মধুর ক্যান্টিন পর্যন্ত ভিড়।
ভাষা আন্দোলন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সত্তরের নির্বাচন পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ভূমিকা। ধারাবাহিক এ ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দেয় ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ভূমিকার কথা। আর দু হাজার পনের পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি। শুধুই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, মাদকে পূর্ণ।
বাহ, অনেক উন্নতি হয়েছে ছাত্র রাজনীতির। ছাত্র নেতারা এখানে নিজেদের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে না। কোন কাজ না করেও সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের বাড়ি, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র অনেক নেতাদেরও ছাড়িয়ে।
কদিন আগে উবার মোটোতে চড়েছি। কিছুদূর যাবার পর কর্তব্যরত সার্জেন্ট পুলিশ মোটো চালককে তার কাগজপত্র প্রদর্শন করতে বললে সে জানায়, সে ছাত্রলীগ করে। নরম সুরে কিছু বলে সার্জেন্টকে বাইকটি ছেড়ে দিতে দেখলাম। গ্রামের বাড়ি থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছি। নরসিংদী জংশন থেকে একদল ছাত্র ওঠেছে। সবার হাতেই টাচ ফোন। সবাই দেশ চালাবার নানা ফন্দি ফিরিস্তি নিয়ে আলোচনায় মত্ত। যখনই টিকিট দেখতে চেয়েছে তখন সমস্বরে বলে ওঠলো, বুঝুইন না। টিহিট ছাইন যে? মিঁউ মিঁউ সুরে টিকিট চেকার আফনেরা কই জন ইডাতো কইবাইন? এক হোমরার আওয়াজ, আ্যই সমানে যা। কথা কম। তারপর একের পর এক আশপাশের যাত্রীদের সিট দখল, নয়তো জোর করে চেপে বসে পরা চলে কিছুক্ষণ। এরা সবাই নাকি ছাত্রলীগ। মনে হলো, এটাতো খুউব সামান্য। যেখানে কিছুই হচ্ছে না ছাত্রলীগকে ট্যাক্স না দিলে সেখানে এটা অল্পই। সামগ্রিক চিত্রতো আরও খারাপ।
একটি জাতীয় দৈনিকে ছবি ছাপা হয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি ফিরছেন ঢাকায়। সিলেট এয়ারপোর্টে বিমান ঘিরে ভিড়। সবাই তাদের নেতাকে বিদায় দিচ্ছেন। বিমানবন্দরে কিসের নিরাপত্তা, কিসের কি? ছাত্রলীগ বলে কথা। অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভিড় দেখা যায় না বিমানবন্দরে। এগুলো ছোট ছোট মাসলম্যানগিরির উদাহরণ। এমনটা হাজার বলা যাবে। বর্তমান সময়ে খোদ দলের প্রধানই এ নিয়ে ফাইল তলব করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিশন বাণিজ্যের রেট নিয়ে আলোচনা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা আর টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন ছাত্রলীগের আয়ের প্রধান উৎস। অভিযোগ আকারে বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে এলেও এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতৃত্ব তা প্রমাণ করলেন। সবশেষ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণে কমিশন চাওয়ার ঘটনাটি আলোচনায় এলে সবার টনক নড়ে। গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেছেন, এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। ঈদের খরচের জন্যই তা চাওয়া হয়েছিল। ধন্যবাদ দিতে হয় জাবি উপাচার্যকে। তিনি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়ে এসেছেন। নাহলে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ শুধু মৌখিক আলোচনাতেই সীমাবব্ধ থাকত।
ছাত্রলীগের বাইরে অপর বড় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও আলোচনায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় হল দখল আর টেন্ডারবাজি নিয়ে তারাও ছিল আলোচনায়। তবে ছাত্রদল সবচেয়ে বয়সিদের দখলে থাকা সংগঠনের তকমা পেয়ে আসছে অনেক দিন থেকেই। এখানে কারও বয়স বাড়ে না। ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
কিন্তু সব ছাপিয়ে বড় একটি প্রশ্ন কি হবে এই ছাত্র রাজনীতি দিয়ে? যেখানে পড়াশোনা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই, ছাত্রদের কল্যাণে কোন ভূমিকা নেই, সমাজের আপদকালীন মুহূর্তে কোন তৎপরতা চোখে পরে না। ডেঙ্গু সমস্যা বলি, দুর্নীতি বলি, মাদকের ব্যাপকতা বলি কোথাও সমাজ বিনির্মাণে তাদের অবদান নেই। এমন ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আদৌ আছে কি?
No comments