দুধ পরীক্ষা নিয়ে কার কথা সঠিক
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্পাদিত দুধের পরীক্ষা সঠিকভাবে করা
হয়নি। তাহলে যারা পরীক্ষা করেছেন, তারা কেমন পরীক্ষা করলেন? এ ব্যাপারে
টেলিফোন ও ই-মেইলে প্রাপ্ত পাঠকের অভিমত...
ঢাকায় বসে গরুর দুধ সরাসরি পাওয়াটা তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো
বিষয়। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য গরুর পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধই শেষ ভরসা।
এখন যেসব কথা গণমাধ্যমে পড়ছি বা দেখছি তাতে এটাও খাওয়ানো বন্ধ রাখতে
হচ্ছে। কার ওপর নির্ভর করবে সাধারণ মানুষ! এত দিন বিএসটিআইয়ের কথা বিশ্বাস
করেছি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কথাও তো ফেলনা নয়। এই মুহূর্তে
আমি আমার পরিবারে বাজার থেকে কেনা দুধ খাওয়ানো বন্ধ রেখেছি। আমরা এর দ্রুত
সমাধান চাই। আমরা নিরাপদ খাদ্য চাই। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কড়া হস্তক্ষেপ চাই।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক
মুন্সিপাড়া, পার্বতীপুর, দিনাজপুর
গরুকে বাঁচাতে হলে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। তার জন্য
অ্যান্টিবায়োটিক নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু মানুষের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো
প্রাণীর দেহে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এটা তারা মানছে না। কোনো কোনো কোম্পানি
না মেনে ফিড তৈরি করে। ব্যবসার খাতিরে তারা বাংলাদেশের মানবপ্রজাতিকে
হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা বলছে, ফিডের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে
দিলে গরু মোটা হবে, তাজা হবে, অসুখ হবে না। এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
নেই। এটা বন্ধ করা দরকার।
মোছা. বিলকিছ আক্তার
সরকারি ম্যাটস, টাঙ্গাইল।
বিএসটিআই কোম্পানিগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে কোনো নমুনা দিয়ে
যেতে বললে তখন কোম্পানিগুলো চালাকি করে ভালোমানের পণ্যই দিয়ে যায়। তাতে
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভালো ফলাফলই আসে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
সরাসরি বাজার থেকেই দুধ সংগ্রহ করেছে। সেক্ষেত্রে আমার কাছে
বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আছে।
অমিত বণিক
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, উত্তরা, ঢাকা।
গবাদি পশুকে রোগমুক্ত রাখতে হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হয়। কিন্তু এই
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর কত দিন পর ওই পশুকে জবাই করতে পারবে বা এর মাংস ও
দুধ মানুষের ব্যবহারের জন্য ক্ষতিকর নয়, তা অবশ্যই দেখতে হবে। তবে কিছু
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার আশায় দুধের সঙ্গে ডিটারজেন্ট, আটা, ময়দা ও
পানি মিশিয়ে তা বাজারজাত করে থাকে। তাই দুধ পরীক্ষা নিয়ে গবেষকদের
পরীক্ষা যদি সঠিক হয়, তাহলে যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মোহাম্মদ শহীদউল্যা
হকভিলা, মেরাদিয়া, সিপাহীবাগ, ঢাকা।
এ দেশের ডেইরি ফার্মের মালিক, পাস্তুরিত দুধ ব্যবসায়ী এবং গুঁড়াদুধ
আমদানিকারকরাও ধোয়া তুলসি পাতা নয়। পাস্তুরিত দুধ নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চলছে তা কতটুকু সত্য তা প্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। মাঠপর্যায় থেকে দুধের নমুনা
সংগ্রহ করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সঠিক নিয়মে ও সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে
অ্যান্টিবায়োটিক ও জীবাণু উপস্থিতি পাওয়া গেলে তার প্রমাণ অবশ্যই জনসম্মুখে
প্রকাশ করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করি।
মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ,
সর্দারপাড়া, মুন্সীগঞ্জ।
দেশি গরুর দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন গবেষকের গবেষণার ফল
প্রকাশের পর এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। এমনকি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে গবেষণার
