ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
পরামর্শকের
বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চার বছর ধরে আটকে আছে ঋণ। ফলে ডিজিটাল
বাংলাদেশের জন্য হাতে নেয়া ‘ইনস্টলমেন্ট অব ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড
নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পটির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে
পড়েছে। এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। কোনো পক্ষই কিছু বলতে পারছে
না। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা
দিয়েছে। অথচ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ঋণ চুক্তি, এমনকি জাতীয় অর্থনৈতিক
পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এ
প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালক শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের
ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো তথ্যই দিতে পারব না।
আইন অনুযায়ী উপর মহলের অনুমতি নিয়ে এলে তথ্য দেয়া যাবে। সূত্র জানায়, কম
খরচে সবাইকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা দিতে সরকার ২০১৩ সালে প্রকল্পটি
গ্রহণের উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী ওই বছরের ২ আগস্ট কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক
এবং কোরিয়ান সহযোগিতা সংস্থা ইডিসিএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই
চুক্তির আওতায় ইডিসিএফ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা
৬১৬ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শকও নিয়োগ দেয়
কোরিয়া। নিয়ম অনুযায়ী এ প্রকল্পে কোরিয়ার ঠিকাদারদের মধ্যেই দরপত্র হওয়ার
কথা। সে অনুযায়ী পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দাখিলও করে কোরিয়ার
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য কয়েকটি ঠিকাদার
প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকা বা শর্ট লিস্টও করা হয়। এদিকে একনেকে
অনুমোদনও পায় প্রকল্পটি। অন্য সব কার্যক্রমও এগিয়ে চলে। কিন্তু এরই মধ্যে
সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির অভিযোগ তোলে।
তাদের মতে, নিয়োগ করা পরামর্শক কোনো একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ফাঁস
করে দিয়েছে। ফলে সেই প্রতিষ্ঠানটিই সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পাবে। এ
অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) পক্ষ
থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই পর্যায় পর্যন্ত থেমে আছে সবকিছু।
২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল বিটিসিএলের। ৩ জানুয়ারি
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বিভিন্ন প্রকল্পের রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
হয়। এতে এ প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালকের কাছে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া
হয়। তিনি জানান, এখনও সুরাহা হয়নি। রিভিউ মিটিংয়ে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা এ
তথ্য জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম
যুগান্তরকে বলেন, বিটিসিএলের প্রকল্পটি নিয়ে বেশ ঝামেলায় রয়েছি। দীর্ঘদিন
থেকে অভিযোগের বিষয়টি মীমাংসা হচ্ছে না। এভাবে ঋণ ঝুলে থাকায় শেষ পর্যন্ত
কি হবে বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা ইআরডির পক্ষ থেকে চেষ্টা করব বিষয়টির যাতে
দ্রুত নিষ্পত্তি টানা যায়। কম খরচে সবাইকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা
দিতে সরকার ৯৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি হাতে নেয়। এতে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোর পরিধি বাড়বে এবং সাধারণ মানুষ অল্প খরচে
উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের
মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক দিয়ে সংযোগ হওয়ায় ইন্টারনেটের গতি
বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার দুটি স্থানে কোর
নেটওয়ার্ক স্থাপন করার কথা। এ ছাড়া ৭টি বিভাগীয় শহরসহ সব জেলা ও সব উপজেলা
শহরে ৬৭০টি বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশন বা বিটিএস নির্মাণ করার কথা ছিল।
পাশাপাশি ৩০০ কিমি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কও স্থাপিত হবে এবং
বিটিএসগুলো ওই অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে।
ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগের সুরাহা না হওয়া
পর্যন্ত ইডিসিএফ ঋণ ছাড় করবে না। অন্যদিকে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ
করা হয়েছিল তা পূরণ না হওয়ায় প্রকল্পটির গুরুত্বও হারিয়ে যাচ্ছে।
No comments