আইএস-এর নতুন ঘাঁটি হচ্ছে কাশ্মির? by রঞ্জন বসু
জঙ্গিবাদ
বিষয়ক মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টার’ (সিটিসি)
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তাদের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছিল, ইরানের খোরাসান
প্রদেশে সক্রিয় আইএস-এর (ইসলামিক স্টেট) একটি শাখা আফগানিস্তানকে তাদের
লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। তবে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা
বাতিলের পর আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন,
ইসলামিক স্টেট অব খোরাসানের (আইএসকে) মনোযোগ এখন ভূস্বর্গখ্যাত ওই উপত্যকায়
কেন্দ্রীভূত হতে পারে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত কেবল আফগানিস্তানেই কম করে ২১১টি হামলা চালিয়েছে খোরাসানভিত্তিক ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা। সেসব হামলায় অন্তত ১৫১১ জন নিহত হয়েছেন। ওই একই সময়ে পাকিস্তানেও তারা অন্তত ৮৩টি হামলা চালায়, হত্যা করে ৭০৬ জনকে। গত বছরের জুলাইয়ে বালুচিস্তানের এক নির্বাচনি সভায় পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী হামলায় দেড়শ মানুষ প্রাণ হারান। ওই হামলারও দায় স্বীকার করা হয়েছিল একই জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ক্যাবিনেট সচিবালয়ের বিশেষ সচিব ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন মনে করছেন, আইএসকে এখন কাশ্মিরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। তিনি বলছেন, ‘কাশ্মির উপত্যকায় ভারতের সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের ফলে সেখানকার প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো–যেমন লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মহম্মদ বা হিজবুল মুজাহিদিনের নেতৃত্ব প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলা চলে। কিন্তু অতীতেও আমরা বহুবার বিশ্বের বহু জায়গায় দেখেছি এ ধরনের ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা বেশি দিন থাকে না।’ তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যেটা হয় তা হলো, জঙ্গিরা একটা সংগঠন থেকে অন্য আর একটায় গিয়ে ভিড়ে, যেটাকে আমরা বলতে পারি এক রকমের ‘ল্যাটারাল মাইগ্রেশন’। ফলে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সংগঠনগুলো থেকে কাশ্মিরের জঙ্গিরা এখন আইএসকে বা আল কায়দায় গিয়ে ভিড়বে, তা মনে করার তাই যথেষ্ট কারণ আছে।’
‘মনে রাখতে হবে, ইরাক-সিরিয়াতেও ইসলামিক স্টেটের উত্থান হয়েছিল সেখানে আল কায়দা দুর্বল হওয়ার পরেই’, বলেন ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন।
কাশ্মিরে বিভিন্ন বিক্ষোভের সময় গত দু-চার বছরেও একাধিকবার ইসলামিক স্টেটের পতাকা দেখা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহুদিন আগে থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালেবান থেকে ইসলামিক স্টেট অব খোরাসানে (আইএসকে) জঙ্গিদের ‘ল্যাটারাল মুভমেন্ট’ শুরু হয়ে গেছে। স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্টরা বলছেন, আইএসকে কাশ্মিরকে তাদের ‘ভিলায়াত’ (পরদেশ) বলে মনে করে ঠিকই, কিন্তু চলতি মাসে ভারত তাদের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর থেকেই সেখানে যে অস্থিরতা চলছে তার সুযোগ নিতে আইএসকে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।
গার্ডিয়ান পত্রিকার চিত্রসাংবাদিক স্টেফানি গ্লিনস্কি গত ৮ আগস্ট তার এক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, আফগান তালেবান যদি সত্যিই শেষ পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে কোনও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাহলে কম করে হলেও তাদের ১০ শতাংশ ক্যাডার আইএসকে-তে যোগদান করবে। ওই প্রতিবেদনে তিনি উদ্ধৃত করেছিলেন সাবেক আফগান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লে. জেনারেল আবদুল হাদি খালিদকে–যিনি এখন আফগান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে যুক্ত। একই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খোরাসানে ইসলামিক স্টেটের এখন অন্তত চার থেকে ছয় হাজারের মতো সদস্য রয়েছে –যার এক-চতুর্থাংশই বিদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিকট ভবিষ্যতেই বিপুলভাবে আইএসকে-এর শক্তি বৃদ্ধি করবে। তখন তারা অবধারিতভাবে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে।
এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সাময়িকীতে সম্প্রতি বলা হয়েছে, লাদাখের শিয়া-অধ্যুষিত ও স্পর্শকাতর কার্গিল এলাকায় ইরান সম্প্রতি এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেন তারা সৌদি মদতপুষ্ট ওয়াহাবি-সালাফি ভাবধারায় প্রভাবিত না হয়। ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় আসাদপন্থী জোটের হয়ে লড়াই করার জন্য ইরান নাকি কার্গিলের বেশ কিছু শিয়া যুবককে রিক্রুট করেছে। একাধিক মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এরইমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইরাক বা সিরিয়া যেমন সৌদি বনাম ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, কাশ্মিরের পরিণতিও তেমন হতে পারে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত কেবল আফগানিস্তানেই কম করে ২১১টি হামলা চালিয়েছে খোরাসানভিত্তিক ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা। সেসব হামলায় অন্তত ১৫১১ জন নিহত হয়েছেন। ওই একই সময়ে পাকিস্তানেও তারা অন্তত ৮৩টি হামলা চালায়, হত্যা করে ৭০৬ জনকে। গত বছরের জুলাইয়ে বালুচিস্তানের এক নির্বাচনি সভায় পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী হামলায় দেড়শ মানুষ প্রাণ হারান। ওই হামলারও দায় স্বীকার করা হয়েছিল একই জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ক্যাবিনেট সচিবালয়ের বিশেষ সচিব ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন মনে করছেন, আইএসকে এখন কাশ্মিরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। তিনি বলছেন, ‘কাশ্মির উপত্যকায় ভারতের সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের ফলে সেখানকার প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো–যেমন লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মহম্মদ বা হিজবুল মুজাহিদিনের নেতৃত্ব প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলা চলে। কিন্তু অতীতেও আমরা বহুবার বিশ্বের বহু জায়গায় দেখেছি এ ধরনের ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা বেশি দিন থাকে না।’ তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যেটা হয় তা হলো, জঙ্গিরা একটা সংগঠন থেকে অন্য আর একটায় গিয়ে ভিড়ে, যেটাকে আমরা বলতে পারি এক রকমের ‘ল্যাটারাল মাইগ্রেশন’। ফলে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সংগঠনগুলো থেকে কাশ্মিরের জঙ্গিরা এখন আইএসকে বা আল কায়দায় গিয়ে ভিড়বে, তা মনে করার তাই যথেষ্ট কারণ আছে।’
‘মনে রাখতে হবে, ইরাক-সিরিয়াতেও ইসলামিক স্টেটের উত্থান হয়েছিল সেখানে আল কায়দা দুর্বল হওয়ার পরেই’, বলেন ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন।
কাশ্মিরে বিভিন্ন বিক্ষোভের সময় গত দু-চার বছরেও একাধিকবার ইসলামিক স্টেটের পতাকা দেখা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহুদিন আগে থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালেবান থেকে ইসলামিক স্টেট অব খোরাসানে (আইএসকে) জঙ্গিদের ‘ল্যাটারাল মুভমেন্ট’ শুরু হয়ে গেছে। স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্টরা বলছেন, আইএসকে কাশ্মিরকে তাদের ‘ভিলায়াত’ (পরদেশ) বলে মনে করে ঠিকই, কিন্তু চলতি মাসে ভারত তাদের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর থেকেই সেখানে যে অস্থিরতা চলছে তার সুযোগ নিতে আইএসকে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।
গার্ডিয়ান পত্রিকার চিত্রসাংবাদিক স্টেফানি গ্লিনস্কি গত ৮ আগস্ট তার এক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, আফগান তালেবান যদি সত্যিই শেষ পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে কোনও শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাহলে কম করে হলেও তাদের ১০ শতাংশ ক্যাডার আইএসকে-তে যোগদান করবে। ওই প্রতিবেদনে তিনি উদ্ধৃত করেছিলেন সাবেক আফগান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লে. জেনারেল আবদুল হাদি খালিদকে–যিনি এখন আফগান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে যুক্ত। একই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খোরাসানে ইসলামিক স্টেটের এখন অন্তত চার থেকে ছয় হাজারের মতো সদস্য রয়েছে –যার এক-চতুর্থাংশই বিদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিকট ভবিষ্যতেই বিপুলভাবে আইএসকে-এর শক্তি বৃদ্ধি করবে। তখন তারা অবধারিতভাবে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে।
এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সাময়িকীতে সম্প্রতি বলা হয়েছে, লাদাখের শিয়া-অধ্যুষিত ও স্পর্শকাতর কার্গিল এলাকায় ইরান সম্প্রতি এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেন তারা সৌদি মদতপুষ্ট ওয়াহাবি-সালাফি ভাবধারায় প্রভাবিত না হয়। ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় আসাদপন্থী জোটের হয়ে লড়াই করার জন্য ইরান নাকি কার্গিলের বেশ কিছু শিয়া যুবককে রিক্রুট করেছে। একাধিক মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এরইমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইরাক বা সিরিয়া যেমন সৌদি বনাম ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, কাশ্মিরের পরিণতিও তেমন হতে পারে।
No comments