বিষয়টি পুরোপুরি জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের
সূত্রপাত হয়েছে। উক্ত গবেষণার প্রতি যদি আস্থা না থাকে তাহলে বিষয়টি নিয়ে
পুনরায় গবেষণা করা যেতে পারে এবং সরকারই এর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। তা না
হলে এর কোনো সমাধান হবে বলে মনে হয় না।
মাখরাজ খান,
সাঠুরিয়া, মানিকগঞ্জ।
আমরা মনে করি, দুধ পরীক্ষায় সঠিক তথ্য নিয়ে এগিয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাহলেই এর সঠিক সমাধান হবে।
মো. ওয়াহীদউল্লাহ,
স্টেডিয়াম সড়ক, সদর, ফেনী।
বিদেশ থেকে গুঁড়া দুধ আমদানিকে নিরুত্সাহ করে দেশি শিল্পকে প্রতিষ্ঠা
করতে হবে। তাহলেই দেশি দুগ্ধশিল্পের সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। সেজন্য
প্রত্যেক দুগ্ধ উত্পাদনকারী ব্যক্তি বা পরিবারকে নিবন্ধনের আওতায় আনা
অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া অবশিষ্ট চিকিত্সার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আনতে হবে।
পারভীন সুলতানা
রামচন্দ্রপুর, শৈনকুপা, ঝিনাইদহ
আমরা মনে করি, এই দুধের সঠিক পরীক্ষা বিদেশে গিয়ে হলেও এখনই করা জরুরি।
সাধারণ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। পরীক্ষা না হলে বিষয়টি
আমলে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
মো. আরিফুর রহমান
দেলপাড়া, নারায়ণগঞ্জ।
প্রাণিজ আমিষ হিসেবে দুধের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে
অন্তত এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত প্রত্যেকের। এখন সরকার এ বিষয়টিতে নজর দিয়েছেন
এবং বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত দুধের ভেজাল বন্ধ করতে নিরাপদ দুধের জোগান
নিশ্চিত করতে শুরু করেছেন। তাই তিনি আবার দুধের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে
বলেছেন। প্রথমবারের মতো এবারও নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই
নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। তাই
এতে কোনো সন্দেহ নেই—দুধে ভেজাল আছে। অন্যদিকে দুধে ভেজাল বন্ধে এখন
প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তোলার। ভেজাল দুধ ও
গাভিকে ভিটামিন নামক বিষাক্ত ওষুধ খাওয়া বন্ধে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ
না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা আশা করব, সরকার ও
জনগণ যৌথভাবে দুধে ভেজাল মেশানোর প্রক্রিয়া বন্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
তা না হলে প্রতি বছর বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালনের কোনো তাত্পর্য থাকবে না।
সাদিয়া সুলতানা মাহি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
স্কুল অ্যান্ড কলেজ,
সাভার, ঢাকা।
দুধ নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার
মধ্যে গড়মিল থাকার জন্য এ ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে বলা যায়,
প্রফেসরের পরীক্ষা ঠিক। কারণ, ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফারুক সাহেব তার
গবেষণার ফলাফল বিস্তারিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে তার সাক্ষাত্
চেয়েছেন, এতে তার সত্ সাহস আছে বলে ধরা যায়। ঢাকা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা গত
জুন মাসে বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে তাতে
অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এর পর ২৫ জুন ইউনিভার্সিটির ঔষধ
প্রযুক্তি বিভাগ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার থেকে জানানো হয় দুধের
নমুনায় তারা ডিটারজেন্ট ও তিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পান। পরে
একটি রিট করার ফলে বিএসটিআই-কে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএসটিআইয়ের প্যারা মিটারে বিষয়টি ধরা না পড়ায় কোর্ট আরো চারটি
ল্যাবরেটরিকে নির্দেশ দেয়। দুধ নিয়ে করা কোন পরীক্ষাটি সঠিক তা প্রমাণ করতে
হলে পৃথিবীর যেখানে সঠিক পরীক্ষা হয়, সেখানে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করালে আমরা
সঠিক ফলাফল পাব।
