সন্তানের কান্না, মায়ের আকুতিতে ভারি পরিবেশ: গুম-হত্যার শিকার ৫০ পরিবার একমঞ্চে
‘কেউ
ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ করতেন চাকরি। বাড়ি, কর্মস্থল অথবা রাস্তা থেকে
তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ।
বছরের পর বছর তাদের অপেক্ষায় স্বজনরা। সেই অপেক্ষার যেন শেষ নেই। নিদারুণ
কষ্ট নিয়ে পার হচ্ছে তাদের প্রতিটি দিন।
স্বজনদের দাবি, তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। কিন্তু, এভাবে একজন মানুষ বছরের পর বছর নিখোঁজ হয়ে থাকবেন- এটি মেনে নেয়া যায় না।
দেশে নিখোঁজ হওয়া এবং নিখোঁজের পরে বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়া গেছে এমন ৫০ জনের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর গণশুনানিতে এ দাবি করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাদের কান্না আর আকুতিতে এক বেদনাঘন আবহ তৈরি হয়। নিখোঁজ হওয়াদের মা, ভাই-বোন আর স্ত্রী সন্তানের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। গুম হওয়া মানুষদের পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পক্ষ থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭২৭ জন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এলেও অধিকাংশই নিখোঁজ। তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ বার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্মারক লিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আয়োজকদের অন্যতম সংগঠক এনডিপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, আরও প্রায় ২৫টি পরিবারের আসার কথা ছিল। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে নিখোঁজ হওয়া পিন্টুর বোন রেহানা খানম মুন্নি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০১৪ সালে আমার ভাই পিন্টুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের কাছে ধর্না দিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একটা লোক হারিয়ে যাবে তার দায় কী সরকারের নেই? কার কাছে বিচার দেবো? ছেলের আশায় থেকে আমার মা পাগল হয়ে গেছেন।
নিখোঁজ হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজ ইসলাম আঁখি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রথমে আমরা ২০১৩ সালের আমাদের সন্তানদের সন্ধানের দাবিতে এই জাতীয় প্রেসক্লাবে আটজন মা ও কারও কারও বাবা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই ও বোন হাজির হয়েছিলাম। সময়ের ব্যবধানে সেই সংখ্যা বেড়ে ঢাকায় আমরা ২০ পরিবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছিলাম। সময় অনেক দূর গড়িয়ে গেছে, দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছর, বছর থেকে প্রায় অর্ধ-যুগের কাছাকাছি এসেও আজও আমরা আমাদের প্রিয়জনের কোনো সন্ধান পাইনি। আজ সারাদেশ থেকে গুম হওয়া শত শত পরিবারের প্রিয়জনরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আপনারা বলতে পারেন? আর কত অপেক্ষা করবো। সেদিনের অবুঝ শিশুরা এখন বুঝতে শিখেছে তাদের বুঝাতে পারি না তাদের বাবা কোথায় কী ভাবে আছে? গুম হওয়া মুন্নার বাবা নিজাম উদ্দিনের শেষ আকুতি কেউ রক্ষা করতে পারলো না। তিনি বেঁচে থাকতে বলেছিলেন, আমার মুন্নাকে ফিরিয়ে না দিলে তার কবর দেখিয়ে দিন। অসহায় পিতা সন্তানের কবর না দেখতে পেরে তিনি নিজেই কবরবাসী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সূত্রাপুরে পারভেজ হোসেনের পিতা ও শ্বশুর তারাও না ফেরার দেশে। খালেদ হাসান সোহেলের পুত্র আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খুঁজে, চঞ্চলের পুত্র আহাদ ঘুমের ঘরে বাবা বাবা বলে চিৎকার করে, সুমনের কন্যা আরোয়ান বাবার ছবির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, ড্রাইভার কাওসারের শিশুকন্যার দিকে তাকানো যায় না। তিনি আরও বলেন, আমার ভাই সুমনকে র্যাব-১ এর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ মাসুমের বোন ফাওজিয়া ইসলাম বলেন, তার ভাইকে ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৩ সালে উত্তরার একটি প্রাইভেট কোচিং থেকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশের নাম করে। মাসুম সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি আরও বলেন, সক্রিয় কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
শাহিনুর আলমের ছোট ভাই মেহেদি হাসান বলেন, আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা ছিল না। সে কোনো রাজনীতি করতো না।
