সুন্দরবন এখন স্ক্র্যাপ জাহাজের ভাগাড়, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য by মো. আবু সাঈদ শুনু
ওয়ার্ল্ড
হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন এখন স্ক্র্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজের ভাগাড়ে
পরিণত হয়েছে। একের পর এক ডুবছে পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজ। সুন্দরবনে নদীতে
পণ্যবোঝাই লাইটারেজ জাহাজডুবির ঘটনা আগে থেকে ঘটলেও ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে
এসে জাহাজডুবির ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যায়। সাড়ে ৩ বছরেরও কম সময়ের
মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম সংরক্ষিত এই বনের নদীতে তলা ফেটে ডুবেছে পণ্যবোঝাই
১০টি লাইটার জাহাজ। সুন্দরবন ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্ধারকারী
জলযান না থাকায় দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না ডুবে যাওয়া এসব জাহাজ ও
পণ্য। ডুবে যাওয়া এসব জাহাজে থাকা ফার্নেস অয়েল, সার, কয়লা, সিমেন্ট তৈরির
কাঁচামাল ক্লিঙ্কার, স্লাগ, জিপসান ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে
ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। ডুবে যাওয়া অনেক লাইটার জাহাজ
উত্তোলন না করায় দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে সুন্দরবনের নদ-নদী। বাগেরহাটের
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ১৯৯৪ সালের আগস্টে সুন্দরবনের কাছে পশুর
চ্যানেলের বানিশান্তা এলাকায় একটি তেলবাহী জাহাজ ডুবে গেলে প্রথম বড় ধরনের
বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে সুন্দরবন। ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তেল।
এরপর ১৯৮৮ সালের ১লা জুলাই মোংলা বন্দরের কাছে একটি তেলবাহী লাইটার কার্গো
জাহাজ দুর্ঘটনায় পশুর চ্যানেলে তেল ছড়িয়ে পড়লে সুন্দরবন আবারো বড় ধরনের
বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।
একই বছরের ১০ই আগস্ট সুন্দরবনের মাজহার পয়েন্টে অপর একটি তেলবাহী লাইটার কার্গো দুর্ঘটনায় পড়ে উচ্চমাত্রার সালফারযুক্ত তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে নদীতে পণ্যবোঝাই লাইটারেজ জাহাজডুবির ঘটনা আগে থেকে ঘটলেও ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসে জাহাজডুবির ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যায়। ওই বছরের ১২ই সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৬৩০ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে তলা পেটে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ ‘এমভি হাজেরা-২’। একই বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৬০০ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে তলা পেটে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ ‘এমভি য়ন শ্রী-৩’। একই বছরের ২৪শে নভেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের হরিণটানা এলাকায় তলা ফেটে ডুবে যায় তিনতলা বিশিষ্ট যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি শাহীদূত’। একই বছরের ৯ই ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শ্যালা নদীতে তলা ফেটে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ডুবে যায় ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের একটি অয়েল ট্যাংকার। সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নদ-নদী ও বনের প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে সুন্দরবন। এ ঘটনা দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলদের। এরপর ২০১৫ সালের ৫ই মে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের মরাভোলা নদীতে তলা পেটে ডুবে যায় ‘এমভি জাবালে নূর’ নামের সার বোঝাই একটি লাইটার জাহাজ। সুন্দরবনের নদীর পানিতে গলে ছড়িয়ে যায় ৫০০ টন পটাশ সার। একই বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে তলা ফেটে ডুবতে ডুবতে অন্য একটি লাইটার জাহাজের সহয়তায় মোংলায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় আরো একটি কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজ।
ওই একই বছরের ২৭শে অক্টোবর সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে তলা ফেটে ৫১০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় ‘এমবি জিয়ারাজ’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শ্যালা নদীতে ১ হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে তলা ফেটে ডুবে যায় ‘এমভি সি হর্স-১’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের মোহনায় ১ হাজার টন কয়লা বোঝাই ‘এমভি আইচগাতি’ নামের একটি লাইটার জাহাজ ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে তলা ফেটে ডুবে যায়। একই বছরের ৫ই জুন সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৮২৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল স্লাগ নিয়ে তলা ফেটে ডুবে যায় ‘এমভি সেবা’ নামের অপর একটি লাইটার জাহাজ। সর্বশেষ গত ১৫ই এপ্রিল ভোরে মোংলা বন্দর চ্যানেলের পশুর নদীর হারবাড়িয়ায় সুন্দরবনের মধ্যে ৭৫০ টন কয়লা বোঝাই একটি লাইটার জাহাজ এমভি বিলাস ডুবে যায়। কয়লাবোঝাই এই জাহাজডুবির পর এখনো শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান। সুন্দরবনে প্রতিটি জাহাজ জাহাজডুবির পর বন বিভাগের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে সুন্দরবনের নদ-নদীর মূল চ্যানেল না চিনে জাহাজ চালানো, ফিটনেসবিহীন স্ক্র্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজের চলাচল, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের কারনে সুন্দরবনে ডুবোচরে জাহাজ উঠিয়ে দেয়ায় স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোর তলা ফেটে দূর্ঘটনা ঘটছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের খামখেয়ালী পানার কারেনে এসব লাইটার মেয়াদ উর্তিন্ন জাহাজগুলো পন্য পরিবহন করে আসছে। সুন্দরবন বিভাগ প্রতিটি জাহাজডুবির পর বনের জলজপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্যের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে মামলা করলেও তা এখনো রয়েছে বিচারাধীন। অন্যদিকে ডুবে যাওয়া অনেক লাইটার জাহাজ উত্তোলন না করায় দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে সুন্দরবনের নদ-নদী। সুন্দরবন গবেষক ও সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম সুন্দরবনে একের পর এক লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যনেল ও নদ-নদীতে স্র্ক্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই বনের নদ-নদী এখন ডুবন্ত জাহাজের ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। এত করে সুন্দরবনের গাছের শ্বাসমূলসহ জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কয়েকশ’ প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণীর প্রজননে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ড. ফরিদ গত বছর ইউনেস্কোর বার্ষিক সভায় গৃহীত ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা’ দ্রুত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান। খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বারবার লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনে জলভাগে এভাবে পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবির কারণে জাহাজের পণ্য দ্রবীভূত হয়ে ম্যানগ্রোভ এ বনের পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে সুন্দরবনের কয়েক শত প্রজাতির মাছসহ জলজপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও পণ্য ওঠানো সম্ভব হলে সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অনেক কম হতো।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদ হাসান বলেন, সুন্দরবনে প্রতিটি জাহাজডুবির পর বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ভিত্তিতে সুন্দরবনের জলজপ্রাণিসহ জীববৈচিত্র্যে ক্ষতির কারণে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিরই বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, সুন্দরবন রক্ষাসহ মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়া তেল জাতীয় পদার্থ দ্রুত অপসারণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর ক্লিনার-১ নামে নিজস্ব বর্জ্য অপসারণকারী জাহাজ কিনেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের জন্য মোংলা বন্দর উদ্ধারকারী জলযান কেনার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। উদ্ধারকারী জলযান কেনার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দ্রুত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
একই বছরের ১০ই আগস্ট সুন্দরবনের মাজহার পয়েন্টে অপর একটি তেলবাহী লাইটার কার্গো দুর্ঘটনায় পড়ে উচ্চমাত্রার সালফারযুক্ত তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে নদীতে পণ্যবোঝাই লাইটারেজ জাহাজডুবির ঘটনা আগে থেকে ঘটলেও ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসে জাহাজডুবির ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যায়। ওই বছরের ১২ই সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৬৩০ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে তলা পেটে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ ‘এমভি হাজেরা-২’। একই বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৬০০ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে তলা পেটে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ ‘এমভি য়ন শ্রী-৩’। একই বছরের ২৪শে নভেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের হরিণটানা এলাকায় তলা ফেটে ডুবে যায় তিনতলা বিশিষ্ট যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি শাহীদূত’। একই বছরের ৯ই ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শ্যালা নদীতে তলা ফেটে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ডুবে যায় ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের একটি অয়েল ট্যাংকার। সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নদ-নদী ও বনের প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে সুন্দরবন। এ ঘটনা দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলদের। এরপর ২০১৫ সালের ৫ই মে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের মরাভোলা নদীতে তলা পেটে ডুবে যায় ‘এমভি জাবালে নূর’ নামের সার বোঝাই একটি লাইটার জাহাজ। সুন্দরবনের নদীর পানিতে গলে ছড়িয়ে যায় ৫০০ টন পটাশ সার। একই বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে তলা ফেটে ডুবতে ডুবতে অন্য একটি লাইটার জাহাজের সহয়তায় মোংলায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় আরো একটি কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজ।
