সিলেটে অপরাধে ‘নারী সিন্ডিকেট’ by ওয়েছ খছরু
সিলেটে
ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে নারীরা। তাদের ঘিরে তৈরি হয়েছে অপরাধ নেটওয়ার্ক।
আর এসব অপরাধে এখন অস্থির হয়ে পড়েছে নগর সিলেট। ইয়াবা ব্যবসা, বাসা-বাড়িতে
নিরাপদ সেক্স জোন, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ঘটাচ্ছে নারীরা। একই সঙ্গে
খুনের মহোৎসবে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সম্প্রতি সময়ে সিলেট পুলিশের হাতে অপরাধে
জড়িত এরকম বেশ কয়েকজন নারীর তথ্য এসেছে। এসব তথ্য এখন যাচাই-বাছাই করা
হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। এক সময় রাজনৈতিক গ্রুপের অপরাধে
কেঁপে উঠতে সিলেট। রাজনীতির আড়ালে সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন উপ গ্রুপের
প্রধানরা। সে দৃশ্যপটের অনেকখানি পরিবর্তন এসেছে। নারী কেন্দ্রিক অপরাধ
নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে সিলেটে। আর একেক সিন্ডিকেটের একেক নারী নিজেদের
সিন্ডিকেট প্রধানের দায়িত্ব পালন করছে। সিলেটের মীরাবাজারে মা ও ছেলে খুনের
ঘটনার পর পুলিশ বেশ কয়েকজন নারীর সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন
জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। সিলেটে ইয়াবা নেটওয়ার্কে নারীরা জড়িত রয়েছে সেটি অনেক
আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পরিষ্কার ছিল। স্বামীর ব্যবসা
নিরাপদে পরিচালনা করতে দক্ষিণ সুরমার অপরাধরাজ্যের কিছু এলাকায় নারীরা
বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তবে ইতিমধ্যে ওই সব নারীর মধ্যে অনেককেই র্যাব
গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশও দক্ষিণ সুরমা থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। বোরকার
আড়ালে এসব নারীদের অপরাধকর্ম নিয়ে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও
হতবাক। সিলেটের দিলারা বেগম। রোকেয়া খুনের ঘটনার পর থেকে সে আড়ালে চলে
গেছে। বাড়ি সুনামগঞ্জে। বসবাস করতো নগরীর নয়াসড়ক এলাকায়। মূল নাম দিলারা
হলেও সে নিজেকে রিনা নামে পরিচয় দিতো। নয়াসড়ক এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে
দিলারা সেক্স জোন গড়ে তুলেছিল। পুলিশ জানিয়েছে- দিলারা আগে সিলেটের সমাজের
উঁচুদরের মানুষের কাছে পতিতা ছিল। হোটেল-মোটেলে ছিল তার অবাধ যাতায়াত।
প্রায় দুই বছর ধরে দিলারা নিজেকে বদলে ফেলে। নিজে বাসা ভাড়া নিয়ে সে তার
বাসাকে গড়ে তুলেছিল অপরাধ জোনে। ইয়াবা নেটওয়ার্কের সঙ্গেও জড়িত দিলারা।
আরেক মহিলা হোসনে আরা বেগম। শহরতলীর ইলিয়াস মিয়ার স্ত্রী। হোসনে আরার বাড়িও
সুনামগঞ্জে। শহরতলীর কুমারগাঁওয়ের পীরপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা
চালিয়ে আসছিল। পীরপুরের ওই বাসার মালিক আজির উদ্দিন জানিয়েছেন- ‘হোসনে আরার
চরিত্রে কখনো মনে হয়নি সে অপরাধী। ধরাপড়ার পর আমরা বিষয়টি জানলাম। তার
বাসায় মাঝেমধ্যে অচেনা পুরুষ আসতো বলে জানান তিনি।’ নগরীর নয়াসড়ক এলাকায়
হেনা নামের আরো এক মহিলার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। মধ্য বয়সী হেনাও বাসা ভাড়া
নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। দিলারার সঙ্গেও হেনার সম্পর্ক ছিল। একই
এলাকার বাড়ি হওয়ার কারণে তারা একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড
চালাতো। শহরতলীর ইসলামপুরের মিনারা নামের আরেক মহিলা নানা অপরাধের হোতা।
তাকে ঘিরে একটি অপরাধী নারী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ওই নেটওয়ার্কে ইয়াবা
ব্যবসা জমজমাট। সিলেটের মীরাবাজারে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম
রূপম খুন হওয়ার পর থেকে মিনারা আত্মগোপনে চলে যায়। ইসলামপুর এলাকার লোকজন
জানান, বেশ কয়েকজন নারী রয়েছে মিনারার আস্তানায়। এক সময় মিনারা নগরীর
কুমারপাড়া এলাকায় বসবাস করতো। এরপর শিবগঞ্জ, মিরাবাজারসহ বেশ কয়েকটি
স্থানীয় বসবাস করেছে। এসব এলাকায়ও তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। শাম্মী নামের
একটি তরুণী নাটক শোবিজে এক সময় ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এখন সে পুরোপুরি
আন্ডারগ্রাউন্ডে। শাম্মীর বেশ কয়েকজন সহযোগীও সিলেটে নানা অপরাধের সঙ্গে
জড়িত। সিলেটের উপশহর এলাকায় রয়েছে নারীদের কয়েকটি সিন্ডিকেট। অভিজাত এলাকা
উপশহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে কয়েকজন নারী নিরাপদে অপরাধ কর্ম
পরিচালিত করছে। কখনো কখনো কেউ সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালেও চালাচ্ছেন এসব
ব্যবসা। নগরীর গার্ডেন টাওয়ারও বারবার আলোচনা এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে,
সিলেটের মিরাবাজারে মা ও ছেলে খুনের ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে প্রযুক্তিগত
অনুসন্ধান চালিয়ে রোকেয়া সঙ্গে সম্পর্ক থাকা বেশ কয়েকজন মহিলাকে শনাক্ত
করেছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা নগর ছেড়ে
পালিয়েছে। পরবর্তীতে তানিয়া গ্রেপ্তারের পর তার মুখ থেকেও এসব তথ্যের
সত্যতা মিলেছে। রোকেয়ার সঙ্গে দিলারার ইয়াবা নিয়ে ব্যবসায়ীক বিরোধ ছিল। এই
বিরোধের কারণের তানিয়া আক্তার তান্নিকে দিলারার আস্তানা থেকে সরিয়ে নিজের
নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল রোকেয়া। সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে
জানিয়েছেন- সিলেটের অপরাধী নারীদের ভয়ঙ্কর রূপ ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে।
এখন পুলিশ অপরাধ ঠেকাতে মূল হোতা নারীদের দিকে নজর দিয়েছে। তাদের সম্পর্কে
আরো খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এখনই এই অপরাধী নারীদের থামাতে না পারলে রোকেয়ার
মতো আরো ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি।
No comments