বরগুনায় আলু চাষীদের মাথায় হাত
চলতি
মাসের প্রথম দিকে টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে পাথরঘাটা উপজেলার প্রায় দেড়
হাজার একর জমির আলুর ফলন অংকুরেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেসরকারি
সংস্থা থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় আলু চাষীদের। এ অবস্থায় এমন
বিপর্যয়ে দিশেহারা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সরকারি সহায়তা না পেলে এ লোকসান
কাটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা। দক্ষিণাঞ্চলে আলু উৎপাদনের
জন্য বিখ্যাত বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কুপদোন, রুপদোন, জালিয়াঘাটা,
কাটাখালী, কালমেঘা, সিংড়াবুনিয়া, বাইনচটকীসহ বিভিন্ন এলাকা। প্রতিবছর এই
অঞ্চলে প্রায় ৪৫-৫০ কোটি টাকার আলুর ফলন হয়। বরগুনা ও আশপাশের জেলার
বিভিন্ন এলাকায় সিংহভাগ আলুর জোগান দেয়া হয় এই এলাকা থেকে। চলতি মৌসুমেও এই
অঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার একর জমি আলু চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
একরপ্রতি চাষাবাদ, বীজ, সার ও কীটনাশকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। ইতিমধ্যে
জমির ৮৫ ভাগে আলুবীজ রোপণ করা হয়েছে। হঠাৎ করেই গত ৭ ডিসেম্বর থেকে
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে রোপণ করা বীজতলায় পানি জমে বেশিরভাগ আলুবীজ
নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অপরদিকে আবাদের বাকি ১৫ ভাগ জমি রোপণ অনুপযোগী
হয়ে পড়েছে। অংকুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে ঘরে রাখা আলুবীজ।
ফলে গোটা আলুর
আবাদেই এখন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আলু চাষীদের প্রায় সবাই স্থানীয় বেসরকারি
সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন। আলুর এমন বিপর্যয়ে লাভ তো দূরের
কথা ঋণ পরিশোধে ভিটেমাটিছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এমনটাই দাবি
কৃষকদের। রুপদোন এলাকার রমেশ জানান, প্রতিবছরের মতো এবার তিনি সাড়ে চার একর
জমি আলু চাষের জন্য তৈরি করেছিলেন। প্রায় ৮৫ ভাগ জমিতে আলুবীজ বপন
করেছিলেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় কয়েকদিনের বর্ষণে সব আলুবীজ নষ্ট হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা মনি মণ্ডল বলেন, কয়েকদিনের ভারিবর্ষণে আলু ক্ষেতে পানি জমে
ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। জানি না কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে। ঋণের বোঝা
ভারি হয়ে উঠছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার বিটকপি, লালশাক, পাতাকপি,
ধোনিয়া, পেঁয়াজসহ শীতকালীন সবজি ব্যাপক হারে ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে
বছরে শুধু নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোটি কোটি টাকার আলু উৎপাদন করে আসছেন
কৃষকরা। সরকারি কোনো সহায়তা নেই, নেই আলাদা মৌসুমি ঋণ। এ অবস্থায় সরকার এ
কৃষকদের ভর্তুকি অথবা সহায়তা না দিলে এ এলাকার আলু চাষীদের ঘুরে দাঁড়ানোর
কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন আলু চাষী সমবায় সমিতির নেতারা। শুধু কৃষকই নন,
আলু ব্যবসার জড়িতদেরও এখন মাথায় হাত। গুদামে সংরক্ষিত লাখ লাখ টাকার বীজ
যেমন বিক্রি করতে পারছেন না, তেমনি বীজ, সার ও কীটনাশক বকেয়া বিক্রি করেও
বিপাকে পড়েছেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক সাইনুর আজম খান
যুগান্তরকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় আলু চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জানি না
কৃষকরা কতটুকু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
No comments