কত দূর যাবে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক? by ঝাউ গানচেং
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান
খান রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক জটিলতায় পড়েছিল।
ওয়াশিংটন ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ইসলামাবাদের ১.৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক
সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তাহলে কেন ইমরান খানকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানালেন
ট্রাম্প? তারা কী নিয়ে আলোচনা করলেন?
ট্রাম্প ও ইমরানের মধ্যকার সভায় শীর্ষ এজেন্ডা ছিল আফগানিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্ভবত আকাঙ্ক্ষা করছেন যে আফগানিস্তানের যুদ্ধ অবসান করার মাধ্যমে তিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকাজে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন।
এ কারণে পাকিস্তানের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। কাবুলের সাথে ওয়াশিংটনের মতবিনিময়ে ইসলাবাদ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তানে তার উপস্থিতি সম্প্রসারণ করতে চায়, তাহলেও তার পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন। ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প আফগানিস্তানে সৈন্য বাড়িয়ে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছিলেন। সৈন্য বাড়ার সাথে আরো বেশি বেশি সরঞ্জাম পাকিস্তানর ওপর দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন পড়ে।
পাকিস্তান সহযোগিতা না করলে আফগানিস্তানে যেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সহায়তা নিতেই হবে। তা করতে গেলে রাশিয়ার নানা বাধার মুখে পড়তে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ এখানকার বেশির ভাগ দেশে রাশিয়ার ভালো প্রভাব আছে।
বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যহারের জন্য তালেবানের সাথে আলোচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। আফগানিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে পাকিস্তানের সহায়তা অনিবার্য। আবার আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলেও প্রতিবেশী পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন। ইসলামাবাদ যদি ঝামেলা পাকায়, তবে ওয়াশিংটন কিছুই পাবে না।
ইমরানের সফরে আরেকটি আলোচ্য বিষয় ছিল পাকিস্তানে মার্কিন আর্থিক সহায়তা। আফগানিস্তানবিষয়ক আলোচনার রেশ ধরেই এটি উঠে আসে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ট্রাম্প টুইট করেছিলেন যে গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতো পাকিস্তানকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে। তারা মিথ্যা আর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এরপর তিনি ইসলামাবাদকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের সহায়তা স্থগিত করে দেন। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে এই সাহায্য পাকিস্তানের খুবই প্রয়োজন।
দুই নেতার বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমরা কী কাজ করি, তার ওপর নির্ভর করছে ওই টাকা ফেরত আসা। এ কারণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আবার শুরু হতে হলে আফগানিস্তান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ও তার প্রশাসনের ব্যাপারে পরিষ্কার চিত্র ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। ট্রাম্পের ২০১৭ সালের আগস্টে ঘোষিত নতুন দক্ষিণ এশিয়া কৌশলে ভারতের প্রতিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানে এখন ভিন্ন একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ট্রাম্প হয়তো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন।
তৃতীয়ত, ইসলামি বিশ্বে পাকিস্তান একটি প্রভাবশালী দেশ, আর একমাত্র মুসলিম দেশ যাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। তেহরান ও রিয়াদের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় পাকিস্তানের সাথে নতুন ধারণা নিয়ে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেন ট্রাম্প। ইমরান খানকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে ইসলাম প্রশ্নে মার্কিন নীতির কোনো ধারণা কাজ করে থাকতে পারে।
চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হতে পারে আরেকটি এজেন্ডা। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) পুরোপুরি বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন এটিকে চীনের সম্প্রসারণবাদী এজেন্ডা মনে করে। বিআরআই নিয়ে পাকিস্তানেও বিতর্ক রয়েছে।
অনেকে মনে করে, সাধারণ মানুষের জন্য এটি কল্যাণকর হবে না, বরং এটি পাকিস্তানকে ঋণের বোঝায় ফেলে দেবে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার সিপিইসি ও এর মূল বিষয় বিআরআইয়ের সাথে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
