বিচারের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষিত শিশুকে ফের ধর্ষণ, প্রবাসী আটক
সিলেটে ধর্ষিত এক শিশুকে বিচার পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে আটকে রেখে তার ওপর আবারও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে বিয়ানীবাজারের দিলগ্রামে অভিযান চালিয়ে সারোয়ার আহমেদ (৩৫) নামে এক লন্ডন প্রবাসীকে আটক করেছে র্যাব। আর ওই বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সদস্য ও র্যাব জানায়, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার এরালিগুল গ্রামের এক দরিদ্রের বাবার ছোট মেয়ে ওই শিশুটি। তাদের বড় ছেলে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রামের প্রভাবশালীরা তাদের গ্রামছাড়া করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি তার স্ত্রী ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ছেড়ে চলে যান। তবে ১২ বছরের ওই কন্যাশিশুকে নিরাপত্তার জন্য বড় ভাইয়ের কাছে রেখে যান। তিনি নিজে স্ত্রী ও শিশু সন্তানটিকে নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার দিলগ্রামে লন্ডন প্রবাসী সারোয়ার আহমেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শনিবার রাতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সামনে ধর্ষিত শিশুর বাবা যুগান্তরকে বলেন, 'কয়েক দিন পরই ভাই সামসুদ্দিনের ছেলে জমির উদ্দিন কৌশলে আমার মেয়েকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলার ছোটফৌজ গ্রামের মুজির উদ্দিন ও নারাইনপুর গ্রামের আজির উদ্দিনকে নিয়ে জমির তার ওপর পালাক্রমে যৌন নির্যাতন চালায়। পরে তারা আরও বেশ কয়েক দিন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।'
তিনি জানান, এক পর্যায়ে মেয়ে কৌশলে বিষয়টি আমাকে জানালে গত ২৭ এপ্রিল তাকে নিয়ে প্রবাসী সারোয়ারের বাড়িতে আশ্রয় নেই। ইতিমধ্যে শিশুটি তার মাকে তার ওপর চলা পাশবিক নির্যাতনের সব ঘটনা খুলে বলেন। বাবা বিষয়টি শুনে প্রবাসী সারোয়ারের সাহায্য চান। তিনি সাহায্যে এগিয়ে এসে ২৯ এপ্রিল শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটির ওপর যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পান এবং চিকিৎসা শেষে ৩০ এপ্রিল থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে বাধ সাধেন সারোয়ার। তিনি মেয়েটিকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আক্ষেপ করে ধর্ষিতার বাবা জানান, যার কাছে আশ্রয় নিলাম, সেই সারোয়ার কয়েক দিন পর আমার এই মেয়ের ওপরই পাশবিক নির্যাতন শুরু করেন। শিশুটি আবারও তার মায়ের কাছে বিষয়টি জানালে, বিষয়টি সারোয়ারের মা ও স্ত্রীকে জানানো হয়। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সারোয়ার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়িতে। এরপর তিনি শিশুটিকে রেখে দেন তার নিজ ঘরে। শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মা বাড়ি চলে যেতে চাইলে তাদের ওপর নির্যাতন চালান সরোয়ার। সবশেষ নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রকট হয় যে, মেয়েটিকে রেখেই পালিয়ে আসেন তারা। সারোয়ারের নির্যাতনে গুরুতর আহত শিশুর মাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বসেই মেয়েটির জন্য কাঁদছিলেন দরিদ্র বাবা। তার গ্রামের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমেদ বিষয়টি যুগান্তরকে জানান। পরে র্যাব-৯ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মুনির আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি ভিকটিমের মায়ের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে রাতেই অভিযানে যায়। রাত আড়াইটায় র্যাব বিয়ানীবাজার উপজেলার দিলগ্রামে সরোয়ারের বাড়িতে পৌঁছে সারোয়ারের পাশের কক্ষ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় শিশুটির সঙ্গে র্যাব কর্মকর্তারা কথা বলে সারোয়ারকে আটক করেন। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী র্যাব-৯ এর কোম্পানি কমান্ডার মুনির আহমেদ যুগান্তরকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। উদ্ধারের পর কথা হয় ভিকটিম শিশুটির সঙ্গেও। সে যুগান্তরকে তার ওপর বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি জানায়, হাত-পা বেঁধে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় চাচাতো ভাই জমির উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তারা ছাড়েনি। কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। সেখান থেকে মুক্ত হয়ে সারোয়ারের যৌন নির্যাতনের শিকার হয় দু'দিন। বিষয়টি সারোয়ারের মা এবং স্ত্রীকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানায় শিশুটি। দরিদ্র পিতা তার কন্যাশিশুর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
No comments