রাসায়নিক বর্জ্যে ফসল নষ্ট : সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর টনক নড়বে কবে?
একটি
কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চঁাদগাঁও গ্রামের
প্রায় ২০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ তা প্রতিকারে কারও কোনো উদ্যোগ
নেই! মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শহীদনগর সোনালি আঁশ
ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই কারখানার রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত পানি পাশের ফসলি
জমির যেসব জায়গায় পড়েছে, সেসব জায়গায় আবাদ করা বোরো ধান ও টমেটো নষ্ট হয়ে
গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। শুধু তা-ই নয়, খেতসংলগ্ন
পুকুর ও খালে রাসায়নিক মেশানো পানি পড়ে মাছও মরে গেছে। কারখানা থেকে নিঃসৃত
গ্যাসের গন্ধে গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শুধু এ বছরই নয়, এর
আগের তিন বছরও এভাবে কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও এ ব্যাপারে তাদের
কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে না। কারখানার
পাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য কারখানা
কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হলেও এ সমস্যার সমাধান মিলছে না। প্রশ্ন
হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন বলে আদৌ কি কিছু আছে এখানে? বিঘার পর বিঘা জমির ফসল
নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও তাদের কেন টনক নড়ে না।
স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিলে
এত দিনে নিশ্চয়ই এর একটা বিহিত হতো। পরিবেশ অধিদপ্তরই বা কী করছে? এভাবে
কারখানার বর্জ্যে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অথচ তারা কী করে নির্বিকার বসে
আছে? আর ফসলি জমির পাশে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে কীভাবে? পরিবেশ সংরক্ষণ আইন
অনুযায়ী, ফসলি জমির পাশে শিল্পকারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ। শহীদনগর সোনালি আঁশ
ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছিল কি
না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। কেননা, কারখানাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ
ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এখন এই কারখানা কর্তৃপক্ষকে হয়
তাদের রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে, আর নয়তো তাদের
ফসলি জমির পাশ থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। এর কোনোটা না করলে তাদের
বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মো. আলামিন জানিয়েছেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি শিগগিরই পরিবেশ
অধিদপ্তরে চিঠি পাঠাবেন। আমরা আশা করি, পরিবেশ অধিদপ্তর এ আবেদনে সাড়া দিয়ে
দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
No comments