ইমরান আলী বাবু
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গরু আমাদের গৃহপালিত প্রাণী। গরুর আহরিত দুধ থেকে আমরা পুষ্টি পাই এবং
অর্থ উপার্জন করি। এখন এই গরু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে প্রচুর পরিমাণ দুধ
আহরণ করা হচ্ছে। দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে যদি হয় গরুর খাঁটি দুধ।
দুধ পরীক্ষা করার কথা কতটুকু সত্য আমরা জানি না। দুধে ভেজালকারীর অবশ্যই
শাস্তি হতে হবে।
ফারুক আহমেদ
বাঘমারা, রাজশাহী।
দুধ পরীক্ষার সঠিকতা এখনো স্পষ্ট হয়নি। দুধে ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ
সহনীয় মাত্রায় আছে কি না, তা দেশবাসীকে পরিষ্কারভাবে অবশ্যই জানানো
প্রয়োজন।
অ্যাডভোকেট এস কে মো. রমিজউদ্দিন
কাজী পাড়া, মিরপুর, ঢাকা।
কয়েক বছর যাবত্ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সরকারি ভর্তুকি প্রদান করায়
সেখানে দুগ্ধ উত্পাদন, বিশেষ করে গুঁড়া দুধ উত্পাদন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি
পেয়েছে। আমাদের দেশে তার আমদানি বেড়েছে। ফলে শুরু হয়েছে অনেক অনিয়ম। আর এই
অনিয়মের মধ্যে পড়েছে আমাদের দুগ্ধশিল্প। সেজন্য দেখা দিয়েছে দুধ পরীক্ষায়
সঠিক নিয়মের বিষয়টি। আমরা চাই সঠিক পরীক্ষা হলে নিশ্চয়ই তার প্রমাণ দিতে
এগিয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সবার আগে আমাদের দুগ্ধশিল্পকে রক্ষা করতে
হবে।
বজলুল
রিক, ধানমন্ডি, ঢাকা
দুগ্ধশিল্পের বিরাজমান যে সংকট, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের ডেইরি ফার্মকে জাতীয় ডাটাবেইজের আওতায় আনা আবশ্যক।
সুগন্ধী আক্তার
মতিঝিল, ঢাকা
আল্লাহ যেখানে গৃহপালিত পশুর দুধকে মানুষের খাদ্য হিসেবে হালাল করেছেন,
সেখানে একজন গবেষক দুধের গুণাগুণ সঠিকভাবে পরীক্ষা না করে খামারের দুধের
ভেতরে অসত্ উদ্দেশ্যে খুঁত বের করেছেন। তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে একমত।
হাজী খায়রুল কবীর
সভাপতি, বয়স্ক কল্যাণ সমিতি
মিরপুর-১০, ঢাকা।
এক্ষেত্রে আমাদের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। কেননা, এত বড়ো সমস্যার
সমাধান করা শুধু একা আমাদের কিংবা সরকারের কারোরই পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে
আমরা সকলে একত্রিত হয়ে দুধের পরীক্ষা/ভেজাল দুধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে
চাই—আর যাতে কখনোই এই দুধ নিয়ে ষড়যন্ত্র না হয়।
অ্যাডভোকেট মো. রবিউল হোসেন রবি
সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা
মতিঝিল, ঢাকা।
সম্প্রতি দুধ পরীক্ষা নিয়ে সঠিক তথ্য আছে বলে সাফ জানিয়েছেন সরকার। আর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বলছেন অন্যকথা। অতএব, বিদেশে গিয়ে উন্নত ল্যাবে
এর পরীক্ষা করা হোক।
রিফাত
শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়,
উত্তরা, ঢাকা।
দুধে ভেজাল যারা করে তারা অপরাধী। সুতরাং দুধ ভেজাল মুক্ত করা আবশ্যক।
ভেজাল দুধ পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে পরীক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এটি
একটি জাতীয় সমস্যা, প্রতিকার আবশ্যক।
শাহ্ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হিরো
কালিহাতি, টাঙ্গাইল।
দুধ পরীক্ষা নিয়ে মতানৈক্যের ধূম্রজালে পড়ে জনগণও বিভ্রান্তিতে হাবুডুবু
খাচ্ছেন। ফলে বিশেষভাবে শিশুদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি
পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং এ পক্ষ ও অন্যপক্ষের ওপর দোষারোপের অভ্যাস পরিহার
করে যত দ্রুত সম্ভব সরকার ও দুগ্ধমান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সামনা-সামনি
একত্রে বসে বিষয়টি সমস্যা সমাধান করবে বলে আশা করি। তা না হলে দুধের মতো
এতো পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম যে পুষ্টিহীনতায় ভুগবে,
এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আলহাজ মো. হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী (হিফজু)
সেক্রেটারি,
পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি
হাউজিং স্টেট, ২নং সেক্টর,
রাজশাহী
No comments