লাগামহীন রমজান পণ্যের দাম
রমজান আসন্ন। কিন্তু ভোক্তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই। এবছরও রমজান পণ্য কিনতে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে। সরকারের সব সতর্কতা উপেক্ষা করে প্রতিবছরের মতো লাগামহীন বাড়ছে রমজানে ব্যবহৃত প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন সবজি, ডাল, চিনি, মাংস এবং ভোজ্য তেল। এক মাসের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। রমজান যত কাছে আসছে, দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ততই বাড়ছে। এর ফলে নির্ধারিত বেতনে চাকরিজীবী, আর নিন্মআয়ের পেশাজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় ওঠে। তবে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, রমজান এলেই একটি চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কারসাজির মাধ্যমে তারা মুনাফা হাতিয়ে নেয়। ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন উল্লেখযোগ্য ৫টি পণ্যের মধ্যে অন্যতম ছোলা। রোজা রাখেন কিন্তু ইফতারে ছোলা থাকবে না এমন চিন্তা অকল্পনীয়। সিংহভাগ রোজাদারই ছোলা পছন্দ করেন। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে- কেজি প্রতি ছোলা বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে কেজিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। একইভাবে বিভিন্ন মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ১২০ টাকা। এক মাস আগে এই পণ্যটির দাম ছিল ৭৫ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত। রমজানে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে অন্যতম উপাদান চিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চিনি মান ভেদে ৬৬ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। জানতে চাইলে বিজি প্রেসের কর্মকর্তা ইসমাইল শিকদার জানান, প্রতি মাসে তিনি ৩৩ হাজার টাকা বেতন পান। বাসা ভাড়া মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাদে কোনোভাবে পরিবার নিয়ে চলছে। এরপর নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ঢাকার শহরে টিকে থাকা কষ্টকর। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। তিনি আক্ষেপ করে, গ্রামে ভালো স্কুল থাকলে পরিবার দেশে পাঠিয়ে নিজে মেসে থাকতেন। এতে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় হতো। রমজানের অত্যাবশকীয় আরও একটি পণ্য ভোজ্য তেল। বৃহস্পতিবার শান্তিনগর বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা। এক মাস আগে বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০০ টাকা। এছাড়া আলোচ্য সময়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩২ টাকা,
মুড়ি ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি চিড়া ৫০-৬০ থেকে বেড়ে ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানে সার্বজনীন ব্যবহৃত একটি পণ্য হল খেজুর। মান ও নামের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ৭৫০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে কম দামের খেজুরের দাম বেশি বেড়েছে। বর্তমানে যেসব খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক মাসে এর দাম ১০০ টাকার নিচে ছিল। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সবজির দাম। এক মাস আগে কেজি প্রতি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতি কেজি শসার দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে দেশি শসা ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা এবং আদা ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনেপাতা রমজানে ইফতারই জমে না। বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার হয় এই পণ্যটি। কিন্তু এক মাসে ধনেপাতার দাম ৬০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। শতকরা দাম বৃদ্ধির হার ১৬৭ শতাংশ। এছাড়া গরুর মাংসের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ বাড়লে দাম স্থিতিশীল থাকার কথা। প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সরকার বেসরকারি মিলিয়ে পণ্যের জোগান দেয়া হয়। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে দাম বেশি বাড়ার কথা নয়। কিন্তু প্রতিবছরই অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র ক্রেতাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ায়।
No comments