হারিয়ে যাচ্ছে কাটারিভোগ ধান by পিয়াস সরকার
দিনাজপুরের
ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধান চাষ কমে যাচ্ছে দিন দিন। এর মূল্য সাধারণ ধানের
মতো হওয়ায় অনেক কৃষক এ বিশেষ জাতের ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কখন,
কীভাবে দিনাজপুর জেলায় কাটারিভোগ ধানের চাষ শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা
না গেলেও বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায়, কাটারিভোগ দিনাজপুরের আদি ধান। আর্যদের
আগমনের আগে থেকেই এ অঞ্চলে এ ধান উৎপন্ন হতো। কাটারিভোগ চাল মাথার দিকে
ছুরির মতো একটুখানি চোখা ও বাঁকা। যেমন সুগন্ধিযুক্ত তেমনি খেতেও সুস্বাদু।
এ ধানের চিঁড়া হয় হালকা ধবধবে সাদা ও এতে আছে মিষ্টি সুগন্ধ। কাটারিভোগ ধানের আতপ চালের পোলাও জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
আদিকাল থেকে কাটারিভোগ অভিজাত শ্রেণির আচার অনুষ্ঠানে স্থান পায়। আজও দিনাজপুরের কাটারিভোগ সুগন্ধি চাল দেশি-বিদেশি অতিথি আপ্যায়নে সুনাম বজায় রেখেছে। এ চালের পোলাও ছাড়া বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েশ ও ফিরনি বেশ চমৎকার ও সুস্বাদু-যা জিভে জল আনে। দাম বেড়ে গেলেও এখনও দিনাজপুরের কৃষকরা লক্ষ্মী-নারায়ণ পূজায় এবং মসজিদে মিলাদে এই চাল ব্যবহার করে থাকে।
আর্যদের আগমনের আগে থেকেই দিনাজপুরে কাটারিভোগ ধানের চাষ হয়ে আসছে। কথিত আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণ নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে। রাজা প্রাণ নাথ সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে হীরা, পান্না, স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কাটারিভোগ চাল সঙ্গে নিয়ে যান। সম্রাট হীরা, পান্না উপঢৌকন হিসেবে পেয়ে যতটা না খুশি হয়েছিলেন, তার থেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন কাটারিভোগ চাল পেয়ে। এই খুশিতে সম্রাট প্রাণ নাথকে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯১২ সাল থেকে এ জাতের ধান দিনাজপুর জেলায় চাষাবাদ হচ্ছে। দিনাজপুর অঞ্চলের বিশেষ জাতের এই ধান অন্য জেলায় চাষ হলেও সুগন্ধ ও স্বাদের তারতম্য হয়। এ কারণে এটি শুধু এই জেলায় ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে পরিচিতি আছে যুগ যুগ ধরে।
১৯৬৮ সালের দিনাজপুরের বন্যা এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কাটারিভোগ ধানের বীজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর পরই ফিলিপাইন থেকে আগত ধান গবেষক মি. মালাপাতি এ ধানের উপর গবেষণা করে কাটারি ভোগের সঙ্গে ফিলিপাইনে সরু ধানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন জাতের ফিলিপাইন বিআর ১১ উদ্ভাবন করেন। এ ধানের জন্যও উঁচু জমির প্রয়োজন। রাসায়নিক সারও দরকার হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধানের মত সুগন্ধ থাকে না।
আবার দিনাজপুরের সব এলাকাতেও কাটারিভোগ ধান চাষাবাদ হয় না। দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাশিলাহাট, ছোট বাউল, বড় বাউল, করিমুল্যাপুর, খানপুর, চিরিরবন্দর উপজেলায় কাউগাঁ, বিষ্টপুর, তালপুকুর মুকুন্দপুর, দুর্গাডাঙ্গা ও ভিয়াইল, পশ্চিম বাউল এবং কাহারোল উপজেলার দু্থ’-একটি উঁচু জায়গা এ বিশেষ জাতের ধান চাষ হয়। উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি এ ধান আবাদের উপযোগী। ফাশিলা হাট ও বাউল এলাকার কৃষকরা জানান, কাটারিভোগ ধান চাষের জন্য নির্ভেজাল গোবর সার প্রয়োজন হয়। তবে গোবর সার অপ্রতুল হয়ে পড়ায় বিপাকে রয়েছেন চাষিরা।
