মোদির চীন চ্যালেঞ্জ by কান্তি বাজপাই
সাধারণ
নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
সম্ভবত চীনের সাথে একটা বাস্তবমুখী নীতি বজায় রাখবেন বলে মনে হয়, যেহেতু
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের একটা জটিলতা চলছে এবং দেশের অর্থনীতিও অনেকটা
ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।
২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোদির চীন নীতির কেন্দ্রে ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরী অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিধর দেশ – অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ জোট গঠন। জোট গড়াটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল না, বরং চীনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রভাব বাড়ানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। এটা করতে গিয়ে মোদি ভারতের জোট নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে গেছেন এবং এশিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে আসিয়ানের নেতৃত্বের যে ধারণা চলে আসছিল, সেখান থেকেও তিনি সরে গেছেন।
একইসাথে চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করেছে দিল্লী। ব্রিকসের নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) এবং এশিয়া ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) চালুর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে তারা, চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটো বাণিজ্যিক পার্ক নির্মাণ এবং চীনের সাথে আরও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক গঠনের ব্যাপারে চেষ্টা করেছে। তবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয়ার জন্য চীনের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি ভারত। দিল্লীর উদ্বেগ হলো বিআরআই এশিয়াতে চীনের প্রভাব বাড়াবে এবং এর সদস্য হলে ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্বশাসনের পরিধি কমে যাবে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে অবশ্য নীতির গতি বদলায় ভারত। উহানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের আগে ভারতে তিব্বতীদের কর্মকাণ্ড সীমিত করে আনেন মোদি এবং দালাই লামার ৬০তম বার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান বয়কট করা হয়। বিআরআই প্রসঙ্গে ভারতের বক্তব্যও নমনীয় হয়। এর সাংগ্রি লা বক্তৃতায় মোদি জোর দিয়ে বলেন যে, ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের টার্গেট চীন নয়। একই সাথে এশিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে আসিয়ানের প্রাধান্যও ফিরিয়ে আনে দিল্লী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের কোন অর্জন না হলেও চীনের সাথে ইতিবাচক আচরণ অব্যাহত রাখেন মোদি। এনডিবি থেকে খুব সামান্যই সুবিধা পাওয়া গেছে। একমাত্র ইতিবাচক বিষয় হলো এর প্রধান একজন ভারতীয়। এআইআইবি ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা হলো ভারত, কিন্তু ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। চীনের জন্য দুটো বাণিজ্য পার্ক নির্মাণের বিষয়টি দোলাচলের মধ্যে আছে এবং চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৭০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভারত তাহলে কেন চীনবিরোধী অবস্থান থেকে আসিয়ান কেন্দ্রিক জোট নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে আসলো?
২০১৮ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি ছিল। গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেস সে সময় অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যায়। দেশের ভেতরে মোদি একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এবং ২০১৭ সালের দোকলাম অচলাবস্থার পর সে অবস্থায় চীনের সাথে আরেকটি সঙ্ঘাতে জড়ানোর সামর্থ ছিল না ভারতের। দোকলামের ঘটনার পর চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের সামরিক শক্তি ও তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই দুই দেশ আবারও যে কোন ধরনের সঙ্ঘাতে জড়াতে ভারত সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারতো না।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছিল ভারতের। ভারতীয়দের জন্য ওয়াশিংটনের এইচ-১বি ভিসা প্রত্যাহার, তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধ, ইরানের তেল আমদানি বন্ধে ভারতকে চাপ দেয়া এবং ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনলে সামরিক সহযোগিতা কাটছাট করার হুমকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুন্দর অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ভারতের। তাছাড়া ২০১৭ সালে ম্যানিলাতে ইস্ট এশিয়া সম্মেলনে ট্রাম্পের সাথে মোদির সাক্ষাতটা তেমন ফলপ্রসু হয়নি। অন্য ক্ষেত্রে দেখা গেছে ট্রাম্প ক্যামেরার সামনে মোদিকে ব্যাঙ্গ করছেন।
মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে তার চীন নীতি থেকে কি আশা করতে পারি আমরা?
