ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : তদন্ত শেষ করে অনিশ্চয়তা দূর করুন
সম্প্রতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ওপর, বিশেষত
ছাত্রীদের ওপর সরকারপন্থী ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর আক্রমণ ও নিপীড়নের
অভিযোগকে কেন্দ্র করে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তা এখন আর নেই। কিন্তু
সাতটি সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে
আন্দোলন থেকে শুরু করে একের পর এক যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যেসব অভিযোগ ও
পাল্টা অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুরাহা হয়নি। ঘটনাগুলো তদন্ত করার উদ্দেশ্যে
যে তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটাই এখন পর্যন্ত তদন্ত
শেষ করেনি। ফলে ক্যাম্পাসে একধরনের চাপা অস্বস্তি ও উত্তেজনা রয়েই গেছে।
ছাত্রীদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করার লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত
কমিটি। অন্যদিকে এই অভিযোগ যাঁরা তুলেছেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির
দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ করেছিলেন, সেই
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা ভাঙচুরের অভিযোগ তদন্ত করার লক্ষ্যে
দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগকারী
শিক্ষার্থীরা দাবি করেছিলেন, নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করার কমিটিতে তাঁদের
প্রতিনিধি যেন রাখা হয়। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটিতে তাঁদের কোনো প্রতিনিধি
রাখা হয়নি। অন্যদিকে তাঁরা আশঙ্কা করছেন, অন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করার
উদ্দেশ্য, তাঁদের অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া কিংবা হয়রানি করা। এভাবে
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের বিপরীতে নিপীড়নবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের
একটা মুখোমুখি বিরোধাত্মক পরিস্থিতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের
সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওই অংশের সম্পর্কও বিরোধাত্মক রূপ নিয়েছে। এই
পরিস্থিতিতে তদন্ত কমিটিগুলোর নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু
তদন্ত অবশ্যই নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। তদন্ত কমিটিগুলোর কাজ শেষ করে প্রতিবেদন
জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের তাগিদের অভাব
রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতীতেও দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা
হয়, কিন্তু তাদের তদন্ত শেষ হয় না, কিংবা তদন্ত শেষ হলেও প্রতিবেদন জমা পড়ে
না।
ফলে ঘটনাগুলো অনিষ্পন্ন থেকেই চাপা পড়ে যায়। একই ধরনের অপ্রীতিকর
ঘটনার পুনরাবৃত্তি সম্ভবত এ কারণেও ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি তদন্ত
কমিটি গঠনের পর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের তদন্ত কবে শেষ হবে,
কবে তদন্ত প্রতিবেদনগুলো জমা পড়বে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানানো হয়নি।
একটি তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিনিধি কথা বলে
জেনেছেন, তাঁরা খুব শিগগির কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পক্ষে। আমাদের
বিবেচনায়, বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখা উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, কারা কী
করেছেন, কার কী ভুলত্রুটি বা অন্যায় ছিল ইত্যাদি বিষয় স্বচ্ছতার সঙ্গে
খতিয়ে তিনটি তদন্ত কমিটিরই কাজ শেষ করে প্রতিবেদন পেশ করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত অভিভাবকসুলভ। ছাত্রলীগের
নেতা-কর্মী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সবাই তাদের সন্তানের মতো। প্রক্টরের
কার্যালয়ের ফটক ভাঙচুর করা ও উপাচার্যকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার
অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সহিংস আচরণের অভিযোগও
আছে। সব অভিযোগের সুরাহা এমনভাবে হওয়া উচিত, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত না হয়। সে জন্য উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘সহযোগী
বাহিনী’ বিবেচনা করার দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর
অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে।
No comments