কৃষকরা আরও জানান, কাটারিভোগ ক্ষেতে গোবর সার ফেললেও পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের রাসায়নিক সারের প্রভাবে ঘ্রাণ ও গুণগত মান বজায় রাখা যায় না। কাটারিভোগ অন্যান্য ধানের তুলনায় কম হয় আবার কাটারিভোগ চাষে অনেক বেশি পরিশ্রমও হয়। বীজ বাছাই থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত অত্যাধিক পরিচর্যা করতে হয়। পরিচর্যা করে ঘরে ফসল তুললেও দাম মেলে সাধারণ ধানের মতোই যার ফলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ২০১৪-১৫ সালে ৫৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়। ধান উৎপাদন হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮৯ টন। তার মধ্যে কাটারিভোগ আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ২৭৮ টন। ২০১৫-১৬ সালে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়লেও কমেছে কাটারিভোগ ধানের আবাদ। সুগন্ধিচাল ৫৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৪ টন। তার মধ্যে কাটারিভোগ ধান আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবছর ১ হাজার ২৫৭ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। কিন্তু কাটারিভোগ ধানের আবাদ আরো কমেছে। মাত্র ২৫৪ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছে। জমির পরিমাণের সঙ্গে সুগন্ধি ধানের উৎপাদন অনুপাত ১ : ৫।
কাহারোল উপজেলার চাষি আবদুল হান্নান, বাসেদ আলী ও রায়হানুল ইসলাম জানান, কাটারিভোগ ধান প্রতি একরে ২৫ থেকে ৩০ মণ আবার সাধারণ ধান উৎপাদন হয় ৩২ থেকে ৩৫ মণ। উৎপাদন ব্যয় বেশি এবং লাভ না হওয়ায় তারা এখন আর এ ধানের চাষ করছেন না। তবে সরকার এ চাল রপ্তানির উদ্যোগ নিলে ভালো বাজারমূল্য পাওয়া যাবে। তখন অনেক চাষি আবারো এ ধান উৎপাদনে এগিয়ে আসবেন বলে জানান তারা। চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক সাব্বির জানান, সুগন্ধি ধান চাষে আগ্রহ হারানোর আরও একটি কারণ হলো, গুণগত মানের বীজ সংকট। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের ঘরে তৈরি করা বীজ প্রক্রিয়ার জন্য আগের মতো সুগন্ধি জাতের ধানচাষে আশানুরূপ উৎপাদন হয় না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহ করা হলে সুগন্ধি জাতের ধানচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, এখন জেলায় যেসব সুগন্ধি ধানের চাষ হচ্ছে, তারমধ্যে বাদশাভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, সম্পা কাটারি, কালোজিরা, ব্রি ধান-৩৪, জিরা কাটারি, কালো জিরা অন্যতম। তবে এখন ব্রি-৩৪ ধান হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায়। সে তুলনায় কাটারিভোগের উৎপাদন হার কম, ব্যয় বেশি। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ১.৮৭৯ টন।
বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে সুগন্ধি চালের উৎপাদনও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তবে স্থানীয় জাতের ধানের মতো সুগন্ধিযুক্ত হয় না। শুধু জৈব সারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হলে সুগন্ধি চাল তার নিজস্ব সুঘ্রাণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