দেশে মোদি এখন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। ভারতের চীন নীতি সে ক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে পারতো, কিন্তু ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে এবং এ অবস্থায় বেইজিংয়ের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফল হবে ভয়াবহ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বহির্বিশ্বে সংরক্ষণবাদী আচরণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লীকে এখন চীনা বিনিয়োগ ও ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী দিনগুলোতেও চীনের প্রতি ভারতের উহান-পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানকেন্দ্রীক মতবিরোধ এবং নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সদস্যপদ নিয়ে বিরোধগুলো যথারীতি থাকবে এবং দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের উপরও নজর থাকবে ভারতের। তবে সীমান্ত ইস্যু, আস্থা বৃদ্ধি ও অর্থনীতির বিষয়ে ভারত এখানে বাস্তববাদী নীতি মেনে চলবে বলে মনে হয়। বিআরআই থেকে দূরে থাকলেও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের সাথে বিনিময় করবে ভারত। বৈশ্বিক ইস্যুতে – যেমন পরিবেশ বিপর্যয়, সংরক্ষণবাদ ও ডাটা স্থানীয়করণের মতো ইস্যুতে তারা চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।
এই নীতি অবস্থানের বিচ্যুতি ঘটাতে পারে আরেকটি সীমান্ত সঙ্ঘাত বা সাগরের কোন ঘটনা। দোকলামের পরে ভারত-চীন কূটনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থার একটা দিক হলো মোদি ও শি-এর মধ্যে ‘অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের’ আয়োজন করা যেখানে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সামরিক সমস্যা নিয়ে অনেক সরাসরি কথাবার্তা বলবেন। প্রথম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন হয়েছে উহানে। চলতি বছরের শেষ দিকে দ্বিতীয় সম্মেলনে অংশ নিতে ভারত আসার কথা রয়েছে শি-এর। উহান সম্মেলনের পর থেকে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে, তবে দুই পক্ষেরই এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কমান্ডার থেকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের সেনাদের সাথে সীমান্ত নীতির একটা সমন্বয় থাকে। দুই দেশের মুখপাত্ররাই এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস জানিয়েছেন।
সংক্ষেপে বললে, মোদির চীন নীতি সম্ভবত আগের সরকারগুলোর মতো বাস্তববাদী হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
>>>লেখক ‘সেন্টার অন এশিয়া অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশানে’র ডিরেক্টর এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক
২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোদির চীন নীতির কেন্দ্রে ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরী অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিধর দেশ – অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ জোট গঠন। জোট গড়াটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল না, বরং চীনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রভাব বাড়ানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। এটা করতে গিয়ে মোদি ভারতের জোট নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে গেছেন এবং এশিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে আসিয়ানের নেতৃত্বের যে ধারণা চলে আসছিল, সেখান থেকেও তিনি সরে গেছেন।
একইসাথে চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করেছে দিল্লী। ব্রিকসের নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) এবং এশিয়া ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) চালুর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে তারা, চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটো বাণিজ্যিক পার্ক নির্মাণ এবং চীনের সাথে আরও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক গঠনের ব্যাপারে চেষ্টা করেছে। তবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয়ার জন্য চীনের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি ভারত। দিল্লীর উদ্বেগ হলো বিআরআই এশিয়াতে চীনের প্রভাব বাড়াবে এবং এর সদস্য হলে ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্বশাসনের পরিধি কমে যাবে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে অবশ্য নীতির গতি বদলায় ভারত। উহানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের আগে ভারতে তিব্বতীদের কর্মকাণ্ড সীমিত করে আনেন মোদি এবং দালাই লামার ৬০তম বার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান বয়কট করা হয়। বিআরআই প্রসঙ্গে ভারতের বক্তব্যও নমনীয় হয়। এর সাংগ্রি লা বক্তৃতায় মোদি জোর দিয়ে বলেন যে, ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের টার্গেট চীন নয়। একই সাথে এশিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে আসিয়ানের প্রাধান্যও ফিরিয়ে আনে দিল্লী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের কোন অর্জন না হলেও চীনের সাথে ইতিবাচক আচরণ অব্যাহত রাখেন মোদি। এনডিবি থেকে খুব সামান্যই সুবিধা পাওয়া গেছে। একমাত্র ইতিবাচক বিষয় হলো এর প্রধান একজন ভারতীয়। এআইআইবি ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা হলো ভারত, কিন্তু ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। চীনের জন্য দুটো বাণিজ্য পার্ক নির্মাণের বিষয়টি দোলাচলের মধ্যে আছে এবং চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৭০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভারত তাহলে কেন চীনবিরোধী অবস্থান থেকে আসিয়ান কেন্দ্রিক জোট নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে আসলো?
