হিন্দুবাদে প্রত্যাবর্তন কি ভারতের ঐক্য আনতে পারবে? by ডিং গং
ভারত
সরকার ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে একে জম্মু ও
কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্র-শাসিত এলাকায় ভাগ করে সরাসরি
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমনটা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় মোদির বিজেপি আবারো কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলের উত্তেজনা তীব্র করেছে।
এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যকার যোগাযোগ আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। নয়া দিল্লি বিশ্বাস করে যে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কার্যকরভাবে হ্রাস করা সম্ভব হবে। অবশ্য, এটি তাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপও হতে পারে। এর মাধ্যমে মোদি প্রশাসন দীর্ঘ মেয়াদে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পরিচিতি গঠন করার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে।
দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা যদি মোদি সরকারের গৃহীত নীতিগুলো পর্যালোচনা করি, তবে একটি সুস্পষ্ট ধারা দেখতে পাবো। আর তা হলো হিন্দুবাদে প্রত্যাবর্তন এবং জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য ধর্মীয় পরিচিতি ব্যবহার করা।
অবশ্য, ভারত হলো বহু ধর্মের দেশ। এখানে ইসলাম হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ ভাগ মুসলিম। মোদির কাশ্মীর পদক্ষেপটি সম্ভবত কথিত হিন্দু পরিচিতির ধারণাটি বাড়বে।
ক্ষমতাসীন বিজেপি পদক্ষেপটিকে ঐতিহাসিক বিজয় বিবেচনা করে। এটি এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মের বিশাল বিজয়ও। ফলে বহু ধর্মের দেশে এটি রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণাটি নস্যাত করবে।
মোদি প্রশাসনের পদক্ষেপ সহাবস্থান বিকশিত করা ও সেক্যুলারবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের একীভূত করার লক্ষ্যে নয়। এর ফলে ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদকে বাড়বে, মুসলিমদের জন্য সুযোগ হ্রাস করবে, এবং চূড়ান্তভাবে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সঙ্ঘাতে উস্কানি দেবে।
এটা ধর্মের ভিত্তিতে ধর্মীয় ও ভূরাজনৈতিক কাঠমোকে গুঁড়িয়ে দেয়ার খারাপ উদাহরণ। এটি ভারতকে একটি পুরনো সমস্যার মুখোমুখি করবে: আধুনি বহুসংস্কৃতির সেক্যুলার জাতিতে রাজনৈতিক পরিচয়ের স্থলাভিষিক্ত হবে ধর্মীয় পরিচিতি।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকাগুলো বহু ধর্মের বাস। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যকার বৈপরীত্য ও ধর্মের প্রচারের ইচ্ছা থেকেই এসব এলাকায় অনেক যুদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এসব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় আনা যায়, তা এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আর এটিই আঞ্চলিক ও জাতীয় স্থিতিশীলতার মূল সমস্যা।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। ধর্ম বা জাতিগত পরিচিতির মাধ্যমে বিভক্ত করার উপনিবেশ আমলের পদ্ধতিতে এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। ধর্মীয় পরিচিতি বাড়ালে সীমান্ত এলাকায় সঙ্ঘাত বাড়বে। এটা দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতার অনুকূল নয়।
সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ভারত যদি ধর্মীয় পরিচিতির ঊর্ধ্বে ওঠতে না পারে, আধুনিক সেক্যুলার রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে না পারে, তবে স্থিতিশীলতা আসা কঠিন।
অবশ্য পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে মধ্য যুগের মোগল রাজবংশ এবং এরপর ব্রিটিশ উপনিবেশ যুগে ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতেই কাজ করে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ভারত একটি উন্নয়নশীল শক্তি, স্ব-শাসিত মডেল নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে সে। এখন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সুসংহতকরণের ফলে দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অনিশ্চয়তা যোগ করবে। ভারত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ও ধর্মগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার স্থিতিশীল কোনো পথ খুঁজে পায় কিনা সে দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমনটা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় মোদির বিজেপি আবারো কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলের উত্তেজনা তীব্র করেছে।
এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যকার যোগাযোগ আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। নয়া দিল্লি বিশ্বাস করে যে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কার্যকরভাবে হ্রাস করা সম্ভব হবে। অবশ্য, এটি তাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপও হতে পারে। এর মাধ্যমে মোদি প্রশাসন দীর্ঘ মেয়াদে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পরিচিতি গঠন করার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে।
দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা যদি মোদি সরকারের গৃহীত নীতিগুলো পর্যালোচনা করি, তবে একটি সুস্পষ্ট ধারা দেখতে পাবো। আর তা হলো হিন্দুবাদে প্রত্যাবর্তন এবং জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য ধর্মীয় পরিচিতি ব্যবহার করা।
অবশ্য, ভারত হলো বহু ধর্মের দেশ। এখানে ইসলাম হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ ভাগ মুসলিম। মোদির কাশ্মীর পদক্ষেপটি সম্ভবত কথিত হিন্দু পরিচিতির ধারণাটি বাড়বে।
ক্ষমতাসীন বিজেপি পদক্ষেপটিকে ঐতিহাসিক বিজয় বিবেচনা করে। এটি এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মের বিশাল বিজয়ও। ফলে বহু ধর্মের দেশে এটি রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণাটি নস্যাত করবে।
মোদি প্রশাসনের পদক্ষেপ সহাবস্থান বিকশিত করা ও সেক্যুলারবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের একীভূত করার লক্ষ্যে নয়। এর ফলে ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদকে বাড়বে, মুসলিমদের জন্য সুযোগ হ্রাস করবে, এবং চূড়ান্তভাবে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সঙ্ঘাতে উস্কানি দেবে।
এটা ধর্মের ভিত্তিতে ধর্মীয় ও ভূরাজনৈতিক কাঠমোকে গুঁড়িয়ে দেয়ার খারাপ উদাহরণ। এটি ভারতকে একটি পুরনো সমস্যার মুখোমুখি করবে: আধুনি বহুসংস্কৃতির সেক্যুলার জাতিতে রাজনৈতিক পরিচয়ের স্থলাভিষিক্ত হবে ধর্মীয় পরিচিতি।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকাগুলো বহু ধর্মের বাস। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যকার বৈপরীত্য ও ধর্মের প্রচারের ইচ্ছা থেকেই এসব এলাকায় অনেক যুদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এসব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় আনা যায়, তা এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আর এটিই আঞ্চলিক ও জাতীয় স্থিতিশীলতার মূল সমস্যা।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। ধর্ম বা জাতিগত পরিচিতির মাধ্যমে বিভক্ত করার উপনিবেশ আমলের পদ্ধতিতে এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। ধর্মীয় পরিচিতি বাড়ালে সীমান্ত এলাকায় সঙ্ঘাত বাড়বে। এটা দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতার অনুকূল নয়।
সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ভারত যদি ধর্মীয় পরিচিতির ঊর্ধ্বে ওঠতে না পারে, আধুনিক সেক্যুলার রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে না পারে, তবে স্থিতিশীলতা আসা কঠিন।
অবশ্য পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে মধ্য যুগের মোগল রাজবংশ এবং এরপর ব্রিটিশ উপনিবেশ যুগে ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতেই কাজ করে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ভারত একটি উন্নয়নশীল শক্তি, স্ব-শাসিত মডেল নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে সে। এখন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সুসংহতকরণের ফলে দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অনিশ্চয়তা যোগ করবে। ভারত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ও ধর্মগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার স্থিতিশীল কোনো পথ খুঁজে পায় কিনা সে দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
>>গ্লোবাল টাইমস।
>>>লেখক: সিনিয়র এডিটর, পিপলস ডেইলি, সিনিয়র ফেলো, চনগিয়াঙ ইনস্টিটিউট ফর ফিন্যান্সিয়াল স্টাডিজ, রেনমিন ইউনিভার্সিটি অব চায়না।
No comments