জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ হলেই নতুন গ্যাস সংযোগ by দীন ইসলাম
জাতীয়
গ্রিডে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যোগ হলেই বন্ধ গ্যাস সংযোগ চালু করবে
সরকার। এজন্য প্রাথমিকভাবে মে মাসকে টার্গেট করা হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা
তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী এরই মধ্যে বন্ধ গ্যাস সংযোগ চালুর বিষয়ে বলেছেন। তাই
মহেশখালীর কোয়ানক ইউনিয়নের ঘটিভাঙায় এখন দ্রুত নির্মাণ করা হয়েছে এলএনজি
সংযোগ পয়েন্ট (টাই-ইন পয়েন্ট)। গভীর সমুদ্রে জাহাজ নোঙ্গর স্থানটিতে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এলএনজি নিয়ে সমুদ্রে ভাসতে থাকা জাহাজের
সঙ্গে প্রথম সংযোগ ঘটবে টাই-ইন পয়েন্টের। এজন্য সমুদ্রের নিচ দিয়ে বিশেষ
পাইপলাইন বসানো হয়েছে। এরই মধ্যে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা
পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করেছে। এছাড়া জাতীয় গ্রিডে দেয়ার
জন্য আলাদা একাধিক পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এসব কাজ করছে ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠান জিওশান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আসা
এলএনজিভর্তি জাহাজটি অবস্থান করবে সমুদ্রের বেশ খানিকটা ভেতরে। যেখানকার গড়
গভীরতা ৩২ থেকে ৩৫ মিটার। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই, আবহাওয়া, ঝুঁকি এবং
স্থায়িত্ব পরীক্ষার জন্য সেখানে রাখা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি
জাহাজ। যেখানে নোঙর করবে এক্সিলারেট এনার্জির বিশেষ এফএসআরইউ। হিসাব
অনুযায়ী, প্রতিটি এফএসআরইউতে এলএনজি থাকবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। যা
সেখান থেকেই রূপান্তর করে গ্যাস পাওয়া যাবে ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই গ্যাস
দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটহারে গ্রিডে দেয়া হলে একেকটি জাহাজে চলবে ছয় দিনের কম।
আর, কাতার থেকে রওনা হয়ে এই পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে আরো দশ থেকে ১২ দিন।
তাই, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে হলে জাহাজ চলাচল, নোঙরসহ কড়া নজরদারির আওতায়
আনার জন্য কাজ চলছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে
দৈনিক গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে চাহিদা
রয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সংকট ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। এ
অবস্থায় এ মাসেই পেট্রোবাংলার উদ্যোগে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ এলএনজি
আমদানি শুরু হলে সংকট কমবে। একই বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে সামিট গ্রুপের আরো
৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি শুরুর কথা রয়েছে। পেট্রোবাংলার পূর্বাভাস
অনুযায়ী বছরের শেষ নাগাদ গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ ছাড়া দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকেও আরো বেশি গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করা
হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ গ্যাসের চাহিদা ও
সরবরাহ সমান সমান হওয়ার পথে হাঁটছে দেশ। এদিকে দুয়েক দিনের মধ্যে সরকারি
পর্যায়ে কাতার থেকে আনা ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসবোঝাই জাহাজ মহেশখালীতে নোঙর
করবে। আর এই এলএনজি এ মাসের শেষ দিকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে কাতারের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি
রাসগ্যাস থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পেট্রোবাংলা গেল বছর কাতার থেকে এলএনজি আমদানি
করতে চুক্তি করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী রাসগ্যাস ১৫ বছর ধরে প্রতিবছর ২৮ লাখ
টন করে এলএনজি বাংলাদেশে সরবরাহ করবে। এর দাম নির্ধারিত হবে আন্তর্জাতিক
বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম অনুযায়ী। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,
এলএনজি আমদানির জন্য প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর
মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ছয় হাজার ৩৬০ কোটি টাকার সংস্থান হবে।
বাকি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে ঋণ
নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
No comments