আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া: ভারতের জন্য অশুভ ইঙ্গিত! by অমিতাভ মুখার্জি
আফগানিস্তান
থেকে ভারতের জন্য অস্বস্তিকর খবর আসছে। সেখানে শান্তিপ্রক্রিয়া গতিশীলতা
লাভ করার প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি
হয়েছে। কারণ দেশটিতে উন্নয়নে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সেখানকার
দ্রুত পরিবর্তনশীল দৃশ্যপটে ভারত দৃশ্যত বিদায় নিতে যাচ্ছে। জম্মু ও
কাশ্মীরকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার জন্যও একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক
আফগানিস্তান প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কারণে আফগানবিষয়ক
কৌশলগত গভীরতা অর্জন করতে পেরেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে অন্তত কিছু সময়ের
জন্য হলেও পেছনে পড়ে গেছে ভারত।
এখন ইস্যুটি দুটি বিষয়ে এসে ঠেকেছে: মার্কিন/ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহার নিশ্চিত করে তালেবানের সাথে এমন চুক্তি এবং আশরাফ ঘানির সরকারের ভাগ্য। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তার সাথে সোভিয়েত-সমর্থিত নাজিবুল্লাহ সরকারের শেষ দিনগুলোর সাথে এর মিল রয়েছে। ওই সময় সম্পূর্ণ ক্লান্ত মস্কো তল্পি তল্প গুটিয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই সময়কার কাবুলের প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহকে তার হাতে ছেড়ে দিয়ে। তবে আশরাফ ঘানির জন্য পরিস্থিতি ততটা অসহায়জনক নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে তার পক্ষে আছে। তার হাতে একটি সেনাবাহিনী আছে। সেটা যত দুর্বলই হোক, এই সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের প্রায় ৫০ ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘানিকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি কাছাকাছি চলে আসায় (২০২০ সালের শুরু থেকেই সূচনা হবে) ডোনাণ্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্বিগুণ আগ্রহী হতে পারেন। কাজটি তারা প্রথমে ইরাক ও পরে সিরিয়ায় করেছে। তারা তাদের আঞ্চলিক প্রক্সিগুলোকে কঠিন পরিস্থিতিতে ছেড়ে এসেছে। আফগানিস্তান কি আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে, ১৯৯০-২০০১ সময়কালে তালেবান যেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল? আশরাফ ঘানি সরকারের ভাগ্য কী হবে? নানা ভাগে বিভক্ত পুরো দেশকে একটি ছাতার নিচে আনতে পারে পারবে কি তালেবান?
জাতিগত রেখায় বিভক্ত দেশটিতে তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। পশতু প্রাধান্যবিশিষ্ট তালেবান দক্ষিণ ও পূর্ব আফগানিস্তানের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, আর উজবেক, তাজিক, হাজারা শিয়াদের মতো গ্রুপগুলো দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশ্য আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ যুক্তরাষ্ট্র/ন্যাটো বাহিনী শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে প্রত্যাহারের জন্য সর্ব-আফগান উদ্যোগ চাচ্ছেন। তিনি বলছেন, আফগান প্রতিনিধিদের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তবে ধারণা করা হয়ে থাকে, সেটা হবে পাকিস্তান সমর্থনপুষ্ট কাবুলে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠা করার পন্থা।
এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে মার্কিন দূত জন বাস এক বিবৃতিতে বলেছেন যে আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। তার এই মন্তব্য ভারতের মনে প্রবল উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সাথে নয়া দিল্লির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচন হলে ঘানির জয়ের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা একইসাথে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্বাচন স্থগিত করার কথা বলছেন। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যাদের সাথে ভারতের ভালো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।
এ কারণেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সম্প্রতি ভারত সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর কাছে এ ধরনের ব্যবস্থার প্রতি ভারতের আপত্তির কথাও উত্থাপন করেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের নীতি নিয়ে কিছু ভুল করে ফেলেছে নয়া দিল্লি। পাকিস্তান-তালেবান অক্ষ প্রধানত সামরিক বিষয়াদি নিয়ে সম্পর্কিত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যখন ভারতের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন, তখন ভারত তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ভারত এখন পর্যন্ত কেবল উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে তিন বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু তবুও বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গ্রুপের নেতা যেমন মোহাম্মদ মোহাকিক, আতা মোহাম্মদ নূর, আবদুল রাশিদ দোস্তাম ও মোহাম্মদ ফাহিমের কাছ থেকে তেমন সমর্থন লাভ করেনি ভারত।