ওই একই বছরের ২৭শে অক্টোবর সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে তলা ফেটে ৫১০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় ‘এমবি জিয়ারাজ’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শ্যালা নদীতে ১ হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে তলা ফেটে ডুবে যায় ‘এমভি সি হর্স-১’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের মোহনায় ১ হাজার টন কয়লা বোঝাই ‘এমভি আইচগাতি’ নামের একটি লাইটার জাহাজ ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে তলা ফেটে ডুবে যায়। একই বছরের ৫ই জুন সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৮২৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল স্লাগ নিয়ে তলা ফেটে ডুবে যায় ‘এমভি সেবা’ নামের অপর একটি লাইটার জাহাজ। সর্বশেষ গত ১৫ই এপ্রিল ভোরে মোংলা বন্দর চ্যানেলের পশুর নদীর হারবাড়িয়ায় সুন্দরবনের মধ্যে ৭৫০ টন কয়লা বোঝাই একটি লাইটার জাহাজ এমভি বিলাস ডুবে যায়। কয়লাবোঝাই এই জাহাজডুবির পর এখনো শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান। সুন্দরবনে প্রতিটি জাহাজ জাহাজডুবির পর বন বিভাগের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে সুন্দরবনের নদ-নদীর মূল চ্যানেল না চিনে জাহাজ চালানো, ফিটনেসবিহীন স্ক্র্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজের চলাচল, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের কারনে সুন্দরবনে ডুবোচরে জাহাজ উঠিয়ে দেয়ায় স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোর তলা ফেটে দূর্ঘটনা ঘটছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের খামখেয়ালী পানার কারেনে এসব লাইটার মেয়াদ উর্তিন্ন জাহাজগুলো পন্য পরিবহন করে আসছে। সুন্দরবন বিভাগ প্রতিটি জাহাজডুবির পর বনের জলজপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্যের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে মামলা করলেও তা এখনো রয়েছে বিচারাধীন। অন্যদিকে ডুবে যাওয়া অনেক লাইটার জাহাজ উত্তোলন না করায় দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে সুন্দরবনের নদ-নদী। সুন্দরবন গবেষক ও সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম সুন্দরবনে একের পর এক লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যনেল ও নদ-নদীতে স্র্ক্যাপ (মেয়াদ উত্তীর্ণ) জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই বনের নদ-নদী এখন ডুবন্ত জাহাজের ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। এত করে সুন্দরবনের গাছের শ্বাসমূলসহ জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কয়েকশ’ প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণীর প্রজননে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ড. ফরিদ গত বছর ইউনেস্কোর বার্ষিক সভায় গৃহীত ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা’ দ্রুত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান। খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বারবার লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনে জলভাগে এভাবে পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবির কারণে জাহাজের পণ্য দ্রবীভূত হয়ে ম্যানগ্রোভ এ বনের পানি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে সুন্দরবনের কয়েক শত প্রজাতির মাছসহ জলজপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও পণ্য ওঠানো সম্ভব হলে সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অনেক কম হতো।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদ হাসান বলেন, সুন্দরবনে প্রতিটি জাহাজডুবির পর বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ভিত্তিতে সুন্দরবনের জলজপ্রাণিসহ জীববৈচিত্র্যে ক্ষতির কারণে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিরই বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, সুন্দরবন রক্ষাসহ মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়া তেল জাতীয় পদার্থ দ্রুত অপসারণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর ক্লিনার-১ নামে নিজস্ব বর্জ্য অপসারণকারী জাহাজ কিনেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের জন্য মোংলা বন্দর উদ্ধারকারী জলযান কেনার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। উদ্ধারকারী জলযান কেনার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দ্রুত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
No comments