দিনাজপুরের অনেক ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাটারিভোগ চাল বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল সাড়া পেয়েছেন। ১৯৮০ সালে টিসিবি কাটারিভোগ চাল রপ্তানির উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাহাত চালকল, এর মালিক মোসাদ্দেক রহমান জানান, স্থানীয় জাতের সুগন্ধি চাল তথা কাটারিভোগ ধান এখন বিলুপ্তির পথে। দিনাজপুরের ঐতিহ্য রক্ষা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে কাটারিভোগ চাল ও চিঁড়া রপ্তানি করতে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া উচিত।
এ ধানের চিঁড়া হয় হালকা ধবধবে সাদা ও এতে আছে মিষ্টি সুগন্ধ। কাটারিভোগ ধানের আতপ চালের পোলাও জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
আদিকাল থেকে কাটারিভোগ অভিজাত শ্রেণির আচার অনুষ্ঠানে স্থান পায়। আজও দিনাজপুরের কাটারিভোগ সুগন্ধি চাল দেশি-বিদেশি অতিথি আপ্যায়নে সুনাম বজায় রেখেছে। এ চালের পোলাও ছাড়া বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েশ ও ফিরনি বেশ চমৎকার ও সুস্বাদু-যা জিভে জল আনে। দাম বেড়ে গেলেও এখনও দিনাজপুরের কৃষকরা লক্ষ্মী-নারায়ণ পূজায় এবং মসজিদে মিলাদে এই চাল ব্যবহার করে থাকে।
আর্যদের আগমনের আগে থেকেই দিনাজপুরে কাটারিভোগ ধানের চাষ হয়ে আসছে। কথিত আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণ নাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে। রাজা প্রাণ নাথ সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে হীরা, পান্না, স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কাটারিভোগ চাল সঙ্গে নিয়ে যান। সম্রাট হীরা, পান্না উপঢৌকন হিসেবে পেয়ে যতটা না খুশি হয়েছিলেন, তার থেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন কাটারিভোগ চাল পেয়ে। এই খুশিতে সম্রাট প্রাণ নাথকে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯১২ সাল থেকে এ জাতের ধান দিনাজপুর জেলায় চাষাবাদ হচ্ছে। দিনাজপুর অঞ্চলের বিশেষ জাতের এই ধান অন্য জেলায় চাষ হলেও সুগন্ধ ও স্বাদের তারতম্য হয়। এ কারণে এটি শুধু এই জেলায় ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে পরিচিতি আছে যুগ যুগ ধরে।
১৯৬৮ সালের দিনাজপুরের বন্যা এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কাটারিভোগ ধানের বীজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর পরই ফিলিপাইন থেকে আগত ধান গবেষক মি. মালাপাতি এ ধানের উপর গবেষণা করে কাটারি ভোগের সঙ্গে ফিলিপাইনে সরু ধানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন জাতের ফিলিপাইন বিআর ১১ উদ্ভাবন করেন। এ ধানের জন্যও উঁচু জমির প্রয়োজন। রাসায়নিক সারও দরকার হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধানের মত সুগন্ধ থাকে না।
আবার দিনাজপুরের সব এলাকাতেও কাটারিভোগ ধান চাষাবাদ হয় না। দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাশিলাহাট, ছোট বাউল, বড় বাউল, করিমুল্যাপুর, খানপুর, চিরিরবন্দর উপজেলায় কাউগাঁ, বিষ্টপুর, তালপুকুর মুকুন্দপুর, দুর্গাডাঙ্গা ও ভিয়াইল, পশ্চিম বাউল এবং কাহারোল উপজেলার দু্থ’-একটি উঁচু জায়গা এ বিশেষ জাতের ধান চাষ হয়। উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি এ ধান আবাদের উপযোগী। ফাশিলা হাট ও বাউল এলাকার কৃষকরা জানান, কাটারিভোগ ধান চাষের জন্য নির্ভেজাল গোবর সার প্রয়োজন হয়। তবে গোবর সার অপ্রতুল হয়ে পড়ায় বিপাকে রয়েছেন চাষিরা।
