পাইলস রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি
পাইলস
রোগটি আমাদের নিকট অর্শ বা অরিশ হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়
আমরা বলি হেমোরয়েডস। এ রোগে মলদ্বার থেকে মাঝে মধ্যে রক্ত যায়। কখনো বেশি
কখনো কম। মলত্যাগের সময় অনেকের মলদ্বার ফুলে ওঠে আবার কারো কারো মাংশপিন্ড
ঝুলে পড়ে যা আবার আপনা আপনি ভেতরে ঢুকে যায় অথবা চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে এর চিকিৎসা ও প্রতিকার কি? এ রোগীরা অনেক সময় প্রতারণার শিকার
হয়ে আসছেন।
হাতুড়ে চিকিৎসক আছেন যারা বিনা অপারেশনে চিকিৎসার নামে জনগণকে
বিভ্রান্ত করছেন। তারা অনেকে মলদ্বারে বিষাক্ত কেমিকেল ইনজেকশন দিচ্ছেন
যাতে মলদ্বারে মারাত্মক ব্যথা হয় এবং মলদ্বারের আশেপাশে পচন ধরে এবং এ জন্য
রোগী অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করেন। পরিনামে কারো কারো মলদ্বার সরু হয়
এবং বন্ধ হয়ে যায়। তখন পেটে মলত্যাগের বিকল্প পথ করে দিয়ে ব্যাগ লাগিয়ে
দিতে হয়। আবার কোনো কোনো হাতুড়ে চিকিৎসক বিষাক্ত কেমিকেল পাউডার দেন যা
মলদ্বারে লাগালেও মলদ্বার পঁচে ঘা হয়ে যায় এবং রোগীর একই পরিণতি হয়। রোগীরা
যখন বিনা অপারেশনের কথা শোনেন তখন এ জাতীয় চিকিৎসার জন্য প্রলুব্ধ হন।
লেজার সার্জারির মাধ্যমেও ধনন্তরী পাইলস চিকিৎসা হচ্ছে। বিষয়টি মোটেই সত্য
নয়। কারণ, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে লেজারের মাধ্যমে পাইলস চিকিৎসায়
কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নেই। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের মাধ্যমে প্রায়
১০০% রোগীর মলদ্বারে কোনো রূপ কাটাছেড়া ছাড়া চিকিৎসা করা সম্ভব। প্রচলিত
অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি মাংশ পিন্ড কাটতে হয়। যা আজকাল আমরা শুধু তাদের
জন্যই করি যারা রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত নয় এবং লংগো অপারেশন এর যন্ত্র
কিনতে অক্ষম। লেজার দিয়ে পাইলস অপারেশন প্রচলিত অপারেশনের মতই। পার্থক্য
শুধু এতটুকু যে এক্ষেত্রে লেজার বিম দিয়ে কাটা হয় এবং প্রচলিত অপারেশনে
সার্জিক্যাল নাইফ দিয়ে কাটা হয়। প্রচলিত অপারেশনের ন্যায় লেজার অপারেশনেও
তিনটি ক্ষত স্থান হবে। লেজার অপারেশনের পর সাধারণত অপারেশনের মতই ব্যথা হয়,
ঘা শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে। এবং প্রচলিত অপারেশনের মতই একই ধরনের জটিলতা
দেখা দিতে পারে। পাইলস চিকিৎসার জন্য বহু ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন
ইনজেকশন, রিংলাইগেশন, ইলেকট্রোকোয়াগুলেশন, আল্ট্রয়েড, ক্রায়োথেরাপি,
ইনফ্রারেড ফটোকোয়াগুলেশন, এনাল ডাইলেটেশন, লেজার থেরাপি, প্রচলিত অপারেশন
এবং লংগো অপারেশন। সবধরনের পদ্ধতির মেরিট এবং ডিমেরিট বিবেচনা করলে এবং
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সার্জনদের প্র্যাকটিস বিবেচনা করলে তিনটি পদ্ধতি বেশি
প্রচলিত আর তা হচ্ছে রিংলাইগেশন, লংগো অপারেশন ও প্রচলিত অপারেশন।
রিংলাইগেশন ও লংগো অপারেশনে মলদ্বারে কোনরূপ কাটাছেড়া ছাড়াই ৯০-৯৫% রোগীর
পাইলস রোগের সমাধান সম্ভব।
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
No comments