২০১৮ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি ছিল। গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেস সে সময় অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যায়। দেশের ভেতরে মোদি একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এবং ২০১৭ সালের দোকলাম অচলাবস্থার পর সে অবস্থায় চীনের সাথে আরেকটি সঙ্ঘাতে জড়ানোর সামর্থ ছিল না ভারতের। দোকলামের ঘটনার পর চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের সামরিক শক্তি ও তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই দুই দেশ আবারও যে কোন ধরনের সঙ্ঘাতে জড়াতে ভারত সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারতো না।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছিল ভারতের। ভারতীয়দের জন্য ওয়াশিংটনের এইচ-১বি ভিসা প্রত্যাহার, তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধ, ইরানের তেল আমদানি বন্ধে ভারতকে চাপ দেয়া এবং ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনলে সামরিক সহযোগিতা কাটছাট করার হুমকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুন্দর অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ভারতের। তাছাড়া ২০১৭ সালে ম্যানিলাতে ইস্ট এশিয়া সম্মেলনে ট্রাম্পের সাথে মোদির সাক্ষাতটা তেমন ফলপ্রসু হয়নি। অন্য ক্ষেত্রে দেখা গেছে ট্রাম্প ক্যামেরার সামনে মোদিকে ব্যাঙ্গ করছেন।
মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে তার চীন নীতি থেকে কি আশা করতে পারি আমরা?
দেশে মোদি এখন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। ভারতের চীন নীতি সে ক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে পারতো, কিন্তু ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে এবং এ অবস্থায় বেইজিংয়ের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফল হবে ভয়াবহ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বহির্বিশ্বে সংরক্ষণবাদী আচরণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লীকে এখন চীনা বিনিয়োগ ও ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী দিনগুলোতেও চীনের প্রতি ভারতের উহান-পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানকেন্দ্রীক মতবিরোধ এবং নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সদস্যপদ নিয়ে বিরোধগুলো যথারীতি থাকবে এবং দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের উপরও নজর থাকবে ভারতের। তবে সীমান্ত ইস্যু, আস্থা বৃদ্ধি ও অর্থনীতির বিষয়ে ভারত এখানে বাস্তববাদী নীতি মেনে চলবে বলে মনে হয়। বিআরআই থেকে দূরে থাকলেও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের সাথে বিনিময় করবে ভারত। বৈশ্বিক ইস্যুতে – যেমন পরিবেশ বিপর্যয়, সংরক্ষণবাদ ও ডাটা স্থানীয়করণের মতো ইস্যুতে তারা চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।
এই নীতি অবস্থানের বিচ্যুতি ঘটাতে পারে আরেকটি সীমান্ত সঙ্ঘাত বা সাগরের কোন ঘটনা। দোকলামের পরে ভারত-চীন কূটনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থার একটা দিক হলো মোদি ও শি-এর মধ্যে ‘অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনের’ আয়োজন করা যেখানে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সামরিক সমস্যা নিয়ে অনেক সরাসরি কথাবার্তা বলবেন। প্রথম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন হয়েছে উহানে। চলতি বছরের শেষ দিকে দ্বিতীয় সম্মেলনে অংশ নিতে ভারত আসার কথা রয়েছে শি-এর। উহান সম্মেলনের পর থেকে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে, তবে দুই পক্ষেরই এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কমান্ডার থেকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের সেনাদের সাথে সীমান্ত নীতির একটা সমন্বয় থাকে। দুই দেশের মুখপাত্ররাই এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস জানিয়েছেন।
সংক্ষেপে বললে, মোদির চীন নীতি সম্ভবত আগের সরকারগুলোর মতো বাস্তববাদী হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
>>>লেখক ‘সেন্টার অন এশিয়া অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশানে’র ডিরেক্টর এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক
No comments