সিলেটে যেভাবে সোহাগের লাশ গুম করে ঘাতকরা by ওয়েছ খছরু
সিলেটে
নিহত সোহাগের লাশ গুম করার জন্য বস্তাবন্দি করা হয়েছিল। পাশের ফিসারিজ
থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল বস্তা। এরপর হাত-পা ভেঙে লাশ বস্তার ভেতর ভরা হয়।
সোহাগ খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দীপু ও সায়েম জবানবন্দিতে এ কথা
জানিয়েছে। সিলেটে আলোচিত এ খুনের ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিন জনই আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হরিদাস কুমারের আদালতে তারা এই
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর আগে তারা সিলেটের কোতোয়ালি থানা
পুলিশের কাছেও একই বক্তব্য দেয়। সিলেটের ঘাষিটুলা এলাকা অন্যতম ক্রাইম
স্পটে পরিণত হয়েছে। উঠতি বয়সী তরুণদের অপরাধের ‘স্বর্গরাজ্যে’ নদী তীরবর্তী
ওই এলাকা। ঘাষিটুলা এলাকার গোরস্থান রুট অন্যতম ক্রাইম জোন। বিকাল হলেই
উঠতি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় ওই এলাকা। এলাকার শাকিলসহ কয়েক তরুণ
এলাকাকে পরিণত করেছিল সন্ত্রাসী আস্তানায়। সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ২০ জনের
একটি সিন্ডিকেট ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। তারা ইয়াবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
পাশাপাশি গাজা ও ফেনসিডিলের হাট বসিয়েছিল। ওই সিন্ডিকেটের সব সদস্যরাও সেবন
করতো ইয়াবা। নেশায় বুঁদ থাকে সব সময়। ওই আস্তানার নিয়ন্ত্রক শাকিলের মাদক
ব্যবসার সবকিছু দেখভাল করতো ঘাষিটুলা এলাকার সোহাগ আহমদ। সোহাগের মূল বাড়ি
বগুড়া। সে তার পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বাস করছিল। নগরীর
কাজিরবাজার এলাকার মৎস্য আড়তে টোকাই হিসেবে কাজ করতো সে। পাশাপাশি শাকিলের
নিয়ন্ত্রণে থাকা মাদকের হাটের পরিচালনা করতো। মাদক ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ারা
নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বাঁধে। টাকা আটকে রাখে সোহাগ। এতে ক্ষুব্ধ হয় শাকিল
ও তার সিন্ডিকেট। তারা সোহাগের কাছে টাকার জন্য চাপ দেয়। ১লা বৈশাখ
সন্ধ্যায় কাপড় কেনার জন্য নিজ বাড়ি ঘাষিটুলা থেকে বের হয়েছিল সোহাগ। আর
বালুর মাঠ এলাকায় মোবাইল ফোনে তাকে ডেকে নেয় শাকিল। এ সময় সেখানে অবস্থান
করছিল গ্রেপ্তার হওয়া জয় আহমদ দীপু ও সায়েম আহমদসহ কয়েকজন। তর্কাতর্কির
একপর্যায়ে শাকিল গলা কেটে সোহাগকে খুন করে। ঘটনার দুই দিনের মাথায় পুলিশ
প্রথমে খুনের ঘটনার মূল হোতা শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। শাকিল আদালতে দায়
স্বীকার করে বক্তব্য দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল বাতেন অভিযান চালিয়ে
গ্রেপ্তার করেন জয় আহমদ দীপু ও সায়েম আহমদকে। সায়েম আহমদ নগরীর ঘাষিটুলা ও
জয় আহমদ দীপু বেতেরবাজার এলাকার বাসিন্দা। তারাও মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয়
সদস্য। গ্রেপ্তারের পরপরই সায়েম ও দীপু খুনের ঘটনা স্বীকার করে বক্তব্য
দেয়। পুলিশ জানায়- সায়েম ও দীপু বলেছে যে তারা খুনের ঘটনার শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত সেখানে ছিল। তারা সহযোগিতাও করেন। সোহাগকে হত্যার পর তারা লাশ নিয়ে
বেকায়দায় পড়ে। এ সময় তাদের একজন পার্শ্ববর্তী ফিসারিজ থেকে মাছের খাদ্য
রাখা বস্তা নিয়ে আসে। হাত-পা ভেঙে তারা সোহাগের লাশ ওই বস্তার ভরে। এরপর
তারা লাশ গুম করে রাখতেই গাভিয়ার খালে ফেলে দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল
বাতেন জানিয়েছেন- গ্রেপ্তার হওয়া শাকিল, দীপু ও সায়েম একই সিন্ডিকেটের
সদস্য। তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন রয়েছে। সবাই মিলে লাশ গুমের চেষ্টা চালায়।
তিনি বলেন- এখনো খুনের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন বাইরে রয়েছে। তারা এলাকা ছেড়ে
পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান শুরু করেছে। খুব
দ্রুত তারা গ্রেপ্তার হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। ঘাষিটুলা এলাকার
লোকজন জানিয়েছেন, গোরস্থান রুটে আগে সব সময় ১৫-১৬ জন তরুণ বসে আড্ডা দিতো।
তারা ছিনতাইসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েক মাস আগে তাদের নিষেধ করেছিলেন
মুরব্বিরা। কিন্তু ওই তরুণদের বেপরোয়া আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত ভয়ে আর কেউ
মুখ খুলেননি। এলাকায় তাদের হামলায় কয়েকজন যুবকও আহত হয়েছে। ১লা বৈশাখের
দিন থেকে হঠাৎ করে নীরব হয়ে পড়েছে গোরস্থান রুট এলাকা। সেখানে আর ওই
যুবকদের দেখা যাচ্ছে না। তারা অন্য কোথায়ও জড়ো হচ্ছে না। সোহাগ খুনের ঘটনার
পর এলাকার ওই তরুণদের রহস্যময় আচরণ প্রথমে তাদের প্রতি সন্দেহ দেখা দেয়।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ সোর্স নিয়োগ করে ওই এলাকায় মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার
করতে সক্ষম হয়েছে।
No comments