২০১৪ সালের ২৯শে এপ্রিল র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাইনি। সাতদিন পর জানতে পারি আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। পরে আমরা বিচারের আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা করি। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে সেই মামলা এখনও ঝুলে আছে। কোনো শুনানি হয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর নদীতে লাশ পাওয়া যায় চট্টগ্রামের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল আলম নুরুর।
তার স্ত্রী সুমি আক্তার অনুষ্ঠানে বলেন, তার চোখের সামনেই পুলিশ পরিচয়ে তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসায় এসে কলিংবেল চেপে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় তিনি গেট খুলে দেন। খালি গায়েই তার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে এক সেকেন্ডও সময় দেয়া হয়নি। আমাদের আশা ছিল নিয়ে গেছে যখন কোর্ট থেকে জামিনের আবেদন করবো। কিন্তু তার আগেই ভোর ৪টায় খবর আসে তার লাশ পাওয়া গেছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। আমরা সকাল ৭টায় সেখানে পৌঁছাই। তার মাথায় দুটি গুলি করা হয়েছে। ৩ মাসের বাচ্চা রেখে গেছে সে। সেই বাচ্চা বড় হয়ে গেছে এখন। বাবা বলে কিছু নাই তার। মঞ্জুরুল মওলা নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী জানান, ‘২০১৫ সালে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২ দিন থানায় রাখা হয়। থানা থেকে দ্বিতীয় দিন রাতে নির্জন জায়গায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সেখানে মাথায় অস্ত্র ঠেকানো হয় বলেও জানান তিনি। এরপর তিনি সেখান থেকে কীভাবে জীবিত ফেরত এসেছেন সেই কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে, আমরা একটি সভ্য সমাজে বাস করি। একটি মানুষ দিন দুপুরে নিখোঁজ হয়ে যাবে রাষ্ট্র কোনো দায় নেবে না- এটা হতে পারে না। এই গুমের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, রাষ্ট্রের যারা কর্তাব্যক্তি আছেন তাদের বলবো জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে দেখে যান গুম হওয়া স্বজনেরা কীভাবে আর্তনাদ করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের উদ্ধার করতে। আর যারা বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য যারা দায়ী তাদের যেন বিচার করা হয়।
গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বৃদ্ধ মা হাজেরা খাতুনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ড. মাহফুজুল্লাহ, অধিকারের সভাপতি ড. অধ্যাপক সিআর আবরার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স ও অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানসহ প্রমুখ।
স্বজনদের দাবি, তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। কিন্তু, এভাবে একজন মানুষ বছরের পর বছর নিখোঁজ হয়ে থাকবেন- এটি মেনে নেয়া যায় না।
দেশে নিখোঁজ হওয়া এবং নিখোঁজের পরে বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়া গেছে এমন ৫০ জনের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর গণশুনানিতে এ দাবি করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে তাদের স্বজনদের ছবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাদের কান্না আর আকুতিতে এক বেদনাঘন আবহ তৈরি হয়। নিখোঁজ হওয়াদের মা, ভাই-বোন আর স্ত্রী সন্তানের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। গুম হওয়া মানুষদের পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পক্ষ থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭২৭ জন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এলেও অধিকাংশই নিখোঁজ। তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ বার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্মারক লিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আয়োজকদের অন্যতম সংগঠক এনডিপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, আরও প্রায় ২৫টি পরিবারের আসার কথা ছিল। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে নিখোঁজ হওয়া পিন্টুর বোন রেহানা খানম মুন্নি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০১৪ সালে আমার ভাই পিন্টুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের কাছে ধর্না দিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একটা লোক হারিয়ে যাবে তার দায় কী সরকারের নেই? কার কাছে বিচার দেবো? ছেলের আশায় থেকে আমার মা পাগল হয়ে গেছেন।