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারতের জন্য রাশিয়ার সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রতি রাশিয়ার শীতল আচরণ প্রকৃত না হয়ে অনেকটাই কৌশলগত হয়ে পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মস্কোতে অনুষ্ঠিত সর্ব-আফগান সম্মেলনে কেবল তালেবানই নয়, সাবেক সব মুজাহিদ যুদ্ধবাজই অংশ নিয়েছে। ভারত এতে যোগ দেয়নি। তবে কয়েকজন যুদ্ধবাজের সাথে ভারতের হালকা সম্পর্ক রয়েছে। এদের সহায়তা ছাড়া আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া সফল হতে পারে না। দ্বিতীয় সম্মেলনটি হয়েছিল মে মাসে। এতে আশরাফ ঘানির বিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক গ্রুপ মস্কোতে তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাত করে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান গত মাসে বেইজিংয়ে মিলিত হয়। এখানে ভারতের অংশগ্রহণ অর্থপূর্ণ হতে পারত। তবে নয়া দিল্লির উপস্থিতি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়।
এখন বাতাসে এই খবর ভেসে বেড়াচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি এসে গেছে। এটিকে শান্তিচুক্তি না বলে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা বলাই ভালো। তালেবান যে শর্তটি মেনে নিয়েছে তা হলো তারা আলকায়েদা বা আইএসআইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় স্থান দেবে না। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বর্তমান ঘানি সরকারের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে এখনো অস্বীকার করে আসছে তালেবান। তালেবান জানে, আফগানিস্তানের চাবি এখন তাদের হাতে, তারা এখন তাদের ইচ্ছামতো শান্তি আলোচনার গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।
এ কারণেই গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্ব-আফগান সম্মেলনে আফগান সরকারের কোনো কর্মকর্তাকে অনুমোদন করেনি। আশরাফ ঘানি সরকারের অংশগ্রহণ কেবল ব্যক্তিগত পরিচয়ে অনুমোদিত ছিল। আগামী দিনগুলোতে তালেবানের হাত আরো শক্তিশালী হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছ থেকে সমর্থন সে পাচ্ছে আফগান পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে। ইসলামাবাদের ট্রাম্প কার্ড হলো তালেবানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবদুল ঘানি বারাদার। তার ওপর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান তালেবানকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে রাজি করিয়েছে এবং ইমরান খানের সরকার দক্ষিতার সাথে বারাদারের সফরের ওপর জাতিসংঘ বিধিনিষেধ পাস কাটিয়ে বিশেষ বিমানে কাতারে তালেবান ও খালিলজাদের মধ্যকার আলোচনার টেবিলে বারাদারের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে যাতে ইসলামি মৌলবাদ প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য তালেবান ও পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে রাশিয়া। ফলে এটি একটি অবাক করা বিষয়। কারণ গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়া দিল্লি বেশ ভালো জয়ই পেয়েছে। এই সময় রাশিয়ার প্রতিনিধি স্বীকার করেন যে কাশ্মীর হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু একইসাথে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত টুইটে দুই পক্ষকে জাতিসংঘ সনদ ও প্রস্তাবের আলোকে বিরোধের মীমাংসা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তানে কৌশলগত গভীরতা লাভ করা ভারতের জন্য অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু নয়া দিল্লির নীতি নির্ধারকদের জন্য এই কঠিন পরিস্থিতিতে সুযোগ সৃষ্টি করাটা আরো কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে।
এখন ইস্যুটি দুটি বিষয়ে এসে ঠেকেছে: মার্কিন/ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহার নিশ্চিত করে তালেবানের সাথে এমন চুক্তি এবং আশরাফ ঘানির সরকারের ভাগ্য। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তার সাথে সোভিয়েত-সমর্থিত নাজিবুল্লাহ সরকারের শেষ দিনগুলোর সাথে এর মিল রয়েছে। ওই সময় সম্পূর্ণ ক্লান্ত মস্কো তল্পি তল্প গুটিয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই সময়কার কাবুলের প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহকে তার হাতে ছেড়ে দিয়ে। তবে আশরাফ ঘানির জন্য পরিস্থিতি ততটা অসহায়জনক নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে তার পক্ষে আছে। তার হাতে একটি সেনাবাহিনী আছে। সেটা যত দুর্বলই হোক, এই সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের প্রায় ৫০ ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘানিকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি কাছাকাছি চলে আসায় (২০২০ সালের শুরু থেকেই সূচনা হবে) ডোনাণ্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্বিগুণ আগ্রহী হতে পারেন। কাজটি তারা প্রথমে ইরাক ও পরে সিরিয়ায় করেছে। তারা তাদের আঞ্চলিক প্রক্সিগুলোকে কঠিন পরিস্থিতিতে ছেড়ে এসেছে। আফগানিস্তান কি আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে, ১৯৯০-২০০১ সময়কালে তালেবান যেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল? আশরাফ ঘানি সরকারের ভাগ্য কী হবে? নানা ভাগে বিভক্ত পুরো দেশকে একটি ছাতার নিচে আনতে পারে পারবে কি তালেবান?