কৃষকরা আরও জানান, কাটারিভোগ ক্ষেতে গোবর সার ফেললেও পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের রাসায়নিক সারের প্রভাবে ঘ্রাণ ও গুণগত মান বজায় রাখা যায় না। কাটারিভোগ অন্যান্য ধানের তুলনায় কম হয় আবার কাটারিভোগ চাষে অনেক বেশি পরিশ্রমও হয়। বীজ বাছাই থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত অত্যাধিক পরিচর্যা করতে হয়। পরিচর্যা করে ঘরে ফসল তুললেও দাম মেলে সাধারণ ধানের মতোই যার ফলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ২০১৪-১৫ সালে ৫৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়। ধান উৎপাদন হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮৯ টন। তার মধ্যে কাটারিভোগ আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ২৭৮ টন। ২০১৫-১৬ সালে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়লেও কমেছে কাটারিভোগ ধানের আবাদ। সুগন্ধিচাল ৫৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৪ টন। তার মধ্যে কাটারিভোগ ধান আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবছর ১ হাজার ২৫৭ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। কিন্তু কাটারিভোগ ধানের আবাদ আরো কমেছে। মাত্র ২৫৪ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছে। জমির পরিমাণের সঙ্গে সুগন্ধি ধানের উৎপাদন অনুপাত ১ : ৫।
কাহারোল উপজেলার চাষি আবদুল হান্নান, বাসেদ আলী ও রায়হানুল ইসলাম জানান, কাটারিভোগ ধান প্রতি একরে ২৫ থেকে ৩০ মণ আবার সাধারণ ধান উৎপাদন হয় ৩২ থেকে ৩৫ মণ। উৎপাদন ব্যয় বেশি এবং লাভ না হওয়ায় তারা এখন আর এ ধানের চাষ করছেন না। তবে সরকার এ চাল রপ্তানির উদ্যোগ নিলে ভালো বাজারমূল্য পাওয়া যাবে। তখন অনেক চাষি আবারো এ ধান উৎপাদনে এগিয়ে আসবেন বলে জানান তারা। চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক সাব্বির জানান, সুগন্ধি ধান চাষে আগ্রহ হারানোর আরও একটি কারণ হলো, গুণগত মানের বীজ সংকট। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের ঘরে তৈরি করা বীজ প্রক্রিয়ার জন্য আগের মতো সুগন্ধি জাতের ধানচাষে আশানুরূপ উৎপাদন হয় না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহ করা হলে সুগন্ধি জাতের ধানচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, এখন জেলায় যেসব সুগন্ধি ধানের চাষ হচ্ছে, তারমধ্যে বাদশাভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, সম্পা কাটারি, কালোজিরা, ব্রি ধান-৩৪, জিরা কাটারি, কালো জিরা অন্যতম। তবে এখন ব্রি-৩৪ ধান হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায়। সে তুলনায় কাটারিভোগের উৎপাদন হার কম, ব্যয় বেশি। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ১.৮৭৯ টন।
বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে সুগন্ধি চালের উৎপাদনও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তবে স্থানীয় জাতের ধানের মতো সুগন্ধিযুক্ত হয় না। শুধু জৈব সারের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হলে সুগন্ধি চাল তার নিজস্ব সুঘ্রাণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
দিনাজপুরের অনেক ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাটারিভোগ চাল বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল সাড়া পেয়েছেন। ১৯৮০ সালে টিসিবি কাটারিভোগ চাল রপ্তানির উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাহাত চালকল, এর মালিক মোসাদ্দেক রহমান জানান, স্থানীয় জাতের সুগন্ধি চাল তথা কাটারিভোগ ধান এখন বিলুপ্তির পথে। দিনাজপুরের ঐতিহ্য রক্ষা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে কাটারিভোগ চাল ও চিঁড়া রপ্তানি করতে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া উচিত।
No comments