জঙ্গিদের জামিন
জঙ্গি
তৎপরতার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় আসামির জামিনের ক্ষেত্রে
রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি স্বীকার করেছেন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল। আশা করব,
তিনি এ বিষয়ে অবিলম্বে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। দায়ী ব্যক্তিদের
অপসারণের এখতিয়ার তাঁর না থাকতে পারে, কিন্তু তিনি দরকারি ব্যবস্থা নিতে
সরকারকে নির্দিষ্টভাবে পরামর্শ দিতে পারেন। অ্যাটর্নি জেনারেল যে তথ্য
দিয়েছেন, তার অর্ধেক সত্য হলে তাঁর নেতৃত্বাধীন অ্যাটর্নি জেনারেলের
দপ্তরের ভূমিকা জোরালোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তাঁর দপ্তরের শতকরা ৭০
ভাগ আইন কর্মকর্তা অপসারণযোগ্য কি না, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়েরও উচিত হবে
অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চাওয়া। এর আগে তিনি নবনিযুক্ত প্রধান
বিচারপতির অভিষেক অনুষ্ঠানে আদালত ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নানা অনিয়ম ও
দুর্নীতির বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম
কোর্টের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আমরা
আশা করেছিলাম, তাঁর ওই বক্তব্যের পরপরই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে একটি শুদ্ধি
অভিযান শুরু করার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা হবে। আমরা যখন সে রকমের একটি
ঘোষণার অপেক্ষায়, তখন জঙ্গি অর্থায়ন ও তৎপরতার একটি মামলায় জামিনের
শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে
গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের তৎপরতার বিষয়ে বেশ কড়া
মনোভাব প্রকাশ করেছেন। শুদ্ধি অভিযান ঘর থেকেই শুরু করার যে মনোভাব আদালত
ব্যক্ত করেছেন, আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা বিবেচনায় নেবেন। অ্যাটর্নি
জেনারেল স্বীকার করেছেন, ‘আমাদের গাফিলতির জন্য (আসামিরা) বেরিয়ে গেছে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু বিষয়টি শুধু জামিন–সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ‘৭০ শতাংশ’
আইন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হওয়ার উপযোগী থাকা নির্দেশ করে যে, দেশের
অ্যাটর্নি সার্ভিসে রীতিমতো ধস নেমেছে। এই অবস্থা একটি গভীর হতাশাব্যঞ্জক
পরিস্থিতির ইঙ্গিতবহ।
২০০৮ সালে অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের একটি উদ্যোগ নেওয়া
হলেও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে সেই অধ্যাদেশ উপযুক্ত
সংশোধনীসহ আইনে পরিণত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর
স্বাধীনতার পর থেকেই কোনো ধরনের নির্দিষ্ট আইন ও বিধির আওতায় পরিচালিত
হয়নি। ওই অধ্যাদেশ দিয়ে শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। কার্যত আইন
মন্ত্রণালয় সর্বতোভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ
দিয়ে চলছে। এ জন্য কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণের কোনো বিধান করা হয়নি, যা
অবিলম্বে করা উচিত। জেলা পর্যায়ে পিপি ও এপিপি নিয়োগে জেলা ও দায়রা জজদের
একটি সুপারিশের রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু সহকারী ও ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেলদের নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগের
বিচারপতিদের তরফে কোনো সুপারিশের প্রয়োজনীয়তা কখনো অনুভব করা হয়নি। অযোগ্য ও
অদক্ষ আইন কর্মকর্তাদের সংখ্যাধিক্যের অভিযোগ সত্যি হলে তার দায়দায়িত্ব
আইন মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলও দায়মুক্ত হতে পারেন
না। প্রকাশ্য আদালতে বিষয়টি স্বীকার করার পর এ ব্যাপারে তিনি কী উদ্যোগ
নেন, তা আমরা দেখতে চাই। সরকারি আইন কর্মকর্তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস এমন
একটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণের দাবি রাখে। আমরা
আইন কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা এবং একটি আচরণবিধি আশু প্রয়োজন বলে মনে
করি।
No comments