খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নোংরা রাজনীতিতে সরকার -ফখরুল
কারাবন্দি
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে সরকার নোংরা রাজনীতি করছে বলে
অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন,
কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আমরা খবর
পাচ্ছি। আর এতে কেবল আমরাই নই, সারা দেশ ও জাতি উৎকণ্ঠিত। কিন্তু সরকার তার
সুচিকিৎসার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো নোংরা রাজনীতি করছে। এ বিষয়ে সরকারের
মন্ত্রীদের মন্তব্য ও কটূক্তি সকল শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং চক্রান্তের
বহিঃপ্রকাশ। সরকার দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জনগণকে
বিভ্রান্ত করতে চায়, বেগম জিয়াকে রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে
রাখতে চায়। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা সরকারকে বলবো- এখনো সময় আছে অবিলম্বে
দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে তার পছন্দনীয় চিকিৎসকের ও বিশেষায়িত
হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারাগারে খালেদা
জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব পুরোটাই সরকারকে বহন করতে
হবে। আমরা নোংরা রাজনীতি বাদ দিয়ে সরকারকে সোজা পথে তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি
জানাচ্ছি। গতকাল সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা
আলমগীর বলেন, সংবাদপত্র সূত্রে জানতে পেরেছি সরকার গঠিত মেডিকেল টিম
দেশনেত্রীকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রফেসর ডা. মালিহা রশিদের
নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম তাকে দেখতে যান। খালেদা জিয়া
বেশকিছু ব্যাধিতে আক্রান্ত। এর মধ্যে এক্যুইট রিউমেটিক আর্থারাইটিস তাকে
বেশ কষ্ট দিচ্ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা যে পরীক্ষাগুলো করেছেন সেখানে
এমআরআই ও অন্যান্য যেসব বিশেষায়িত পরীক্ষাগুলো করা দরকার তা করা হয়নি।
মাঝখানে তাকে একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে
নেয়া হয়েছিল, যেখানে তার এক্স-রে করানো হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন,
চিকিৎসকরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সে অনুযায়ী তার একটা বিশেষ ধরনের এমআরআই
(স্পাইনাল) করা জরুরি। এছাড়া তার হোল এবডুমিনের আল্টাসোনোগ্রাফি করা
প্রয়োজন। তার রক্তের বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সে জন্য তারা
(চিকিৎসকরা) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখানোর জন্য সুপারিশ করেছেন। সেগুলো
হচ্ছে- ইমুটোলজিস্ট, অর্থালমোজিস্ট চোখের জন্য (তার চোখ লাখ হয়ে গেছে),
ফিজিক্যাল মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন এবং ইন্টারন্যাল মেডিসিন। খালেদা জিয়াকে
এসব বিশেষজ্ঞ দেখানো জরুরি। মির্জা আলমগীর বলেন, চিকিৎসকরা অতি দ্রুত
খালেদা জিয়ার বিশেষ এমআরআই করার জন্য বলেছেন। তারা অবিলম্বে তার পছন্দনীয়
ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছেন। অথচ এ ব্যাপারে কারা
কর্তৃৃপক্ষ কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে ও জাতির সামনে দেননি। চিকিৎসকরা
কারাগারে দেশনেত্রীর জন্য যে অর্থোপেডিক বেড-এর সুপারিশ করেছেন তাও সরবরাহ
করা হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে’
বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের কড়া জবাব
দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের এই
বক্তব্য ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। তিনি বলেন, ১৮ই এপ্রিল চেয়ারপারসনের সঙ্গে
আমিসহ দলের তিনজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ বাতিল করে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া
হয়। ২০শে এপ্রিল খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও
সাক্ষাৎ করতে পারেনি। অথচ সুস্পষ্টভাবে কোনো কারণও দেখানো হয়নি। জেলের ভেতর
থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে মির্জা আব্বাসকে জানান, ‘আজ সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি
বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই দেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী।
মিথ্যা সাজানো মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে
তাকে এবং তার দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। গণবিচ্ছিন্ন ও
রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকারের ২০১৪ এর মতো একতরফা নির্বাচনের
প্রহসনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতা দখলই মূল উদ্দেশ্য। আইনের বিধানকে
সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশনেত্রীকে জামিন না দেয়া, কারাগারে তাকে প্রাপ্য
সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা, সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা- এটা অমানবিক। মির্জা
আলমগীর বলেন, যে কারাগারে, যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি।
সরকারি ডাক্তারদের সুপারিশকৃত অর্থোপেডিক বেড খালেদাকে সরবরাহ না করা,
ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসার সুযোগ না দেয়া এবং দলের নেতৃবৃন্দ ও
পরিবারের সদস্যদের তার সঙ্গে দেখা করতে না দেয়া অত্যন্ত হীনউদ্দেশ্যমূলক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস সরকারের নেই। তারা
এখন জনগণ থেকে একারণেই বিচ্ছিন্ন। তাই দেশনেত্রীর ওপর বলপ্রয়োগ করে এবং
দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে ২০১৪-এর মতো একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার
হতে চায়। ক্ষমতা দখল করে রাখতে চান। বাংলাদেশের সচেতন গণতন্ত্রকামী মানুষ
তাদের সে সুযোগ দেবে না। এখনো সময় আছে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে
তাকে তার পছন্দনীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন,
এত ভয় কেন? দেশনেত্রীকে মাঠে নামতে দিন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে
সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিন, যথেচ্ছ পুলিশ ব্যবহার বন্ধ করুন। দেখুন
আপনারা কোথায় দাঁড়াতে পারেন। রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস
আপনাদের নেই। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার
মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর
খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কেন্দ্রীয় নেতা কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস এ
সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আজ সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন বিএনপি নেতারা।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সাক্ষাৎটি রোববার দুপুরে হওয়ার কথা
রয়েছে। দুপুর ২টার পর বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ
পাবেন।
No comments