নিখোঁজ হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজ ইসলাম আঁখি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রথমে আমরা ২০১৩ সালের আমাদের সন্তানদের সন্ধানের দাবিতে এই জাতীয় প্রেসক্লাবে আটজন মা ও কারও কারও বাবা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই ও বোন হাজির হয়েছিলাম। সময়ের ব্যবধানে সেই সংখ্যা বেড়ে ঢাকায় আমরা ২০ পরিবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছিলাম। সময় অনেক দূর গড়িয়ে গেছে, দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছর, বছর থেকে প্রায় অর্ধ-যুগের কাছাকাছি এসেও আজও আমরা আমাদের প্রিয়জনের কোনো সন্ধান পাইনি। আজ সারাদেশ থেকে গুম হওয়া শত শত পরিবারের প্রিয়জনরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আপনারা বলতে পারেন? আর কত অপেক্ষা করবো। সেদিনের অবুঝ শিশুরা এখন বুঝতে শিখেছে তাদের বুঝাতে পারি না তাদের বাবা কোথায় কী ভাবে আছে? গুম হওয়া মুন্নার বাবা নিজাম উদ্দিনের শেষ আকুতি কেউ রক্ষা করতে পারলো না। তিনি বেঁচে থাকতে বলেছিলেন, আমার মুন্নাকে ফিরিয়ে না দিলে তার কবর দেখিয়ে দিন। অসহায় পিতা সন্তানের কবর না দেখতে পেরে তিনি নিজেই কবরবাসী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সূত্রাপুরে পারভেজ হোসেনের পিতা ও শ্বশুর তারাও না ফেরার দেশে। খালেদ হাসান সোহেলের পুত্র আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খুঁজে, চঞ্চলের পুত্র আহাদ ঘুমের ঘরে বাবা বাবা বলে চিৎকার করে, সুমনের কন্যা আরোয়ান বাবার ছবির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, ড্রাইভার কাওসারের শিশুকন্যার দিকে তাকানো যায় না। তিনি আরও বলেন, আমার ভাই সুমনকে র্যাব-১ এর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ মাসুমের বোন ফাওজিয়া ইসলাম বলেন, তার ভাইকে ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৩ সালে উত্তরার একটি প্রাইভেট কোচিং থেকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশের নাম করে। মাসুম সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি আরও বলেন, সক্রিয় কোনো দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
শাহিনুর আলমের ছোট ভাই মেহেদি হাসান বলেন, আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা ছিল না। সে কোনো রাজনীতি করতো না।
২০১৪ সালের ২৯শে এপ্রিল র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাইনি। সাতদিন পর জানতে পারি আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। পরে আমরা বিচারের আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা করি। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে সেই মামলা এখনও ঝুলে আছে। কোনো শুনানি হয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর নদীতে লাশ পাওয়া যায় চট্টগ্রামের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল আলম নুরুর।
তার স্ত্রী সুমি আক্তার অনুষ্ঠানে বলেন, তার চোখের সামনেই পুলিশ পরিচয়ে তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসায় এসে কলিংবেল চেপে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় তিনি গেট খুলে দেন। খালি গায়েই তার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে এক সেকেন্ডও সময় দেয়া হয়নি। আমাদের আশা ছিল নিয়ে গেছে যখন কোর্ট থেকে জামিনের আবেদন করবো। কিন্তু তার আগেই ভোর ৪টায় খবর আসে তার লাশ পাওয়া গেছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। আমরা সকাল ৭টায় সেখানে পৌঁছাই। তার মাথায় দুটি গুলি করা হয়েছে। ৩ মাসের বাচ্চা রেখে গেছে সে। সেই বাচ্চা বড় হয়ে গেছে এখন। বাবা বলে কিছু নাই তার। মঞ্জুরুল মওলা নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী জানান, ‘২০১৫ সালে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২ দিন থানায় রাখা হয়। থানা থেকে দ্বিতীয় দিন রাতে নির্জন জায়গায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সেখানে মাথায় অস্ত্র ঠেকানো হয় বলেও জানান তিনি। এরপর তিনি সেখান থেকে কীভাবে জীবিত ফেরত এসেছেন সেই কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে, আমরা একটি সভ্য সমাজে বাস করি। একটি মানুষ দিন দুপুরে নিখোঁজ হয়ে যাবে রাষ্ট্র কোনো দায় নেবে না- এটা হতে পারে না। এই গুমের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, রাষ্ট্রের যারা কর্তাব্যক্তি আছেন তাদের বলবো জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে দেখে যান গুম হওয়া স্বজনেরা কীভাবে আর্তনাদ করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের উদ্ধার করতে। আর যারা বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য যারা দায়ী তাদের যেন বিচার করা হয়।
গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বৃদ্ধ মা হাজেরা খাতুনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ড. মাহফুজুল্লাহ, অধিকারের সভাপতি ড. অধ্যাপক সিআর আবরার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স ও অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানসহ প্রমুখ।
No comments