কপাল খুলছে মাইক পেন্সের?
রাশিয়া ইস্যু ও সদ্য বরখাস্ত এফবিআই পরিচালক জেমস কমি বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন এখন অনেকটা অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে। ট্রাম্প যদি অভিশংসিত হন, এ ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আসবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তবে পেন্স প্রেসিডেন্ট হলে বিষয়টা মন্দ হবে না। ইন্ডিপেনডেন্টের সাংবাদিক শন অ’ গ্রাদি এক নিবন্ধে বলেছেন, ট্রাম্পের তুলনায় পেন্স অনেক সতর্ক, আচরণে রক্ষণশীল এবং শিষ্টাচারসম্পন্ন। স্পষ্টত রিপাবলিকান দলের এলিট রাজনীতিকদের একজন তিনি। প্রত্যেক ভাইস প্রেসিডেন্টই জানেন, দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে যদি কোনো ট্র্যাজেডি ঘটে, তাহলে তিনিই সর্বোচ্চ পদটিতে বসবেন। তবে পেন্স নিজের ক্ষেত্রে ভাবতে পারেন, তিনি এখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে আর মাত্র একটা টুইট দূরে রয়েছেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভুল পদক্ষেপে পরিস্থিতি এখন এতটাই শোচনীয় যে, সেই ধরনের একটা ট্র্যাজেডি যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে। আর পেন্স হয়তো এই বলে শপথপাঠ করবেন, ‘আমি, মাইকেল রিচার্ড পেন্স, শপথ করছি যে, আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করব এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ সর্বশেষ ১৯৭৪ সালে এমনটা ঘটেছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে মার্কিন রাজনীতি এতটাই ঘোলাটে হয়ে উঠল যে, শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে যেতে হল। কারণ হিসেবে ১৯৭৪ সালের ৮ আগস্ট নিজের পদত্যাগের বক্তব্যে সতর্কতার সঙ্গে বলেন, ‘পরিশেষে আমার বক্তব্য হচ্ছে, ওয়াটারগেট ঘটনার কারণে আমি হয়তো কংগ্রেসের সমর্থন পাব না এবং যেভাবে জাতীয় স্বার্থে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা দরকার সেভাবে হয়তো পালন করতে পারব না।’ তার এ পদত্যাগের তিনি যে অভিশংসন বা কোনো জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুতির সম্মুখীন হতে চান না সে ব্যাপারে একটা সরাসরি স্বীকারোক্তি ছিল।
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যে অস্থিরতা দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এছাড়া কংগ্রেসে তার খুব বেশি রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। আর এ কারণেই প্রায়ই ওয়াশিংটন থেকে বের হয়ে এখানে ওখানে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। ট্রাম্পের এ সমর্থকরা ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের প্রতি এতটাই আত্মপ্রাণ যে, তারা সময় মতো তাদের মতামত জানান দেবেই। তবে নিক্সনের মতো ট্রাম্পের প্রতি জনগণের ভালোবাসা সত্ত্বেও অভিশংসনের মতো কঠিন প্রক্রিয়া এখন অনিবার্য হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটররা ট্রাম্পের জায়গায় আরেকজনকে বসানোর ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে দেখছেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জেরে নিক্সনের পদত্যাগের পর ১৯৯০-এর দশকে হোয়াইট হাইস ইন্টার্নি মনিকা লিউনোস্কির সঙ্গে অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের কারণে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তবে অভিশংসনের মতো পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি তাকে। তবে নিক্সন ও ট্রাম্পের তুলনায় ক্লিনটনের অপরাধ মূলত তুচ্ছই। নিক্সনের মতো ট্রাম্পও ন্যায়বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মতো অপরাধ করছেন। অদূর ভভিষ্যতে পেন্সের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নিক্সনের উত্তরসূরি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের মতো প্রেসিডেন্ট পেন্স কি তার পূর্বসূরির কোনো অপরাধ বা সংবিধান লংঘনের কারণে নিঃশর্ত ক্ষমতা মঞ্জুর করবেন কিনা।
No comments