গুজরাট গণহত্যায় অভিযুক্তরা খালাস: সুবিচার না পাওয়া মুসলিমরা হতাশ
নারদা পাটিয়া দাঙ্গা মামলার 'মূলহোতা' বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি বেকসুর খালাস |
২০০২ সালে ভারতের গুজরাটের নারোদা পাটিয়ায় ভয়াবহ
গণহত্যায় হাইকোর্টের রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমরা হতাশ হয়েছেন। অভিযুক্তরা
রেহাই পাওয়ায় তারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা সুবিচার পেলেন না
বলে আক্ষেপ করেছেন।
নারোদা পাটিয়া
গণহত্যা মামলায় গুজরাট হাইকোর্ট গতকাল (শুক্রবার) এক রায়ে রাজ্যের তৎকালীন
মন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। অন্যদিকে,
হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সাবেক নেতা বাবু বজরঙ্গিকে নিম্ন আদালতের দেয়া
যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ২১ বছর করা হয়েছে।
নারদা পাটিয়া দাঙ্গা মামলার শুনানিতে মায়া কোদনানিকে ওই ঘটনার ‘মূলহোতা’ বলে চিহ্নিত করেছিল নিম্ন আদালত |
গুজরাট হাইকোর্ট
জানায়, সাক্ষীদের বক্তব্যে যথাযথ মিল না থাকায় তথ্যপ্রমাণের অভাবে মায়া
কোদনানিকে বেকসুর খালাস দেয়া হল। কিন্তু এর আগে নিম্ন আদালত
নারদা পাটিয়া দাঙ্গা মামলার শুনানিতে মায়া কোদনানিকে ওই ঘটনার ‘মূলহোতা’
বলে চিহ্নিত করেছিল। একইসঙ্গে অভিযুক্ত বাবু বজরঙ্গিকে যাবজ্জীবন সাজা
দিয়েছিল নিম্ন আদালত। গতকাল (শুক্রবার) সেই সাজা কমিয়ে তাকে ২১ বছরের সশ্রম
কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট।
মায়া কোদনানি ছাড়াও বিশেষ সিট আদালতে সাজা হয়েছিল এমন মোট ১৮ জনকে হাইকোর্ট বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে।
মায়া কোদনানি গুজরাটে
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-মন্ত্রিসভায় নারী ও শিশু উন্নয়ন
দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার
পরবর্তী সময়ে নারোদা পাটিয়ায় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, নিজে উপস্থিত থেকে
তিনি সেই দাঙ্গা পরিচালনা করেছিলেন।
রায়ে ক্ষুব্ধ এক মুসলিম নারী |
আদালতের ওই রায়ের পর নারোদো পাটিয়ার ভয়াবহ ওই গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমরা তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
মায়া কোদনানির রেহাই প্রসঙ্গে রুকসানা
নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী বলেন, তার পরিবারের দু’জনকে হত্যা করা হয়েছিল।
তার মা ও বোনসহ আশেপাশের অনেককে সেসময় হত্যা করা হয়েছিল। ওই রায়ে তারা খুশি
নন। কারণ, একজন নারী হয়ে নারীদের সঙ্গে সেদিন পাশবিক উন্মুক্ত তাণ্ডব
ঘটিয়েছিলেন। লোকদের হত্যা করিয়েছিলেন। নারী হয়ে উনি নারীর সম্মান দেননি।
যদি এ ধরণের আচরণ ওনার সঙ্গে বা ওর মেয়ের সঙ্গে হতো তাহলে কী হতো? এ ধরণের
ব্যক্তিদের রেহাই দেয়া হলে হৃদয়ে আঘাত লাগে।
শরিফা বিবি শেখ নামে
এক ক্ষতিগ্রস্ত নারী বলেন, আমার ১৬ বছরের ছেলেকে আমার সামনে হত্যা করা
হয়েছিল। তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে তাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
আদালতের রায়ে হৃদয় ভারাক্রান্ত।’
আদালতের রায়ে হতাশ এক মুসলিম নারী |
দাঙ্গায় সাজাপ্রাপ্ত
বাবু বজরঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মায়া কোদনানির মতো ওকেও ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমরা সুবিচার পাইনি। আমরা
উদ্বিগ্ন যে ওরা ছাড়া পাওয়ার পরে ফের ওরকম কাজ করতে পারে। কোনো নেতা আমাদের
কষ্টের কথা শুনতে আসেননি। দোষীদের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত।’
ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী বলেন, ‘আমাদের
পরিবারের ৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদেরকে কেটে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
আমাদের চোখের সামনে যাদেরকে এসব করতে দেখেছি আজ তাদেরকে নির্দোষ বলা হচ্ছে!
কীভাবে তারা নিরপরাধ হতে পারে? আদালতে আমরা সাক্ষী দিয়েছি, বিচারকের সামনে
আমরা বলেছিলাম, আমাদের চোখের সামনে ওরা এসব কাজ করেছিল, ওদেরকে আমরা চিনি।
এরা এভাবে হত্যা করেছে, কেটেছে, তরুণীদের ধর্ষণ করেছিল। ওদেরকে আজ নিরপরাধ
বলা হচ্ছে! কোনো সুবিচার পেলাম না আমরা।’
ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারী
আরও বলেন, ‘ওরা যদি দোষী না হয় তাহলে দোষী কারা? আমরা কী তাহলে অপরাধী?
আমাদের গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেছে, আমাদের চোখের সামনে ছোট ছোট মাসুম
শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে। আমরা কী তাহলে
অপরাধী? যদি ওদের অপরাধ না পাওয়া যায় তাহলে ওদের বেকসুর রেহাই দিয়ে আমাদের
সঙ্গে যে জুলুম হয়েছে সেজন্য আমাদের গ্রেফতার করুন। আপনারা যখন ওদের সাজা
দিতে পারবেন না তাহলে এসবের সাজা আমাদের দিন।’
২০০২ সালে গুজরাটের নারোদা পাটিয়ায় ভয়াবহ গণহত্যায় ৯৭ জন মুসলিম নিহত ও বহু মানুষ হয়েছিলেন।
No comments