জাতিগত রেখায় বিভক্ত দেশটিতে তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। পশতু প্রাধান্যবিশিষ্ট তালেবান দক্ষিণ ও পূর্ব আফগানিস্তানের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, আর উজবেক, তাজিক, হাজারা শিয়াদের মতো গ্রুপগুলো দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশ্য আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ যুক্তরাষ্ট্র/ন্যাটো বাহিনী শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে প্রত্যাহারের জন্য সর্ব-আফগান উদ্যোগ চাচ্ছেন। তিনি বলছেন, আফগান প্রতিনিধিদের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তবে ধারণা করা হয়ে থাকে, সেটা হবে পাকিস্তান সমর্থনপুষ্ট কাবুলে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠা করার পন্থা।
এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে মার্কিন দূত জন বাস এক বিবৃতিতে বলেছেন যে আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। তার এই মন্তব্য ভারতের মনে প্রবল উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সাথে নয়া দিল্লির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচন হলে ঘানির জয়ের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা একইসাথে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্বাচন স্থগিত করার কথা বলছেন। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যাদের সাথে ভারতের ভালো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।
এ কারণেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সম্প্রতি ভারত সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর কাছে এ ধরনের ব্যবস্থার প্রতি ভারতের আপত্তির কথাও উত্থাপন করেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের নীতি নিয়ে কিছু ভুল করে ফেলেছে নয়া দিল্লি। পাকিস্তান-তালেবান অক্ষ প্রধানত সামরিক বিষয়াদি নিয়ে সম্পর্কিত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যখন ভারতের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন, তখন ভারত তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ভারত এখন পর্যন্ত কেবল উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে তিন বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু তবুও বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু গ্রুপের নেতা যেমন মোহাম্মদ মোহাকিক, আতা মোহাম্মদ নূর, আবদুল রাশিদ দোস্তাম ও মোহাম্মদ ফাহিমের কাছ থেকে তেমন সমর্থন লাভ করেনি ভারত।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারতের জন্য রাশিয়ার সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রতি রাশিয়ার শীতল আচরণ প্রকৃত না হয়ে অনেকটাই কৌশলগত হয়ে পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মস্কোতে অনুষ্ঠিত সর্ব-আফগান সম্মেলনে কেবল তালেবানই নয়, সাবেক সব মুজাহিদ যুদ্ধবাজই অংশ নিয়েছে। ভারত এতে যোগ দেয়নি। তবে কয়েকজন যুদ্ধবাজের সাথে ভারতের হালকা সম্পর্ক রয়েছে। এদের সহায়তা ছাড়া আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া সফল হতে পারে না। দ্বিতীয় সম্মেলনটি হয়েছিল মে মাসে। এতে আশরাফ ঘানির বিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক গ্রুপ মস্কোতে তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাত করে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান গত মাসে বেইজিংয়ে মিলিত হয়। এখানে ভারতের অংশগ্রহণ অর্থপূর্ণ হতে পারত। তবে নয়া দিল্লির উপস্থিতি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়।
এখন বাতাসে এই খবর ভেসে বেড়াচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি এসে গেছে। এটিকে শান্তিচুক্তি না বলে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা বলাই ভালো। তালেবান যে শর্তটি মেনে নিয়েছে তা হলো তারা আলকায়েদা বা আইএসআইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় স্থান দেবে না। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বর্তমান ঘানি সরকারের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে এখনো অস্বীকার করে আসছে তালেবান। তালেবান জানে, আফগানিস্তানের চাবি এখন তাদের হাতে, তারা এখন তাদের ইচ্ছামতো শান্তি আলোচনার গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।
এ কারণেই গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্ব-আফগান সম্মেলনে আফগান সরকারের কোনো কর্মকর্তাকে অনুমোদন করেনি। আশরাফ ঘানি সরকারের অংশগ্রহণ কেবল ব্যক্তিগত পরিচয়ে অনুমোদিত ছিল। আগামী দিনগুলোতে তালেবানের হাত আরো শক্তিশালী হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছ থেকে সমর্থন সে পাচ্ছে আফগান পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে। ইসলামাবাদের ট্রাম্প কার্ড হলো তালেবানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবদুল ঘানি বারাদার। তার ওপর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান তালেবানকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে রাজি করিয়েছে এবং ইমরান খানের সরকার দক্ষিতার সাথে বারাদারের সফরের ওপর জাতিসংঘ বিধিনিষেধ পাস কাটিয়ে বিশেষ বিমানে কাতারে তালেবান ও খালিলজাদের মধ্যকার আলোচনার টেবিলে বারাদারের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে যাতে ইসলামি মৌলবাদ প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য তালেবান ও পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে রাশিয়া। ফলে এটি একটি অবাক করা বিষয়। কারণ গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়া দিল্লি বেশ ভালো জয়ই পেয়েছে। এই সময় রাশিয়ার প্রতিনিধি স্বীকার করেন যে কাশ্মীর হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু একইসাথে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত টুইটে দুই পক্ষকে জাতিসংঘ সনদ ও প্রস্তাবের আলোকে বিরোধের মীমাংসা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তানে কৌশলগত গভীরতা লাভ করা ভারতের জন্য অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু নয়া দিল্লির নীতি নির্ধারকদের জন্য এই কঠিন পরিস্থিতিতে সুযোগ সৃষ্টি করাটা আরো কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক |
No comments