সংক্ষেপে বলা যায়, ইমরান খানের ওয়াশিংটন সফরে সম্পর্ক জোরদার হবে, তবে তা কতদূর যাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
>>>লেখক: গবেষণা ফেলো, সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ
ট্রাম্প ও ইমরানের মধ্যকার সভায় শীর্ষ এজেন্ডা ছিল আফগানিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্ভবত আকাঙ্ক্ষা করছেন যে আফগানিস্তানের যুদ্ধ অবসান করার মাধ্যমে তিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকাজে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন।
এ কারণে পাকিস্তানের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। কাবুলের সাথে ওয়াশিংটনের মতবিনিময়ে ইসলাবাদ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তানে তার উপস্থিতি সম্প্রসারণ করতে চায়, তাহলেও তার পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন। ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প আফগানিস্তানে সৈন্য বাড়িয়ে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছিলেন। সৈন্য বাড়ার সাথে আরো বেশি বেশি সরঞ্জাম পাকিস্তানর ওপর দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন পড়ে।
পাকিস্তান সহযোগিতা না করলে আফগানিস্তানে যেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সহায়তা নিতেই হবে। তা করতে গেলে রাশিয়ার নানা বাধার মুখে পড়তে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ এখানকার বেশির ভাগ দেশে রাশিয়ার ভালো প্রভাব আছে।
বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যহারের জন্য তালেবানের সাথে আলোচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। আফগানিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে পাকিস্তানের সহায়তা অনিবার্য। আবার আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলেও প্রতিবেশী পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন। ইসলামাবাদ যদি ঝামেলা পাকায়, তবে ওয়াশিংটন কিছুই পাবে না।
ইমরানের সফরে আরেকটি আলোচ্য বিষয় ছিল পাকিস্তানে মার্কিন আর্থিক সহায়তা। আফগানিস্তানবিষয়ক আলোচনার রেশ ধরেই এটি উঠে আসে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ট্রাম্প টুইট করেছিলেন যে গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতো পাকিস্তানকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে। তারা মিথ্যা আর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এরপর তিনি ইসলামাবাদকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের সহায়তা স্থগিত করে দেন। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে এই সাহায্য পাকিস্তানের খুবই প্রয়োজন।
দুই নেতার বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন যে আমরা কী কাজ করি, তার ওপর নির্ভর করছে ওই টাকা ফেরত আসা। এ কারণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আবার শুরু হতে হলে আফগানিস্তান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ও তার প্রশাসনের ব্যাপারে পরিষ্কার চিত্র ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। ট্রাম্পের ২০১৭ সালের আগস্টে ঘোষিত নতুন দক্ষিণ এশিয়া কৌশলে ভারতের প্রতিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানে এখন ভিন্ন একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ট্রাম্প হয়তো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন।
তৃতীয়ত, ইসলামি বিশ্বে পাকিস্তান একটি প্রভাবশালী দেশ, আর একমাত্র মুসলিম দেশ যাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। তেহরান ও রিয়াদের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় পাকিস্তানের সাথে নতুন ধারণা নিয়ে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেন ট্রাম্প। ইমরান খানকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে ইসলাম প্রশ্নে মার্কিন নীতির কোনো ধারণা কাজ করে থাকতে পারে।
চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হতে পারে আরেকটি এজেন্ডা। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) পুরোপুরি বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন এটিকে চীনের সম্প্রসারণবাদী এজেন্ডা মনে করে। বিআরআই নিয়ে পাকিস্তানেও বিতর্ক রয়েছে।
অনেকে মনে করে, সাধারণ মানুষের জন্য এটি কল্যাণকর হবে না, বরং এটি পাকিস্তানকে ঋণের বোঝায় ফেলে দেবে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার সিপিইসি ও এর মূল বিষয় বিআরআইয়ের সাথে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
সংক্ষেপে বলা যায়, ইমরান খানের ওয়াশিংটন সফরে সম্পর্ক জোরদার হবে, তবে তা কতদূর যাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
>>>লেখক: গবেষণা ফেলো, সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ
No comments